Homeএখন খবরক্রান্তিকালের মনীষা-৯||   অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা-৯||   অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা-৯||                                                  অনিন্দিতা মাইতি নন্দীবসতবাড়ির নকশা বানাতে চান? ‘শ্যামলী মডেল’ দিয়ে দেখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ    বিশ্বকবি এক আত্মভোলা প্রকৃতির মানুষ, পৃথিবীকে মাতৃরূপে উপাসনা করেন নিত্যদিন। প্রকৃতিপ্রেমের মধ্যেই মানবপ্রেম ও সমগ্র মানবজাতির উন্নয়ণ সম্ভব, একথা গভীরভাবে প্রথিত তাঁর চেতনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাই উদাত্তচিত্তে মা বসুন্ধরার অফুরন্ত রূপলাবণ্যপ্রভা প্রাণপ্রাচুর্য্য বন্দনায় নিবেদন করেন,-
“তোমার মৃত্তিকা-মাঝে ব্যাপ্ত হয়ে রই,-
পান করি বিশ্বের সকল পাত্র হতে আনন্দমদিরাধারা
নব নব স্রোতে।”-

বিশ্বকবি এক প্রতিভার আকর যাঁর গভীরতা অতলস্পর্শী, অপরিমেয় ব্যাপ্তি, দার্শনিকতা অপার-শান্তিরবারি,— তাঁর পরিবেশভাবনা ও স্হাপত্যশিল্পবোধ মুগ্ধতা জাগায় । প্রকৃতি-পরিবেশ-মুগ্ধতায় ,আত্মমগ্ন-কবি তাই প্রকৃতির কোলেই অপরূপ শোভায় খোঁজেন,–
“সৃষ্টির প্রাঙ্গণে দেখি বসন্তে অরণ্যে ফুলে ফুলে-
দুটিরে মিলানো নিয়ে খেলা।
রেণুলিপি বহি বায়ু প্রশ্ন করে মুকুলে-মুকুলে,
কবে হবে ফুটিবার বেলা!”

প্রকৃতি, সমাজ এবং মানুষ এই তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাস্তুতন্ত্রের তথা পরিবেশ-সাম্য রক্ষায়। গুরুদেব একজন প্রকৃত সক্রিয় পরিবেশবিদ (Environmental Activist) ,–প্রানের সংবেদনায়, উপলব্ধিকে তিনি রূপায়িত করেন কর্মভূমিতে কাজের-প্রেরণায়। তাঁর চিন্তা-পথে পরিবেশভাবনা গভীরভাবে প্রথিত ছিল বলেই গুরুদেব চিত্তে প্রকৃতির প্রতি অনন্ত-প্রেমধারা কাব্যসুধা হয়ে বারবার তাঁর কলমে প্রবাহিত। তাঁর একান্ত উপলব্ধিতে ঝংকৃত হত অনন্ত-নীলিমা, মৃদুমন্দ-বাতাস, বিমল-শান্তি। গ্রাম-বাংলার, শান্ত-স্নিগ্ধ- রূপমাধুর্য, ভ্রমরের গুঞ্জনে, ছায়া সুনীবিড় নিপবনের ছায়াবিথিতল যেন আকুল আহ্বানে কবিচিত্তকে দোলা দিয়ে যেত। গুরুদেবের অনেক কবিতায় ধ্বনিত হয় মানবজাতি ও তার আবাসস্থলের মধ্যে সুমধুর স্থিতিশীল ভারসাম্য। বিশ্বকবি এ-পৃথিবীর ধূলিকনা, মাটি, ফুলফল, জলরাশি সবকিছুর সাথেই নিজেকে অভিন্নবন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন —–
“যুগে যুগে আমি ছিনু তৃণে-জলে,
যদি চিনি, যদি জানিবারে পাই ধুলারেও মানি আপনা
ছোট-বড়ো হীন সবার মাঝারে করি চিত্তের স্থাপনা”।

