Homeমহানগরখড়গপুরবিকল্প হীন উচ্ছেদ, গৃহযুদ্ধের পথে খড়গপুরের রায়ত ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানদাররা

বিকল্প হীন উচ্ছেদ, গৃহযুদ্ধের পথে খড়গপুরের রায়ত ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানদাররা

নিজস্ব সংবাদদাতা: উন্নয়ন আর গতির স্বার্থে, সৌন্দর্য আর নিরাপদ যাত্রার স্বার্থে ১২০ফুট চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছিল চৌরঙ্গী থেকে ইন্দা। এই সম্প্রসারন শুরু হয়েছিল কোনও বিকল্প ছাড়া, পুনর্বাসন ছাড়াই। যদিও ক্ষমতায় আসার আগে তৃনমূল নেত্রীর ঘোষণা ছিল তাঁরা ক্ষমতায় এলে অবৈধ অথবা বৈধ কোনও উচ্ছেদই হবেনা। সেই সময় বাম আমলে অপারেশন সান সাইন থেকে শ্যমবাজারের হকার উচ্ছেদ সব জায়গায় বিরোধিতা করেছেন, এমনকি তিনি নিজে গেঞ্জি তোয়ালে নিয়ে হকার সেজে প্রতীকী বিক্ষোভ করেছেন। হকাররা দু’হাত তুলে ভোট দিয়েছেন তাঁকে।কিন্তু সময় বদলানোর সাথে বদলে গেছে সব। দুবছর আগেই সল্টলেকের সামনে থেকে রাতারাতি কয়েক হাজার হকার উচ্ছেদ করে জীবিকাহীন করে দিয়েছেন তাঁদের ঠিক যেমনটা করা হয়েছে খড়গপুর ইন্দা থেকে চৌরঙ্গী।

দোকানের সারিতে ঢাকা পড়ে গেছে পেছনের ঘরবাড়ি,দোকান

তিনবছর আগে এই রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু করা হয়েছিল হৃদয়হীন ভাবে, ফুটপাতের দোকানদারদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই, কড়া পুলিশি দাওয়াইকে সামনে রেখে। কিন্তু শেষ অবধি সেই কাজ শেষ হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রসারণের কাজ হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেছে। জানা গেছে পরিকল্পনাধীন অর্থের অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে যে কারনে এখুনি আর নতুন করে কাজ শুরু সম্ভব নয়। এদিকে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে রাজ্যের ব্যাপক আর্থিক ঘাটতি নতুন করে অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে কিনা সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। অন্যদিকে এই লকডাউনে ভয়ঙ্কর ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেই উচ্ছেদ হওয়া মানুষগুলি যাঁদের একটি অংশ ওই সম্প্রসারিত রাস্তার কিনারায় নতুন করে স্থায়ী অথবা অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছেন বা করতে চাইছেন।

এই অবস্থার ফলে নতুন করে সঙ্কটে পড়েছেন সম্প্রসারিত এলাকার বাইরে থাকা রায়ত জায়গার ওপরে থাকা বৈধ ব্যবসায়ী বা বাসিন্দারা। তাদের প্রবেশমুখ অবরুদ্ধ হচ্ছে অথবা তাঁদের ব্যবসার প্ৰয়োজনে আমদানি করা মালপত্র কিংবা নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী রাখতে বাধা পাচ্ছেন। এরফলে উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে তিক্ততার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। পরস্পর গালাগালি এমনকি হাতাহাতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দু’পক্ষই নিজের মত করে সংগঠন তৈরি করেছেন। এক পক্ষ ইন্দা ল্যান্ডলর্ডস ওয়েলফেয়ার আ্যসোশিয়েসন অন্যপক্ষ ফুটপাত ব্যবসায়ী সমিতি।

বাড়ির সামনেই খুঁটি পুঁতে অস্থায়ী কাঠামো বানানো চলছে

ল্যান্ডলর্ডস আ্যসোশিয়েসনের সম্পাদক মনোজ প্রধান জানালেন, ‘আমরা ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমব্যথী। আমরা জানি লকডাউনে সর্বস্ব হারিয়েছেন তাঁরা কিন্তু পাশাপাশি এটাও তো ঠিক যে আমার দোকানের সামনে, বাড়ির সামনে জুড়ে কেউ বসলে আমার অস্থিত্বটাও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এমনিতেই রাস্তা সম্প্রসারণের ফলে জায়গার মূল্য বেড়ে গেছে এই অজুহাতে কর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকগুণ। তারওপর আমাদের সামনে জুড়ে এই দোকানপাট বসে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী আনতে হলে কয়েকগুণ বেশি খরচ পড়ছে। প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা আমাদের বাড়ির বা দোকানের সামনে নামাতে পারছিনা। আমরা চাইনা ওদের রুটিরুজি বন্ধ হোক কিন্তু সরকার ওঁদের বিকল্প পুনর্বাসন দিন যথাযথ জায়গায়। ইন্দাতেই অনেক জায়গা আছে। প্রশাসন সেখানেই তাঁদের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।কিন্তু আমাদের দোকানের সামনে বসলে আমাদের রুটি রুজি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।”

অন্যদিকে ফুটপাত ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে জানানো হয়েছে, রাস্তা সম্প্রসারনের সময় পূর্তদপ্তর, প্রশাসন বলেছিলে তাঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু কেউ কোনোও সহানুভূতি দেখায়নি। কেউ ১০ বছর তো কেউ ২৫বছর ব্যবসা করেছেন। এরা জানান, ‘আমরা তো কারও জায়গা দখল করছিনা। আমরা যেখানে ছিলাম তার থেকে কিছুটা পিছিয়ে দোকান করছি। মানছি কারও কারও অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু আমরা কোথায় যাব। মাসের পর মাস লকডাউন। সমস্ত শেষ হয়ে গেছে আমাদের। এই টুকু না করতে পারলে আমরা তো এবার সপরিবারে মারা পড়ব।”
বুধবার দুই পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন খড়গপুর মহকুমা শাসক বৈভব চৌধুরী। যদিও সমাধান সূত্র বের হয়নি কিছুই। আইনগত ভাবে ফুটপাত দোকানদার সঙ্গে থাকা প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব একথা জানিয়ে তিনি বিষয়টি রায়ত দোকানদারের মানবিকতার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি ক্রমশঃ যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চূড়ান্ত অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে। গোটা বিষয় নিয়ে নিস্পৃহ উদাসীন শাসকদল। সামনে আরেকটা ভোট এগিয়ে আসছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular