Homeএখন খবরনিওন আলোর ঠিকানা খুঁজছে নয়নের প্রতিমারা, খড়গপুর কারখানায় ১০কারিগর নিয়ে অন্ধকার যাপন...

নিওন আলোর ঠিকানা খুঁজছে নয়নের প্রতিমারা, খড়গপুর কারখানায় ১০কারিগর নিয়ে অন্ধকার যাপন শিল্পীর

নিজস্ব সংবাদদাতা: কালের কোয়ারেন্টাইনে গণেশ, বিশ্বকর্মা, দুর্গা, লক্ষী, কালী ও কার্ত্তিক প্রতিমার সারি। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে সূচীর ক্যালেন্ডার ধরে এক একা করে বানানো। ঠিক যখনটা যাঁর আরাধনা! এ মূর্তি যাওয়ার কথা খড়গপুর, মেদিনীপুর ছাড়াও পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এমনকি মুম্বাই , ভূপালেও। বরাত খুললে উড়ানের ডানা মেলে কানাডা, মালয়েশিয়া, যেমনটা আগেও গেছে। কিন্তু এখন সে সবই যেন অতীত। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর শহরের খরিদার কারখানায় এখন শুধুই অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারে মুখ ঢেকে রয়েছে ১৫টি দুর্গা, ২৫টি গণেশ, ১০০কালী, ৫০টি কার্ত্তিক, লক্ষী আরও কতশত প্রতিমা। ঝলমলে প্যান্ডেলে নিওন আলোর ঠিকানা খুঁজছে তাঁরা, খুঁজছেন শিল্পী নয়ন পাল।

গতবছর ৯লাখ টাকা লোন নিয়ে তৈরি করেছিলেন প্রতিমা সে লোনের কিছুটা এখনও শোধ করা বাকি, তারই মধ্যে এ মরশুম চলে এসছে সুতরাং আরও লোন, সব মিলিয়ে ১৫লাখ টাকার দেনা মাথার ওপরে। হিসাব ছিল বাড়তি প্রতিমা তৈরি করে কড়ায় ক্রান্তিতে সেই লোন শোধ করে কিছুটা সাশ্রয়ের মুখ দেখা যাবে। সেই মত আসছিল অর্ডারও, উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল পরিবারের মুখ কিন্তু করোনার মার ভেঙে দিল বুকের পাঁজর আর কোমরের পাঁজা। উঠে দাঁড়ানোর সিঁড়ি কেড়ে নিল লকডাউন।

কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন গত বছরের ডিসেম্বরেই। যত আগে প্রতিমা শুকানো যায় ফিনিশিংয়ের সুবিধা ততই। জানুয়ারিতেই আসতে শুরু করে অর্ডার। ভরসা করে ফের লোন নিয়ে ফেলেন নয়ন। ৭ জন নদিয়ার, ৩জন বোলপুরের আর স্থানীয় ২জন কারিগর আর সহায়ক নিয়ে কাজ শুরু হয়ে যায় জোর কদমে। খড়গপুরের কারখানায় দিনে রাতে লাগাতার কাজ কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন। স্থানীয় ২জনকে বাদ দিলে ১০জনই এখন তাঁর ঘরে। লকডাউনে মাল সরবরাহ নেই তাই কাজ বন্ধ। পরিবারের অন্ন সংকট কিন্তু ফেলবেন কাকে ? অকালের অন্নদাতারা আজ আকালের সময় তারই ঘরে, অন্নের আশায়।

লকডাউন কেটে যাবে, করোনা মুক্ত হবে দেশ কিন্তু জাঁকজমকের পুজো হবে কী আর ? কর্মহীন, উপার্জন হীন, অন্নহীন মানুষ কবে ঘুরে দাঁড়াবেন যে উদ্বৃত্ত দু’টো টাকায় জাঁক আর জৌলসের পুজো করবেন ! কবে ফের প্রানচঞ্চল হবে মানুষ, হাসবে, খেলবে, গান করবে আর আনন্দে তৈরি করবেন গনউৎসবের প্রাঙ্গন? কবে নিওনের আলো ঝলমল করবে মণ্ডপে মণ্ডপে ! কারখানার অন্ধকারে নিজেরই তৈরি করা সার সার প্রতিমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সেই অঙ্ক কষেন খড়গপুরের শিল্পী। নবান্নের প্রায় গা ঘেঁষেই কুমোরটুলি, সেখানকার শিল্পীদের কান্না সহজেই পৌঁছে যায় রাজ দরবারে কিন্তু ১০০কিলোমিটার দুরের খড়গপুর আর তার এক বিপন্ন শিল্পী নয়ন পাল, তাঁর কান্না কী কড়া নাড়তে পারবে নবান্নের দরজায় ?

RELATED ARTICLES

Most Popular