আবার প্রকৃতির-প্রতি গুরুদেবের মনোভাব ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ নাটকে অত্যন্ত হৃদয়াবেগ দিয়ে রচিত হয়েছে। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক মূলত দুই প্রকার- একটি প্রেমের, অপরটি প্রয়োজনের, হৃদয়-দুয়ার খুলে প্রকৃতির সাথে যে মিলন তাতে আকাশ-বাতাস-উদ্ভিদ-পশুপাখি, সকলের সাথেই প্রাণ-মন এক চিত্তে বাঁধা পড়ে। মানুষের নিজের আত্মোপলব্ধির জন্যেই প্রকৃতির সাথে সখ্যতা বিশেষ প্রয়োজন। আবার প্রকৃতির সমস্ত সম্পদ গ্রহণ করেই মানুষ জীবনধারণ করে- এখানে প্রকৃতি কেবলমাত্র উপকরন। গুরুদেব তাই নিজ উপলব্ধিতে বলেন,
“হই যদি মাটি, হই যদি ফল
হই যদি তৃণ, হই ফুলফল,
জীব-সাথে যদি ফিরি ধরাতল, কিছুতেই নাই ভাবনা”।

রবীন্দ্রনাথ মনে-প্রাণে একজন কবি। তাঁর সেই কবি-সত্বা, মননশীলতার আতিশয্য মানুষ ও প্রকৃতির মিলিত-সত্তা যেন বিশ্বপ্রকৃতি মানব-মনের মতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতি- বন্দনায় বিশ্বকবি বলেন, “লাজুক ছায়া বনের তলে
আলোরে ভালোবাসে
পাতা সে-কথা ফুলেরে বলে
ফুল তা-শুনে হাসে”                                            কবি বিষ্ণু দে বলেন, “বস্তুত রবীন্দ্রনাথই আমাদের দেশে শিল্প-সাহিত্যে তো বটেই, দেশের সমস্ত সংস্কৃতি, মানবজীবন ও কর্মের আধুনিকতায় আদি ও মৌলিক দৃষ্টান্ত”।

বিশ্বকবি তাঁর পরিবেশভাবনা ব্যক্ত করেন ‘হলকর্ষণ’ ও ‘অরণ্যদেবতা’ প্রবন্ধ দুটিতে বিশদভাবে। হলকর্ষণ যে অন্নের-জন্য, শস্যের-জন্য প্রয়োজন, আবার, এর-ফলে মাতা বসুন্ধরার যে ক্ষত-বেদনা সৃষ্টি হয়, তা প্রতিকার করার জন্য ‘বৃক্ষরোপণ’ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিশ্বভারতী সম্মিলনীতে ‘অভিভাষণ’ বক্তব্যে এক অসামান্য তুলনা করেছেন বাস্তুতন্ত্র ও জলচক্রের মধ্যে, ‘জলোৎসর্গ’ ভাষণে বারবার সতর্ক করার চেষ্টা করে গেছেন আমাদের পরিবেশের জলের গুরুত্ব,– স্মরণ করিয়ে গেছেন মজে যাওয়া পুকুরগুলিকে পুনরুদ্বারের প্রয়োজনীয়তা, —-কবিগুরু যে পরিবেশ-সাম্য ভাবনায় কতটা সক্রিয় ছিলেন তা তাঁর কর্মকাণ্ডের পরিসরকে স্পষ্ট করে। শৈশব থেকেই তাঁর প্রকৃতিপ্রেম-‘জীবনস্মৃতি’র পাতায় বর্ণনায় ঘনঘটা, “বোলপুরের মাঠের মধ্যে স্থানে-স্থানে বর্ষার জলধারায় বালিমাটি ক্ষয় করিয়া, প্রান্তরতল হইতে নিম্নে, লাল-কাঁকর ও নানাপ্রকার পাথরে খচিত ছোট-ছোট শৈলমালা গুহাগহ্বর নদী-উপনদী রচনা করিয়া, বাল্যখিল্যদের দেশের ভূ- বৃত্তান্ত প্রকাশ করিয়াছে। এখানে এই ঢিবিওয়ালা খাদগুলিকে খোয়াই বলে। এখান হইতে জামার আঁচলে নানা- প্রকারের পাথর সংগ্রহ করিয়া পিতার কাছে উপস্থিত করিলাম। তিনি আমার অধ্যবসায়কে তুচ্ছ বলিয়া একদিনও উপেক্ষা করেন নাই”।– সেদিনের সেই ছোট্ট রবিঠাকুর—– যে পরবর্তীকালে শান্তি নিকেতনে লালমটি, কাঁকর বা ল্যাটেরাইট-পাথরে স্থাপত্যশিল্পে মাটির ব্যবহারে দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টি-ইতিহাস তৈরি করবে তার আভাস হয়ত দুরদৃষ্টি সম্পন্ন পিতা দেবেন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন।

