Homeএখন খবরক্রান্তিকালের মনীষা-১১ ।। অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা-১১ ।। অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা                                                  অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

মানব চরিত্র বিশ্লেষক বঙ্কিম –দ্বিতীয় পর্ব

বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধ-সাহিত্যগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ যেখানে ভাবের গভীরতা,নিরস-রঙ্গতামাশা, বৈচিত্রে, ভাষায়, অপূর্ব-কারুকার্যে, তীক্ষ-ব্যাঙ্গের ছলে, রূপকধর্মের বিচিত্র ভাবকল্পনায় এবং সর্বোপরি অভিনব রচনাশৈলীর সুনিপুন প্রয়োগের অনন্য নিদর্শন। প্রবন্ধগুলি একদিকে যেমন সাহিত্যরসগুণ মন্ডিত আবার একইসাথে গুরুতর ভাবনার প্রতিফলনও। চিন্তার ঔদার্যতায় ও গভীরতায়, সূক্ষ মননশীলতায় এই প্রবন্ধগুলি সাহিত্য-সুষমামণ্ডিত। প্রবন্ধগুলির মধ্যে ‘লোকরহস্য’, ‘বিবিধ প্রবন্ধ’, ‘কৃষ্ণচরিত্র’, ‘ধর্মতত্ব’, ‘কমলাকান্ত’ সরস, মুখপাঠ্য সাথে স্বরাজ-স্বজাতি ও স্বদেশপ্রীতি ধ্যানধারণার সচেতন প্রতিফলন।

‘কমলাকান্তের দপ্তর’- এর ,- অন্যতম প্রবন্ধ ‘বিড়াল’। এটি অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক রূপকধর্মী রচনা– যেখানে প্রাবন্ধিক সমাজতন্ত্রবাদের উপর যথেষ্ট আলোকপাত করেছেন। এখানে দরিদ্র ক্ষুধার্থ অস্থিকঙ্কালসার মানুষদের প্রতিনিধি স্বরূপ ‘বিড়াল’ চরিত্র। এই প্রবন্ধে বিড়ালের মুখ দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক বক্তব্য পেশ করেছেন, “অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এই পৃথিবীতে কেহ আইসে নাই”। -এই মূলবক্তব্যটি সারা প্রবন্ধের প্রতিটি শব্দে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন, “খাইতে পাইলে কে চোর হয়? –এই প্রশ্নবান বিড়ালের মুখ দিয়ে সমগ্র মানবজাতির উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছেন।
“চোর দোষী বটে, কিন্তু কৃপণ-ধনী তদপেক্ষা শতগুণে দোষী। চোরের দন্ড হয়, চুরির মূল যে কৃপণ, তাহার দন্ড হয় না কেন? –অসাধারণ বৈষম্য ফুটিয়ে তুলেছেন লেখনীতে –এ প্রশ্ন চিরকালীন, চিরযুগের। যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হয় তুবু প্রশ্নটা যা ছিল তাই-ই রয়ে যায়। বিড়ালের মুখনিঃসৃত সেই সাড়া জাগানো প্রশ্ন, “আমি যদি খাইতে না পাইলাম, তবে সমাজের উন্নতি লইয়া কি করিব?” –এ যেন বিড়ালের মুখে রূপকছন্দে স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রের সমাজকে প্রশ্নবান?

প্রাবন্ধিকের সুচতুর বাক্যবান এক্কেবারে শেষ-অংশে বিড়ালের ব-কলমে সমগ্র দরিদ্র নিপীড়িত জাতির প্রতীক হিসাবে তথাকথিত উচ্চশ্রেণীর মানবসম্প্রদায়কে, “চোরকে ফাঁসি দাও, তাহাতেও আমার আপত্তি নাই, কিন্তু তাহার সঙ্গে আর একটি নিয়ম করো –যে বিচারক চোরকে সাজা দিবেন, তিনি আগে তিনদিবস উপবাস করিবেন। তাহাতে যদি তাঁহার চুরি করিয়া খাইতে ইচ্ছা না করে, তবে তিনি স্ব্চ্ছন্দে চোরকে ফাঁসি দিবেন”।

মানুষে মানুষে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য যে কতটা সামাজিক ব্যাধি তা যেন সমগ্র চেতনায় বঙ্কিমচন্দ্র সারাক্ষণ অনুভবের আয়নায় প্রত্যক্ষ করতেন আর সেইজন্যেই বিড়ালের কন্ঠে ধ্বনিত হয়, “ ধনীর দোষেই দরিদ্র চোর হয়। পাঁচ শত দরিদ্রকে বঞ্চিত করিয়া, একজনে পাঁচশত লোকের আহার্য সংগ্রহ করিবে কেন? যদি করিল, তবে সে তাহার খাইয়া যাহা বাহিয়া পড়ে তাহা দরিদ্রকে দিবেনা কেন? যদি না দেয়, তবে দরিদ্র অবশ্য তাহার নিকট হইতে চুরি করিবে, কেননা অনাহারে মরিয়া যাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ আইসে নাই”। এই বৈষম্য আজও সামাজিক ব্যাধি। প্রতিকার নাই আজও, অন্তহীন এর ব্যাপ্তি।

ইংরেজ সাহিত্যিক ডি-কুইন্সির ‘Confessions of an English opium Eater’ গ্রন্থটির অনুসরণে লেখা এক আফিমখোর ‘কমলাকান্ত’ –এর বৈঠকী ঢঙ্গে সরসগল্পে, গীতি-কবিতার সুরমুর্ছনায় চরম-নাটকীয়তার সংমিশ্রণে অনবদ্য ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। কমলাকান্তের মুখ দিয়ে স্বয়ং সাহিত্যসম্রাট তাঁর নিজের মনের কথাগুলি বলিয়েছেন। তাই “কমলাকান্তের দপ্তরে” নিজের চিন্তভাবনা প্রতিফলিত হয়, “পরের-জন্য আত্মবিসর্জন ভিন্ন পৃথিবীতে স্থায়ী-সুখের কোন মূল্য নাই। ধন, যশ, ইন্দ্রিয়াদিলব্ধ সুখ আছে বটে, কিন্তু তাহা স্থায়ী নহে।” গ্রন্থের একদম শেষ-অংশে স্বক্ষোভে বিদায় সম্ভাষণ কমলাকান্তের কথা, “সম্পাদক মহাশয়, বিদায় হইলাম আর লিখিবনা, বনিলনা। আমার আপনার সঙ্গে আর বনিলনা।”

একজন প্রবন্ধকার প্রকৃতপক্ষে একটি বিশেষ সামাজিক পরিমণ্ডলকে বিভিন্ন ঘটনাবলী ও পরিবেশগত সামঞ্জস্য বা বৈসাদৃশ্য সমন্বিত করে বিবৃত করেন। বঙ্কিমচন্দ্র তত্‍কালীন সমাজবিষয়কে হৃদয়ঙ্গম করে যে সমস্ত প্রবন্ধাবলি রচনা করেছিলেন- তার মধ্যে ‘লোকরহস্য’ হল অন্যতম সৃজন প্রতিভার অবিস্মরণীয় কীর্তি। পনেরটি প্রবন্ধের অনন্য-সংকলন, বিষয়সূচী লক্ষ করলে পরিষ্কার এখানে সাহিত্য, সমাজ, গ্রন্থশাস্ত্র, ধর্মনীতি সর্বক্ষেত্রেই সাহিত্যসম্রাট তাঁর অনন্য প্রতিভা-দীপ্তিতে উদ্ভাসিত। হাস্যরসের মাধ্যমে গুরুগম্ভীর বিষয়কে সরস, প্রাণময় করে তোলেন সুদক্ষ যুক্তির তীব্রতা ও তীক্ষ্ণ মননশীলতার সমন্বয়ে।

প্রথমেই লোকরহস্যের অন্তর্গত প্রবন্ধ ‘বাবু’ ,- এই প্রবন্ধটিতে উনিশ শতকের ‘বাবু’ জীবনের সার্বিক পরিচয় স্পষ্টভাবে উদ্ভাবিত হয়েছে। ‘বাবু’ শব্দের উদ্ভব সংস্কৃত-শব্দ ‘বপ্তা’ থেকে। আবার ফরাসী ভাষায় ‘বাবু’ কথাটির অর্থ,- ঈশ্বরপ্রিয়, প্রকৃতজ্ঞানী পুরুষ। ‘বাবু’ উপাধি আভিজাত্যের পরিচায়ক।

এখানে বঙ্কিমচন্দ্র এমন একদল উনিশ-শতকের ইংরেজি-শিক্ষিত, মদ্যপানাসক্ত ,বারাঙ্গনা- প্রতিপালক পাশ্চাত্যনুকরনশীল সম্প্রদায় ‘বাবু’ উপাধিভূষিত মানুষজাতির জীবন আলেখ্য অপূর্ব-লেখনীতে উচ্চস্তরের হাস্যরস-সম্বলিত চিত্রিত করেছেন। এ যেন হাস্যরসিকদের অন্যতম প্রধান লেখক স্টিফেন লিকক-এর কথা, “Humor may be defined as the kindly contemplation of life and the artistic expression there of (Human and Humanity) স্মরণ করিয়ে দেয়। হাস্য কৌতুকরসের মূলতত্বটি যেন, “Some defect or ugliness which does not imply pain” –এর মধ্যেও লুকিয়ে আছে। Humor এর আঘাত বা আক্রোশ থাকে না, কেবলমাত্র নির্মল আনন্দধারা কিংবা বেদনাসিক্ত নির্লিপ্ত হাসির ব্যঞ্জনা।

মহাভারতের অনবদ্য দুটি-চরিত্র মহর্ষি বৈশস্পায়ন এবং জনমেজয়ের কথোপকথনের মাধ্যমে কলিযুগের মানুষরূপী ‘বাবু’ দের পরিচিতি ও সাথে বিচিত্র কার্যকলাপ সুন্দর রসসিক্তভাবে বর্ণনা করেছেন। নব্য বাঙালি বাবুজীবন তথা নাগরিক সম্প্রদায়ের সমাজের সর্বস্তরে মানুষের নৈতিক অধঃপতন, বিচিত্র-প্রকৃতির মানুষের চরিত্ররহস্য উদ্ঘাটন করেছেন সহাস্য কৌতুক-রসিকতায় এবং তীব্র ব্যাঙ্গের কশাঘাতে জর্জরিত করেছেন-

বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় তাই ‘বাবু’ হলেন এঁরা – “রূপে কার্তিকের কনিষ্ঠ, গুণে নির্গুণ-পদার্থ, কর্মে জড়ভরত এবং বাক্যে সরস্বতী।……. যাহার বাক্য মনমধ্যে এক, কথনে দশ, লিখনে শত এবং কলহে সহস্র তিনি বাবু” আবার, “যিনি মিশনরির নিকট খ্রীষ্টিয়ান, কেশবচন্দ্রের নিকট ব্রাহ্ম, পিতার নিকট হিন্দু এবং ভিক্ষুক ব্রাহ্মনের নিকট নাস্তিক তিনি ‘বাবু’। …….. যাহার বুদ্ধি বাল্যে পুস্তকমধ্যে, যৌবনে বোতলমধ্যে, বার্ধক্যে গৃহিনীর অঞ্চলে, তিনিই ‘বাবু’। যিনি নিজগৃহে জল-খান, বন্ধুগৃহে মদ-খান এবং মুনিবসাহেবের গৃহে গলধাক্কা খান, তিনিই বাবু।’’
‘বাবু’দেরও ঈশ্বরের মত দশ-অবতার বর্ণনা করেছেন- কেরানীবাবু, মাস্টারবাবু, জমিদারবাবু, সম্পাদকবাবু, ডাক্তারবাবু, উকিলবাবু, হাকিমবাবু, মুৎসুদ্দিবাবু, ব্রহ্মাবতারবাবু, নিস্কর্মাবাবু। প্রাবন্ধিকের ব্যাঙ্গক্তির ক্ষমতা অসাধারণ, -তেমনি তাঁর বিদ্রুপের তীক্ষ্ণ তরবারি। এই অস্ত্র- প্রয়োগে বঙ্কিমচন্দ্র অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন।

‘বঙ্গদেশের কৃষক’ প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র স্পষ্ট অনুভব করেছেন দেশে জন্মহার হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা, কারণ যে-হারে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, সেই হারে কিন্তু উত্‍পাদন বৃদ্ধি ঘটেনা তাই ফলস্বরূপ দেশে দারিদ্র, অশিক্ষা, মূর্খতা এবং দাসত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। আবার এই প্রবন্ধের চতুর্থ পরিচ্ছদের, সূচনাতে বলেন, “কী কারণে ভারতবর্ষের প্রজ্ঞা চিরকাল উন্নতিহীন, অদ্য আমরা তাহার অনুসন্ধানের প্রবৃত্ত হইব। বঙ্গদেশের কৃষকের অবস্থানুসন্ধানই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য”। এই প্রবন্ধে সাহিত্যসম্রাট যেভাবে দেশীয় অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সম্পর্কে পর্যালোচনা ও কারণ অনুসন্ধান করেছেন রীতিমতো গবেষণা করে ,তাতে একজন সুদক্ষ অর্থনীতিবিদ বলেই মনে হয় তাঁকে।

বঙ্কিমচন্দ্রের একটি অনবদ্য প্রবন্ধ ‘সাম্য’। এখানে কি অপরিসীম দুরদৃষ্টিতে তিনি অনুভব করেন বিশ্বসংসারের ‘প্রাকৃতিক বৈষম্য’ ও ‘অপ্রাকৃতিক বৈষম্য’। ‘সাম্য’তে বলেন, “প্রকৃতিই অনেক বৈষম্যের নিয়ম করিয়া আমদিগকে এই সংসার রঙ্গে পাঠাইয়াছেন”। কিন্তু এই প্রাকৃতিক বৈষম্য ছাড়াও আর একধরনের বৈষম্য রয়েছে যা সমাজকে অনেক দুর্বল করে দেয়, পিছিয়ে যেতে সাহায্য করে যা অপ্রকৃতিক বৈষম্য। এই ধরনের বৈষম্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হল,‘অর্থনৈতিক পার্থক্য’— ফলস্বরূপ ধনী-দরিদ্র প্রতিপন্ন হওয়া।

প্রাবন্ধিকের মতে, “সমাজের উন্নতিরোধ বা অবনতির যে সকল কারণ আছে, অপ্রকৃতিক বৈষম্যের আধিক্যই তাহার প্রধান। ভারতবর্ষের যে এতদিন হইতে এত দুর্দশা, সমাজিক বৈষম্যের আধিক্যই তাহার বিশিষ্ট কারণ।”

‘সাম্য’- বঙ্গদর্শনে তিনটি-সংখ্যায় ছাপা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র বিভিন্ন-দেশের ইতিহাসের নানারকম উদাহরণ থেকে বিশ্লেষণ করে নিজস্ব মতপোষণ করেন- পৃথিবীর যে সমস্ত দেশেই বৈষম্যের প্রবল-থাবা সমাজে দাবানলের মত ছড়িয়েছে সে সকল দেশের শ্রীবৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। তাঁর মতে এই বৈষম্য কোথাও বিপ্লবের মাধ্যমে আবার কোথাও উপদেশের দ্বারা দূরীভূত হয়েছে। প্রাবন্ধিকের নিজস্ব উপলব্ধি হল, “অস্ত্রবল অপেক্ষা বাক্যবল গুরুতর- সমরাপেক্ষা শিক্ষা অধিকতর ফলপধায়িণী”। সভ্যতার বিকাশ, সমাজের উন্নতি, দেশের শ্রীবৃদ্ধির মূলমন্ত্রই হল, “সকল মানুষ সমান”, এই বীজমন্ত্রই পৃথিবীর সর্বকালের সেরা মন্ত্র।

