Homeএখন খবরক্রান্তিকালের মনীষা- ১২|| অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

ক্রান্তিকালের মনীষা- ১২|| অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

রমেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী: বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার পথিকৃৎ                                                                                অনিন্দিতা মাইতি নন্দী

উনবিংশ শতকে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে একঝাঁক প্রতিভা মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। রামকমল সেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত প্রমুখেরা সময়ের সাথে-সাথে বিজ্ঞানের গণমুখীকরণ আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। এনাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতে বিজ্ঞানের নবজাগরণ। এই সময়েই বাংলা তথা ভারতের ভাগ্যাকাশে উদিত হলেন এক নক্ষত্র যিনি সর্বপ্রথম হৃদয় থেকে উপলব্ধি করলেন ,বাঙ্গালীকে বিজ্ঞানমুখী, বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু করতে হলে, সবার আগে মাতৃভাষায় বিজ্ঞানকে উপস্থাপন করতে হবে।
বাংলাভাষায় বিজ্ঞান-জনপ্রিয়করণের সেই রূপকার পথিকৃত হলেন আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।মানুষকে বিজ্ঞানমনষ্ক করে তুলতে হলে এবং বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে হলে প্রথম প্রয়োজন ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’–এই হৃদয় অনুভুতি থেকে তিনি আজীবন নিষ্ঠার সাথে, প্রচেষ্টায় এবং কর্মতৎপরতায় একজন প্রকৃত বিজ্ঞানবার্তাবাহক হিসাবে কাজ করে গেছেন।

রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, ১৮৬৪ সালে ২০শে আগস্ট মুর্শিদাবাদের ‘কান্দি’ মহকুমার জেমো-গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসাবে একমাত্র এফ. এ. পরীক্ষা ব্যতীত সমস্ত পরীক্ষায় প্রথমস্থান অর্জন করেছিলেন।
অধ্যাপক পেডলার রামেন্দ্রসুন্দরের বি.এ. পরীক্ষায় রসায়নবিদ্যার খাতা দেখে অভিভূত হয়ে বলেন, “আমি এ যাবৎ যত রসায়নের কাগজ দেখিয়াছি তন্মধ্যে ওই Out and out of the best.” আবার এম.এ. পরীক্ষায় বিজ্ঞানশাস্ত্রে তিনি প্রথমস্থান অর্জন করে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।পরের বছরই অন্যতম কৃতিত্ব ‘প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ’ ছাত্রবৃত্তি লাভ করেন। অত্যন্ত মেধাবী এই কৃতি ছাত্রের উদ্দেশ্যে পরীক্ষকগণ মন্তব্য করেন, “The candidate who took up Physics and Chemistry is perhaps the best student that has as yet taken up these subjects at this examinations” কেবলমাত্র মেধার স্বীকৃতি নয় এই বাক্য গুলি, যেন এক বিজ্ঞান-সেবকের প্রজ্জ্বলিত-প্রজ্ঞার সূচনা নির্দেশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষ করার পর, মনোনিবেশ করেন প্রেসিডেন্সি কলেজের গবেষণাগারে।আবার আত্মীয়স্বজনের আবদারে আইনের পাঠ শেষ করেন, কিন্তু আইনকে পেশা হিসাবে গ্রহণের আগ্রহ না থাকায়, আইন পরীক্ষায় বসেননি রামেন্দ্রসুন্দর। শিক্ষাবিভাগের লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ১৮৯২ সালে রসায়নবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে রিপন কলেজে (সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) যোগদান করেন। ছাত্রমহলে প্রবল-জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার পদ্ধতিকে প্রয়োগ না করে সম্পূর্ণ নতুন-আঙ্গিকে পড়ানোর পক্ষপাতী ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা-প্রয়োগ শুরু করেছিলেন; বিভিন্ন পদার্থের সংযোগে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করার যে ব্যবহারিক পরীক্ষা তা ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তোলে,- বিজ্ঞানমুখী হওয়ায়।

অধ্যাপক হিসাবে তিনি প্রথম অনুভব করেন বিজ্ঞানের দুরূহ বিষয়গুলিকে ছাত্রস্বার্থে বাংলায় লেখার প্রয়োজনীয়তা। বিজ্ঞানকে জনগণমুখী করে তোলার জন্য বাংলাভাষাকেই মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করেন। তাঁর তীক্ষ্ণ-বিশ্লেষণ এবং সাবলীল-ভাষার ব্যবহারগুনে বিজ্ঞান, সাহিত্য ও দর্শনের ত্রিবেণী সঙ্গম ঘটিয়েছিলেন। বাংলাভাষায় বিজ্ঞান-প্রসারের জন্য ‘বিজ্ঞান-পরিভাষা’ তৈরী করার চিন্তাভাবনা আসে।
রসায়নের ছাত্র এবং শিক্ষক-অধ্যাপক, হিসাবে নানাপদার্থের ‘ইংরেজি-নাম’ নিয়ে সমস্যা দূরীকরণের জন্য তিনি সংস্কৃতসাহিত্য থেকে বাংলা-প্রতিভাষা, প্রতিশব্দ তৈরিতে কৌতুহলি হন। ‘বৈজ্ঞানিক পরিভাষা’ নামক প্রবন্ধে রামেন্দ্রসুন্দর পরিভাষা সম্বন্ধে তার মতামত ব্যক্ত করেন এবং বিজ্ঞানের পরিভাষা গঠন সম্পর্কে বলেন, “বিজ্ঞানের পরিভাষা গঠনের সময় এই কয়টি কথা মনে রাখিতে হইবে যে শব্দটি প্রয়োগ করিবে, তাহার যেন একটি সুনির্দিষ্ট বাঁধাবাঁধি, সীমাবদ্ধ স্পষ্ট তাৎপর্য থাকে। প্রত্যেকটি শব্দ একটি অর্থে ব্যবহৃত করিবে, এই শব্দটি আর দ্বিতীয় অর্থে প্রয়োগ করিবে না।এই হইল বৈজ্ঞানিক পরিভাষার মূল সুত্র।”

বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ এবং রামেন্দ্রসুন্দরের বাংলায় ‘বিজ্ঞান-পরিভাষা’ তৈরিতে দুটি পরিপূরক নাম। তাঁর কাছে মন্দির হল বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ।কলেজের অধ্যাপনার পর সাহিত্য-পরিষতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতেন।তাঁর কাছে মাতৃভাষা ছিল মাতৃদুগ্ধসম।বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ থেকে রজনীকান্ত গুপ্ত, রামেন্দ্রসুন্দরকে পরিভাষা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন।রামেন্দ্রসুন্দর তাঁর ‘বৈজ্ঞানিক পরিভাষা’ গ্রন্থে বলেন, বিজ্ঞানের ভাষার সাথে বিজ্ঞানের উন্নতিরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে- ইংরেজিভাষার সঙ্গে বাংলাভাষার নিবিড় যোগাযোগের জন্য জীববিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা থেকে কিছু ‘ইংরেজী-শব্দ’ আমাদের অবিকলভাবে বাংলাভাষাতে গ্রহণ করা প্রয়োজন।এমন কিছু ইংরেজী-শব্দ আছে যেগুলি খাঁটি বাংলা প্রতিশব্দ থাকা দরকার। তাই বলেন “Oxygen, Hydrogen, Chlorine প্রভৃতি বিশ্বব্যাপী পদার্থের কী বাংলা নাম থাকিবে না?”
তিনি সংস্কৃত-সাহিত্য থেকে বেশ কিছু পদার্থের প্রতিশব্দ আবিষ্কার করেন।যেমন ‘Mass’ এর পরিভাষা বস্তু, Lens-পরকলা, Prism-কলম, tension- টান, Wind-হাওয়া, Oxidation-দহনক্রিয়া ইত্যাদি। রামেন্দ্রসুন্দর, –সংস্কৃত, চলতি-বাংলা এবং ইংরেজী থেকে যেমন পরিভাষা শব্দসংকলন করেছেন, তেমনি অনেক নতুন শব্দও তৈরী করেছেন। ‘Tungsten’ মৌলটির নাম সংকেতকে সরাসরি বাংলায় অক্ষরান্তরিত করাই যথেষ্ট বলে মনে করতেন।

আবার ‘Oxygen’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল অম্লজান । কিন্তু ‘অম্লতা’র কারণ অনেক পদার্থের ক্ষেত্রে যে অক্সিজেন নয়, হাইড্রোজেনও হতে পারে তা বিস্তারিত ভাবে বলেন: “Oxygen শব্দের যখন সৃষ্টি হয়, তখন পন্ডিতদিগের ধারনা ছিল অম্ল পদার্থমাত্রেই ঐ বায়ু বর্তমান থাকে, অর্থাৎ ঐ বায়ুর বিদ্যমান তাই পদার্থের অম্লতার কারণ, কিন্তু পরে জানা গিয়াছে, এমন অনেক তীব্র-অম্লপদার্থ বিদ্যমান আছে, যাহাতে Oxygen একেবারেই নাই, এমনকি অম্লতার কারণ Hydrogen—- সেইরূপ Oxygen অম্লজনক পদার্থ না বুঝাইয়া এমন কোন পদার্থকে বুঝায় যাহার সহিত অম্লতার কোন সম্পর্ক না থাকিতেও পারে”।
রামেন্দ্রসুন্দরের আগে যাঁরা লিখতেন, সেই লেখকেরা মনে করতেন বিজ্ঞান হল কতকগুলি তত্ত্ব এবং তথ্যের সংমিশ্রণ। কিন্তু আশ্চর্য তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ‘বিজ্ঞান’কে কেবলমাত্র ‘তথ্য ও তত্ত্ব’র রসদবন্দী না করে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে ‘বিজ্ঞান’কে উপস্থিত করলেন জনগণ-সম্মুখে।কঠোর বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক বিষয়বস্তুগুলিকে অত্যন্ত সহজ- সরল ,প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা ছিল। বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি বিজ্ঞানের জনপ্রিয়করনের জন্য সরল সহজভাবে বক্তব্য পেশ করতেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানপ্রসার লক্ষ্যে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক-প্রবন্ধ, তথ্যসমৃদ্ধ অসংখ্য বিজ্ঞান-গ্রন্থাবলি এবং সমসাময়িক পত্র-পত্রিকাগুলিতে লেখনীর মধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন আজীবন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলি ‘বিজ্ঞান-বিষয়ক’ প্রবন্ধাবলী-সংকলন, চরিতকথা, বিচিত্রজগৎ, জগৎ- কথা, জগদানন্দ রায় ও জিজ্ঞাসা ইত্যাদি।

‘বিচিত্রজগৎ’ এর প্রবন্ধগুলি হল ‘জড়- জগৎ’, ‘বৈজ্ঞানিকের আকাশ’, ‘প্রাণময় জগৎ’, ‘প্রজ্ঞার জয়’।‘জগৎ কথা’ গ্রন্থটিতে অদৃশ্য আলোক, তড়িত্‍ চুম্বক, শব্দ, আলোক, অবেক্ষণ ও পরীক্ষণ ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক -প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।‘বৈজ্ঞানিকের আকাশ’ প্রবন্ধে ,– আকাশবিজ্ঞান নিয়ে সুদীর্ঘ ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা রয়েছে।সৃষ্টির বিকাশ প্রসঙ্গে তিনি ‘creation এবং evolution তত্ত্ব ’র প্রয়োগমূলক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ‘প্রাণময় জগৎ’ প্রবন্ধটিতে Vital force, Physical force, chemical force, mechanical force ইত্যাদি নিয়ে আকর্ষণীয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
‘অবেক্ষণ ও পরীক্ষণ’ একটি অন্যতম বিজ্ঞান-সম্বলিত প্রবন্ধ যেখানে— ‘পর্যবেক্ষন, পরীক্ষণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণ’ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রাথমিক রীতি নিয়ে সুদীর্ঘ আলোকপাত করেন। শব্দবিজ্ঞান নিয়ে বিশ্লেষণমূলক বিজ্ঞানভিত্তিক মতামত ‘শব্দ’ প্রবন্ধটিতে জ্ঞাপন করেন। শব্দ-তরঙ্গের প্রবাহ বা প্রবহমান বাতাসের ঢেউ কল্লোলের উপরে শব্দতরঙ্গের আঘাতে কিভাবে শব্দের গতি প্রবাহিত হয়, একইভাবে ‘আলোক’ প্রবন্ধে ,আলোর-গতি, আলোর -স্বরূপ, অদৃশ্য-আলোক ইত্যাদি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক আলোচনা করেছেন।
রামেন্দ্রসুন্দর যখন এইধরনের বৈজ্ঞানিক-প্রবন্ধ বাংলা ভাষাতে লেখেন সেইসময়ে বাংলাভাষায় সহজ সরলভাবে পাঠকবর্গের কাছে বৈজ্ঞানিক সুত্র, ধারনা বা আলোচনা জনপ্রিয়করনের জন্য তেমন কোন গ্রন্থই ছিল না।তাঁর লেখার মধ্যে জড়-বিজ্ঞান, ধাতবপদার্থ, প্রকৃতি, গ্রহ, নক্ষত্র ,পদার্থবিদ্যা, ভূগোল, বিজ্ঞানকথাই মূলত স্থান পেয়েছে। তাঁর প্রথম-প্রবন্ধ ,‘মহাশক্তি’তে উল্লেখ করেন “বিশ্বে এই অনন্ত-বৈচিত্র যাহা কিছু নক্ষত্র, সূর্য, গ্রহে, উপগ্রহে, , পৃথিবীর ইতিহাসে, জীব-শরীরের গঠন, মানব-মনের বিকাশে, সমাজে শরীরের বিবর্তনে যেখানে যা কিছু দেখা যায়, সে সমস্তুই গতি,– জড়ের উপর শক্তির ক্রিয়ায় উৎপন্ন।“

‘জ্ঞানের সীমানা’ প্রবন্ধে তিনি প্রকৃতির কাছে আত্ম নিবেদন করেন।‘পরমাণু’ প্রবন্ধে তিনি পাঠকদের অনু -পরমানু সহজ বাখ্যা দেন। গননা ও পরিমাণ নিয়ে অসাধারণ ব্যাখ্যা দেন – “পার্থিব দ্রব্যের দুটি উপায় আছে। এক ‘গননা’,অপরটি মাপা।” একাধিকবার রামেন্দ্রসুন্দরকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞান-বিষয়ে বক্তব্য দেবার আমন্ত্রন জানানো হলে তিনি শর্ত আরোপ করেন ,বাংলাভাষাতেই বিজ্ঞান- বিষয়ক বক্তব্য রাখবেন। এই প্রসঙ্গে বলেন, “অধ্যাপকের আসনে বসিয়া বাংলাভাষায় অধ্যাপনা যদি আপনারা অপরাধ বলিয়া গণ্য করেন তাহা হইলে আমার মত অপরাধী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধ্যাপক সঙ্ঘ’ মধ্যে খুঁজিয়া মিলিবে না।”

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রামেন্দ্রসুন্দর সম্পর্কে লেখেন, “তুমি বিজ্ঞানকে স্বর্গ থেকে মর্ত্তে নামাইয়া আনিয়াছ।” আচার্য ত্রিবেদীকে ‘সাহিত্য’ পত্রিকা সম্পাদক সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সম্মান জানান দর্শনের ‘গঙ্গা’, বিজ্ঞানের ‘সরস্বতী’ এবং সাহিত্যের ‘যমুনা’ সম্বোধনে। রসায়নশাস্ত্রের মত পদার্থবিদ্যাতেও পরিভাষা-প্রচলন প্রয়োজন, তাই পদার্থবিদ্যাতে কিছু পরিভাষা প্রচলন করেন Conduction Phenomenon of conduction of electricity = তাড়িত পরিচালন ব্যাপার, Conductance Amount of electricity conducted = তাড়িতের পরিমাণ (এখানে ‘তাড়িত’ মানে Electricity)।
রামেন্দ্রসুন্দরের বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্য ছিল মূলত প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞান সাধনার মুলসার মাতৃভাষার মাধ্যমে সাধারণ পাঠকের কাছে পৌছানো এবং বিজ্ঞানের চেতনার প্রসার তথা বিজ্ঞান-জনপ্রিয়করণ। তাঁর কর্মসাধনার প্রতি সম্মানজ্ঞাপন করে ‘বিশ্বকবি’ রামেন্দ্রসুন্দরকে চিঠিতে লেখেন, “আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে বলিলে কম বলা হয় ,আপনার প্রতি আমার প্রীতি গভীর।” জ্ঞানী, প্রখর-মনীষা ও বিজ্ঞাননিষ্ঠ এই মানুষটিকে বিশ্বকবি তাই অন্তরের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন। নোবেলপ্রাপ্তির আগে বিশ্বকবিকে কলকাতার টাউন-হলে সম্বর্ধনা-জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে, বিশ্বকবি তাঁর স্বহস্তে লেখা, একখানি অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন, ‘রামেন্দ্রসুন্দর’কে নিবেদন করে:
অভিনন্দন-পত্রে লেখেন বিশ্বকবি:
“হে মাতৃভূমির প্রিয়-পুত্র, আমি তোমাকে সাদর অভিবাদন করিতেছি। তোমার হৃদয় সুন্দর, তোমার বাক্য সুন্দর, তোমার হাস্য সুন্দর, হে রামেন্দ্রসুন্দর, আমি তোমাকে সাদরে অভিনন্দন করিতেছি।”

রচনাসূত্র (Reference):
১)বিজ্ঞান প্রচারকও রামেন্দ্র সুন্দর, শঙ্কর কুমার সাধুখা (এ যুগের কিশোর ভারতী)
২)বিজ্ঞান বার্তা বাহক আচার্য রামেন্দ্র সুন্দর, শেখ সলেমান (এ যুগের কিশোর ভারতী)
৩)বাংলার নবজাগরণে বিজ্ঞান চেতনা,অসীম কুমার মুখপাধ্যায় (বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ)
৪)বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী, সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঙালীর বিজ্ঞানচর্চা)
৫)রামেন্দ্র রচনা সংগ্রহ, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় (বঙ্গীয় সাহিতী পরিষদ)

RELATED ARTICLES

Most Popular