চিরকালই স্থাপত্যশিল্প যেকোন দেশের অন্যতম প্রধান সংস্কৃতির অঙ্গ বলেই বিবেচিত হয়। একজন সফল-স্থপতি তাঁর সৃজনশীলতা এবং কাল্পনিক শক্তির বিকাশে নান্দনিক সৌন্দর্য, স্থাপত্যের নিজস্ব-ভাষা আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃষ্টি করেন। শান্তিনিকেতনের নিজস্ব-বৈশিষ্টসম্পন্ন স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শনে কবিগুরুর অবদান সুগভীর। শান্তিনিকেতনকেন্দ্রিক কর্মযজ্ঞে গুরুদেব প্রকৃতি-সমাজ-স্থাপত্য-শিক্ষা,— সবকিছুর মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। কবিগুরু শান্তিনিকেতন স্থাপত্য-নির্মাণে সহযোদ্ধ্বা হিসেবে রামকিঙ্কর বেজ ,নন্দলাল বসু, সুরেন্দ্রনাথ কর, বিনোদবিহরী মুখোপাধ্যায়দের সাহচর্য পেয়েছিলেন। কবিগুরু শুধুমাত্র থিওরী বা তত্বে বিশ্বাসী নয় ,-তাই তাঁর মানসকন্যা মাটির-স্থাপত্য ‘শ্যামলী’ নির্মাণ ছিল এক তত্‍পর্যপূর্ণ প্রতীকী নির্মাণ। এই মাটি শুধু শান্তিনিকেতনী-মাটি নয় ,তার সাথে কাটাঘাস বা কাঠেরটুকরো, গোবর-আলকাতরা ইত্যাদি সহযোগে তৈরি হল মাটি। আর এই মাটি দিয়েই তৈরি করা হল ব্লক। ‘শ্যামলী’ শুধু তাঁর স্বপ্নকন্যা নয় একটি সমৃদ্ধ-কল্পনা যা শিল্পস্তরে উন্নীত হল। কবিগুরু চেয়েছিলেন-দেশের অসংখ্য স্বল্পবিত্ত মানুষ যেন এই বাড়িটিকে তাদের ‘মডেল’ হিসেবে ধরে নিজেদের বসতবাড়ি তৈরি করে। তাঁর এই প্রত্যাশা অব্যর্থ, আজও বহু-স্থপতি, ভারতের বাস্তব-অবস্থা বিবেচনা করে স্বল্পখরচে মাটিরবাড়ি নির্মাণকাজে ব্রতী হয়েছেন। কবিগুরু তাঁর ‘শেষ সপ্তক’-এ ‘শ্যামলী’ কে অমরত্ব দিলেন,
“আমার শেষ বেলাকার ঘরখানি
বানিয়ে রেখে যাব মাটিতে
তার নাম দেব শ্যামলী
ও যখন পড়বে ভেঙে
সে হবে ঘুমিয়ে পড়ার মতো
মাটির কোলে মিশবে মাটি
ভাঙ্গা থামের নালিশ উঁচু করে
বিরোধ করবেনা ধরণীর সঙ্গে”।