প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্র ‘সাম্য’ তে এক মহামন্ত্রকে অনুসরণ করতে বলেন যা পৃথিবীতে তিনদেশে তিনবার “তিনজন মহাশুদ্ধ্বাত্মা জন্মগ্রহণ করিয়া ভূমণ্ডলে মঙ্গলময় এক মহামন্ত্র প্রচার করিয়াছেন। সেই মহামন্ত্রের স্থূলমর্ম ‘মনুষ্য সকলেই সমান’। ….. এই তিনজনের মধ্যে প্রথম শাক্যসিংহ বুদ্ধদেব, দ্বিতীয় সাম্যবতার যীশুখ্রিস্ট, তৃতীয় সাম্যাবতার রুশো।” প্রবন্ধের প্রথম সংখায় বুদ্ধদেব ও যীশুখৃষ্টের বাণীর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া, বিভিন্ন দেশে কিভাবে আলোড়ন তুলেছিল ,দ্বিতীয় সংখ্যায় রুশোর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন প্রাবন্ধিক।

তৃতীয় সংখ্যাটিতে প্রাবন্ধিকের মূলবক্তব্য পুরুষদের সাথে স্ত্রীজাতিও সমান অধিকার সম্পন্ন– এই তত্বটি প্রতিষ্ঠিত করাই লক্ষ্য।তাই ‘সাম্য’তে ফুটে ওঠে লেখনী, “মনুষ্যে মনুষ্যে সমানাধিকার বিশিষ্ট ইহাই সাম্যনীতি”। ‘সাম্য’ প্রবন্ধে তৃতীয় অধ্যায়ে বঙ্কিমচন্দ্র বেশ কতকগুলি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন সুচারুভাবে যা অতিমাত্রায় বাস্তবসম্মত ছিল সেইসময়ে-

প্রথম বৈষম্য, স্ত্রী-পুরুষের বিদ্যাশিক্ষা সম্পর্কে। দ্বিতীয় বৈষম্যটি বিধবা বিবাহ প্রসঙ্গে, তৃতীয়টি স্ত্রীজাতিকে গণ্ডী বা বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ প্রসঙ্গে। চতুর্থ বৈষম্যটি হল বহুবিবাহ প্রসঙ্গে, প্রত্যেকটি প্রসঙ্গকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছেন প্রাবন্ধিক। প্রাবন্ধিক ন্যায়সঙ্গত প্রথম প্রশ্ন প্রসঙ্গে বলেন, “পুরুষের ন্যায় স্ত্রীগণ নানাবিধ সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, দর্শন কেন শিখিবে না? মেয়েরই বা কেন ছেলেদের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এম.এ. পাশ করিবেনা?

দ্বিতীয় প্রশ্ন ‘সাম্য’ তে রাখেন, “বিধবা বিবাহ ভাল কি মন্দ, এটি স্বতন্ত্র কথা। তাহা বিবেচনার স্থলএ নহে। ** যদি পুরুষ, পত্নী বিয়োগের পর পূর্ণবার দার-পরিগ্রহে অধিকারী হয় ,-তবে ‘সাম্যনীতি’র ফলে স্ত্রী ,পতি বিয়োগের পর অবশ্য ইচ্ছা করিলে পুনর্বার পতিগ্রহনে অধিকারিণী। যদি পুরুষ পুনর্বিবাহে অধিকারী হয় তবে স্ত্রী অধিকারিণী, কিন্তু পুরুষেরই কি স্ত্রী- বিয়োগন্তে দ্বিতীয়বার বিবাহ উচিত?” তৃতীয় বৈষম্য প্রসঙ্গে, “মনুষ্যজাতি মধ্যে কাহারই বহুবিবাহে অধিকার নীতিসঙ্গত হইতে পারেনা।” – বৈষম্যদূর করে নারী পুরুষে সাম্য প্রতিষ্ঠা যে খুব গুরুত্বপূর্ণ তা বলেন। “আমাদের দেশীয় স্ত্রী-গণের দশা বড়ই শোচনীয় – ইহার প্রতিকার জন্য কে কি করিয়াছেন?”

রচনাসূত্র (Reference): প্রথম পর্বে দেওয়া আছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular