Homeএখন খবরআইআইটির খড়গপুরের হাসপাতালে একই ছাদের তলায় ভেলোর, অ্যাপোলো, হায়দ্রাবাদ চাইছে হুগলি থেকে...

আইআইটির খড়গপুরের হাসপাতালে একই ছাদের তলায় ভেলোর, অ্যাপোলো, হায়দ্রাবাদ চাইছে হুগলি থেকে মুর্শিদাবাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা: কেউ আসছেন চেন্নাই থেকে তো কেউ ব্যাঙ্গালুরু। কারও হার্টের সমস্যা কারও আবার প্যানক্রিয়াটিস। হাই ব্লাড সুগার, কিডনির সমস্যা কী নেই? কেউ মুর্শিদাবাদ, কেউ বীরভূম কেউ আবার বর্ধমান, হুগলি। অধিকাংশই স্বচ্ছল, বিত্তবান পরিবার। লকডাউনের বাজারেও চারগুন গাড়ি ভাড়া দিয়ে সুদুর দক্ষিনের রাজ্য গুলি থেকে ফিরছেন। গাড়ির ভাড়া ৫০ হাজার অবধি রয়েছে। প্রথম দফার লকডাউনের পরেও যখন দ্বিতীয় দফায় লকডাউন বাড়ল তখন উপায়ান্তর না দেখে বেরিয়েছেন, ভাড়া বাড়ি , হোটেল ভাড়ার জন্য তাগাদা দেয়নি ঠিকই কিন্তু ভাড়া গুনতে গুনতে যা চিকিৎসার খরচ তার দ্বিগুণ পেরিয়ে গেছে, ভাঁড়ারে টান পড়েছে তাই, স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বেরিয়েছেন সঙ্গে সবারই স্থানীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাগজ, ফিট সর্টিফিকেট। সেই সর্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ দু’তিনটি রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করেছেন তবে আটকে গেছেন বাংলার সীমান্তে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। করোনা প্রটোকল মেনেই স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর বা এসওপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। ঠিক হয়েছে প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষার পরই তাঁদের নিজ নিজ স্থানে যেতে দেওয়া হবে। আর ততদিন থাকতে হবে নিভৃতবাস বা কোয়ারেন্টাইনে।