কবিগুরুর মানসকন্যা ‘শ্যামলী’র দেওয়াল-ছাদ-ছবি সবকিছুই দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য।
কবিগুরু চন্দননগরের মোরান-সাহেবের বাড়িতে থাকার সময় একটি মাটির-ঘর দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। সেই বাড়িটির কথা মাথায় রেখেই তার- সাথে সমকালীন বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা নিয়ে শ্যামলী নির্মাণ হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানসচিত্তে এমন একটি মাটির-বাড়ি ছিল যার প্রতিটি অংশ, প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হবে মাটির ধূলিকনা দিয়ে। ‘শ্যামলী’র গঠনশয্যা তাই মাটির কলসীর সমন্বয়ে গায়ে-গায়ে এক-একটা কলসী সাজিয়ে,— কলসীমাটি ও সরের সমন্বয়ে গঠিত। বাড়িটির গায়ে কয়েকটি সাঁওতাল রমণী আর বাড়ির দেওয়ালে মাটি- কেটে ,নানা-মূর্তি, নক্সা-করা । বাড়ির সামনে চাতালের দুদিকে দুটি গুলঞ্চফুলের গাছের সাথে কুরচিফুলের সমারোহ মিষ্টি সুরভীমণ্ডিত পরিবেশ,- যা দোলা দিত কবি হৃদয়ে,
“যাব আমি- তোমার বাধাবিহীন বিদায়ের দিনে
আমার ভাঙ্গা ভিটের পর গাইবে দোয়েল
কোকিল ল্যাজ দুলিয়ে
এক সাহানাই বাজে তোমার বাঁশিতে ওগো –
শ্যামলী
যেদিন আমি যেদিন আসি আবার সেদিন যাই চলে”॥

শান্তিনিকেতনের সমগ্র অঞ্চলটিতে কবিগুরু অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন ভাস্কর্য-শিল্পী রামকিঙ্কর বেজের কারুকার্য মণ্ডিত করেছিলেন। সাথে এক অনিন্দ্যসুন্দর উদ্যনের সৃষ্টি হয়েছিল। অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কবিগুরুর পরিবেশও স্থাপত্য-ভাবনা বিস্ময় জাগায়—– আমরা যে Ecological Balance বা Ecofriendly পরিবেশ নিয়ে আজ চিন্তিত কবিগুরু অনেক আগেই সেই নিদর্শন শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন।
কবিগুরুর শান্তিনিকেতন যেন শিল্পানুরাগ, স্থাপত্যপ্রেম ও বিজ্ঞানমনস্কতা এই তিন অভিনব সমন্বয়ে সৃজনশীলতার প্রকাশ। স্থাপত্য ও শিল্পপ্রেমের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কবিগুরুর স্মৃতিধন্য চত্বর ‘উত্তরায়ন’। কোণার্ক-শ্যামলী-পুনশ্চ- উদয়ন-উদিচি এই-পাঁচটি বাড়ির সমন্বয়ে ‘উত্তরায়ণ’ চত্বর । কবিগুরু কাব্যসৃষ্টির প্রয়োজনে পরিপার্শিক পরিবেশ পরিবর্তনের আগ্রহী সর্বদাই,-তাঁর কবিমন নিত্য-নতুন আস্তানার সন্ধানে প্রয়াসী, উতলা হয়ে উঠত।
ভারতীয় স্থাপত্য-ভাস্কর্য-শিল্পের অন্যতম প্রধান উপাদান বৃক্ষ। একজোড়া ছাতিম-গাছের কী অপূর্বমাধুরী, ফল-ফুল-পাখির, অনন্য সমাবেশ সৃজনশীল কল্পনাপ্রবন রবীন্দ্রনাথের স্বতষ্ফুর্ত লেখনীতে ঝর্ণাধারার মত প্রাণবন্ত।
“আমরা চলে যাব, কিন্তু কালে- কালে ,বারে-বারে
বন্ধু সংগমের জন্য এই ছায়াতল রয়ে গেল।“……….ছাতিমতলা-সংলগ্ন মাঠের একাংশে আশ্রমের গায়ে গৃহনির্মানের সুপ্তস্ব্প্ন কবিমনে, নীল-আকাশের বুকে বলাকা-সারি ,-বার-বার যেন গভীর অনুভুতি সৃষ্টি করে,
“চিত্ত আমার হারালো আজ মেঘের মাঝখানে
কোথায় ছুটে চলেছে সে কোথায় কে জানে”।

