Homeএখন খবরস্ত্রী দাঁড়িয়ে দেখল প্রেমিকের হাতে স্বামীর হত্যা, খড়পুরের কিশোরী ফাঁস করল মায়ের...

স্ত্রী দাঁড়িয়ে দেখল প্রেমিকের হাতে স্বামীর হত্যা, খড়পুরের কিশোরী ফাঁস করল মায়ের কান্ড, গ্রেপ্তার স্ত্রী ও প্রেমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা: রাতে বাবার গোঙানির আওয়াজ পেতেই ঘুম ভেঙে যায় মেয়ের। ক্লাশ টুয়েলেভে পড়া মেয়ে দেখল রাজু আঙ্কেল বাবার গলা টিপে ধরেছে। সদ্য ১৭পেরুনো কিশোরী লাফ দিয়ে বাবাকে বাঁচাতে গেলে মা আটকে দেয়। দিদির পাশাপাশি ঘুম ভেঙে যায় বছর দশেকের ভাইয়েরও। বাবাকে বাঁচাতে ছুটে আসে সেও কিন্তু তাকেও আটকে দেয় মা। বাবার ততক্ষনে হাঁপ উঠে গেছে। চিৎকার শুরু করে ভাই বোন। ছুটে আসে পাশের বাড়ির স্বামী-স্ত্রী কিন্তু বাড়িতে ঢুকতে পারেননি, মা দরজায় খিল দিয়ে দেয়।

মেয়ে দরজা খুলে দিতেই এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী দম্পতি কিন্তু রাজু আঙ্কেল তাঁদের ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। মা, এগিয়ে এসে বলে, ‘ভাগো ইঁহাসে, আপনা মামলা হ্যায়!’ মামলা যে একটা চলছিল আর রাতে ভিতে রাজু আঙ্কেল যাওয়া আসা করছিল।এমন কি বাড়ি ফাঁকা থাকলে দিনের বেলাতেও প্রতিবেশীরা জানত। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছিল আজকাল। গৃহকর্তার মদ খাওয়া বেড়েও গেছিল আজকাল, ভয়ঙ্কর ভাবেই। আজকের মামলাও সেরকম কিছু। আজ হয়ত রাজু আঙ্কেলের সাথে মা কে দেখে ফেলেছিল ভাই বোন তাই চিৎকার চেঁচামেচি। প্রতিবেশী দম্পত্তি এই সব ভেবেই ফিরে গেছিলেন।

মঙ্গলবার, ২১শে জুলাইয়ের রাত সাড়ে ১১টা নাগাদের ঘটনা। ঘটনাস্থল নিমপুরা রেল আবাসন এলাকা, খড়গপুর পৌর সভার ১৫নম্বর ওয়ার্ড। খবর পেয়ে ছুটে আসেন ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর(বিদায়ী) ভি. রামনা। মৃত ব্যক্তি তাঁর নিজের ভাই। ওই রাতেই একজন কোয়াক ডাক্তার এসে  ৪৪ বছরের এম. ঈশ্বর রাও কে পরীক্ষা করেন।  ঈশ্বর রাওয়ের স্ত্রী এম.সোয়াতি. রামাইয়া ডাক্তারকে বলেন, ‘ হামেশাই পিয়া উয়া করতা থা!’, প্রায়ই মদ খেত। কোয়াক ডাক্তার সার্টিফিকেট দেন, হার্ট আ্যটাক। ছেলে মেয়ে অদ্ভুদ রকমের চুপচাপ, ভীত সন্ত্রস্ত। পরের দিন সকালে প্রতিবেশীদের হৈচৈ। কী ভাবে কানে কানে ছড়িয়ে যায়, ‘হালকা ফুলকা বুখার ভি থা!’, একটু আধটু জ্বর ছিল। বুখার বা জ্বরের কথা ছড়িয়ে পড়তেই মানুষ মার টেনে দৌড়। করোনা আবহে ফাঁকা হয়ে যাওয়া জনতা, নির্বিঘ্নে উৎরে যায় শেষ কৃত্য। নিমপুরা শশ্মানে পুড়ে ছাই হয়ে গেল ঈশ্বর রাওয়ের দেহ।”

গল্প এ অবধি ঠিকঠাক। উত্তর ২৪পরগনার বারাসতের মনুয়া কাণ্ডের ছায়া ধরাই পড়েনি খড়গ পুরের ঈশ্বর রাও কাণ্ডে। কিন্তু গোল বাধল শহরের হিজলী হাই স্কুলের ক্লাশ টুয়েলেভে পড়াছাত্রী শ্রুতি লায়া মানসিক যন্ত্রনায় মায়ের প্রেমিকের হাতে বাবার এই খুন মেনে নিতেই হবে! মা ধমক দিয়েই চলেছে কাউকে বলবিনা। কিন্তু শেষ অবধি মা আটকে রাখতে পারেনি। ঘটনার তিন দিন পর শুক্রবার মায়ের নজর এড়িয়ে শ্রুতি ভাইকে নিয়ে ছুটে যায় একই এলাকায় জেঠুর কাছে। ভাইঝির কান্ড শুনে অবাক রামনা!

শুক্রবার রাতেই ভাই বোনকে খড়গপুর টাউন থানাতে হাজির করেন রামনা। রাতেই তুলে আনা হয় রামাইয়া আর তাঁর প্রেমিক কে নোকা রাজু কে। জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয় দুজনকেই। পুলিশ জানিয়েছে ঠিক গলা টিপে নয়, গেঞ্জি গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে ঈশ্বর রাও কে। আর কাউকে বললে তাঁদেরও খুন করে দেওয়া হবে এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। খড়গপুর পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মহিলা ও তাঁর প্রেমিক দুজনেই রেলের স্থায়ী চাকুরি করে। মহিলার বাপের বাড়ি ওই নিমপুরা এলাকারই সামান্য দুরে যেখানে প্রেমিকের বাড়িও।

মৃত ঈশ্বর রাও অবশ্য রেলের ঠিকাদারের অধীনে কাজ করত। ইদানিং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় অশান্তি হত এবং তার মীমাংসা করতে ছুটে আসত রাজু এবং বরাবরই সে নাকি মহিলারই পক্ষ নিত। কিশোরী জানিয়েছে এই অশান্তির কারন মায়েরই আচার আচরন। ঈশ্বর রাও নাকি সাম্প্রতিক কালেই বেশি বেশি করে মদ্যপ হয়ে পড়েছিল। অনুমান করা হচ্ছে স্ত্রীর সাথে রাজুর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বুঝতে পেরেছিলেন ঈশ্বর।

পুলিশ জানিয়েছে,  রাজু নিজেও বিবাহিত তাঁর সন্তান ও রয়েছে।

[contact-form][contact-field label=”Name” type=”name” required=”true” /][contact-field label=”Email” type=”email” required=”true” /][contact-field label=”Website” type=”url” /][contact-field label=”Message” type=”textarea” /][/contact-form]

ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছে দু’জনই। কিন্তু সে তো পুলিশের কাছে, আদালতে কী হয় সেটাই দেখার। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘মৃতদেহ পোড়ানো হয়ে গেছে। এখন পুরো মামলাই সাজাতে হবে পারিপার্শ্বিক স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে। কাজটা খুবই কঠিন। আপাতত দুজনকে হেফাজতে নিয়ে আরও প্রমান উদ্ধার করতে হবে।’

RELATED ARTICLES

Most Popular