দক্ষিনের রাজ্যগুলি থেকে ফেরা এই মানুষদের রাখা হচ্ছে আইআইটি খড়গপুরের সদ্য চালু হওয়া ‘ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় ইনস্টিটিউ অফ মেডিক্যাল সায়েন্স এন্ড রিসার্চ’ হাসপাতালে। আর সেই হাসপাতাল দেখে চক্ষু চড়কগাছ পাণ্ডুয়ার সনাতন বৈরাগী থেকে সাগরদীঘির সুফিয়ান আলির। হালে এরা জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি জাতীয় কিছু হাসপাতাল দেখেছেন বটে কিন্তু আইআইটি খড়গপুরের হাসপাতাল দেখার পর যেন মাথা ঘুরে যাওয়ার যোগাড়! এমন হাসপাতাল,তাও আবার এই বাংলায়! সনাতন কিংবা সুফিয়ানদের বক্তব্য এই রকম হাসপাতালে কী ক্যানসারের চিকিৎসা করা যায়না? সনাতন জানান, ‘আমার স্ত্রীর ব্রেস্ট ক্যানসার, আজ তিনবছর ধরে ভেলোরে যাচ্ছি। ভাল আছে এখন। এই চিকিৎসাটা যদি এখানে হত তাহলে শুধু আমি নই কত মানুষ বেঁচে যেত। তিনবছরের প্রথমে তিনমাসে একবার, তারপর ৬ মাসে এবং এখন বছরে একবার ভেলোর যেতেই হয়। শুধু খরচা নয়, ধকলের কথাটাও ভাবুন। শুনেছি আইআইটি বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান। ওরা একটা ভেলোর বানাতে পারেনা দাদা?”
বর্ধমানের কালনার ব্যবসায়ী তরুন সরকার অবশ্য চান আইআইটি খড়গপুর যদি হায়দ্রাবাদের ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউ অফ গ্যাস্ট্রোএণ্টারোলজি’র মত একটা চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করে তাহলে নাকি বাঙালি বেঁচে যায়। বছর ৪৫য়ের এই ব্যবসায়ী জানালেন, ‘ছোট বেলা থেকেই পেটের অসুখে ভুগছি মশাই। কালনা থেকে কলকাতা সরকারি বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে তিরিশ বছর ধরে দৌড়েছি। কেউ কিচ্ছু করতে পারেনি। প্রবলেমটাই ধরতে পারেনি। দেড় বছর আগে একজনের কথায় হায়দ্রাবাদ গেলাম। দেখলাম এশিয়ান ইনস্টিটিউ অফ গ্যাস্ট্রোএণ্টারোলজি’তে। ম্যাজিকের মত কাজ হয়েছে। আইআইটিকে এই ডিপার্টমেন্ট চালু করতে বলুন স্যার, বাঙালি যাকে বলে আপনার দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবে।”
এভাবেই হার্টের অসুখ থেকে বাতের ব্যাথা সারানোর বিভাগ খোলার আবেদন আইআইটির কাছে। আইআইটির কোয়ারেন্টাইনে না গেলে বোঝাই যেতনা যে বাংলা থেকে কত মানুষ এখনও ছোটে দক্ষিনে।
গত নভেম্বরেই গ্রামীন খড়গপুরের বলরামপুর লাগোয়া গেট খুলে দিয়ে আউটডোর চালু করে দিয়েছে আইআইটি। আপাতত ৪০০শয্যা নিয়ে পুরো মাত্রার হাসপাতাল শুরু হয়ে যাচ্ছে এবছরের মধ্যেই। ধাপে ধাপে যা উর্ত্তীন হবে ৭০০শয্যাতে। পঞ্চমতল বিশিষ্ট এই হাসপাতাল পুর্ব ভারতের সেরা হাসপাতাল শুধু নয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনের সঙ্গে এখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ওষুধ তৈরি নিয়ে চলবে গবেষনা আর চলবে চিকিৎসার প্রয়োজনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন সংক্রান্ত গবেষনা। ” শরীরের ভেতরে গিয়ে কাজ করতে সক্ষম এমন ন্যানো পার্টিকেল যা কিনা মাইক্রো সার্জারিতে ব্যবহৃত হয় কিংবা আরও অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি যা শল্য চিকিৎসার কাজকে আরও সহজ করে দেবে এমন নানা বিষয়ে এখানে গবেষনা চলবে। চিকিৎসার দিগন্ত বদলে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।” জানালেন এক চিকিৎসক অধ্যাপক।
প্রতিদিনই ১৫০ থেকে ২০০ জন দক্ষিন থেকে রাজ্যে ফেরা রুগী ও তার লোকজনকে আনা হচ্ছে এখানে। তিন থেকে পাঁচ দিন থাকছেন তাঁরা। তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করছেন জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর।নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে তারপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এরা অবশ্য এখুনি বাড়ি ফিরতে পারবেননা। গিয়ে থাকতে হবে বাড়ির কাছাকাছি আবার কোনও নিভৃত বাসে। ইতিমধ্যে জেলা থেকে রিপোর্ট পৌঁছে যাবে সংশিষ্ট জেলায়। কোভিড নেগেটিভ হলেই বাড়ি ফিরবেন। নচেৎ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
রাজ্যে প্রবেশের মুখে দাঁতনের সোনাকোনিয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর চেক পোষ্ট থেকে এঁদের আনা হচ্ছে। প্রথমে একটু ক্ষুণ্ণ হচ্ছেন বটে তবে খড়গপুর মহকুমা দপ্তরের আতিথেয়তায় আইআইটি হাসপাতালে দু’দিন কাটানোর পর সব ভুলে শুধুই অবাক হয়ে যাওয়া। আর ভাবতে থাকা যদি এখানেই চিকিৎসাটা করা যেত! একজন তো বলেই ফেললেন, মরি কি বাঁচি ঈশ্বর জানেন। কিন্তু হাসপাতাল দেখে জীবন জুড়িয়ে গেল ! আমাদের রাজ্যে এমন হাসপাতাল হয়েছে জানাতেই পারতামনা এখানে না এলে। (করোনা নিয়ম মেনেই প্রতিটি নাম ও পরিচয় বদলানো হয়েছে।)

RELATED ARTICLES

Most Popular