পালতোলা মেঘের-দল সারি বেঁধে চলেছে নীল আকাশের বুকে, নীচে মাটিতে হিমে-ভেজা শিশিরসিক্ত ঘাসের দল, সাথে শিউলির রাশি- এই বর্ণছটায় কত অনবদ্য রূপমাধুরী এখানেই উত্তরায়ন প্রাঙ্গণে কবির প্রথম বাড়ি কোণার্ক। এর বাঁপাশে রয়েছে সেই বিরাট শিমুল গাছ, সাথে সন্ধ্যামনিলতা। কোণার্কের পাশে লম্বা চাতাল। নিজের আদর্শকে সামনে রেখে কবিগুরুর স্থাপত্য-চেতনা, কোণার্ক-শ্যামলী,- রূপ দিয়েছিলেন সুরেন কর। কোণার্ক, শ্যামলীর পরও কবিগুরুর মন এক-পরিবেশে, একঘরের দেওয়ালের বদ্ধ পরিধির মধ্যে টেকেনি বেশিদিন। তাই এরপর তৈরি হল আর এক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন পুনশ্চ। পরের বাড়িখানা ‘উদয়ন’ যা সৌন্দর্যমন্দিত আশ্চর্য শিল্পবোধের এবং ভারতীয় স্থাপত্য-শিল্পের প্রতি এক গভীর অনুরাগের উজ্জ্বল নিদর্শন। দুই কালজয়ী প্রতিভা (অবনীন্দ্রনাথ-গগনেন্দ্র) নিখুঁত পরিকল্পনামণ্ডিত গৃহসজ্জা,কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের নিজস্ব প্রতিভার দৃষ্টান্ত এই ‘উদয়ন’। বাড়িটির স্থাপত্য-শিল্পে দেশী ও বিদেশী স্থাপত্যের সুক্ষ সংমিশ্রণও রয়েছে।
উত্তরায়ন প্রাঙ্গণে শেষ নির্মিত বাড়ি ‘উদিচি’ –এই গৃহেই কবিগুরুর গৃহ পরিবর্তনের বারবার নেশার পরিসমাপ্তি ঘটে।‘উদিচি’তেই কবিগুরুর শেষজীবনে আঁকা অসংখ্য ছবি ও কবিতা তাঁর হৃদয়ের ব্যাকুলতা ও সুগভীর সূক্ষ অনুভূতির প্রকাশ করে।
সারা শান্তিনিকেতন জুড়েই প্রকৃতি-প্রেমের বন্দনা,–দেহলি বাড়িটির সামনে দিয়ে লাল কাঁকরের পথ, পথের ডানদিকে শালবীথি-আমবন-মাধবীকুঞ্জ-ঘণ্টাতলা, আর সেই প্রাচীন বটবৃক্ষ। সব মিলিয়ে যেন আনন্দনিকেতন। বসন্তের আগমনে তাই কবি মনে জাগে বসন্ত,
“আজি দখিন দুয়ার খোলা-
এসো হে, এসো হে, এসো হে -আমার বসন্ত এসো”।

কিংবা বসন্তবিরহেও কবি-চিত্তের ভারাক্রান্ত-ধ্বনি বেজে ওঠে
“চলে যায়, মরি হায়-বসন্তের দিন
দূর-শাখে, পিক-ডাকে ,বিরামহীন”।
এভাবেই প্রকৃতি, পরিবেশের সাথে একাত্ম হতেন এই পরিবেশপ্রেমী গুরুদেব।
“দাও ফিরে সে অরণ্য-লহ এ নগর”। -বৃক্ষ অরণ্য, প্রকৃতি- পরিবেশপ্রেমী, অনন্য স্থাপত্য- শিল্প-চিন্তক হিসাবে তাই আজও কবিগুরু সামগ্রিকভাবে প্রাসঙ্গিক। কবির প্রকৃতিপ্রেম তাই ঝংকৃত হয়,
“হে তরু, এ ধরাতলে রহিবনা যবে,
সেদিন বসন্তে নব পল্লবে-পল্লবে
তোমার মর্মরধ্ব্নি পথিকেরে কবে,
ভালোবেসেছিল কবি বেঁচেছিল যবে”।

রচনাসূত্র (Reference):                                       ১) রবীন্দ্রনাথের স্থাপত্য পরিবেশ সৃষ্টি : প্রাসঙ্গিকতা,সমীর রক্ষিত (নন্দন পত্রিকা)
২) রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ ভাবনা, সত্যজিত্‍ বন্দোপাধ্যায় (জনবিজ্ঞানের ইস্তাহার)
৩) শান্তিনিকেতন চেনা অচেনা,সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর
৪) রবীন্দ্র পরিচয়, বিশ্বভারতী
৫) ছবিঃ আন্তর্জাল (Internet

RELATED ARTICLES

Most Popular