Homeএখন খবরমৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে এবার সুস্মিতা-অমিত দের পাশে মেদিনীপুর ছাত্র...

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে এবার সুস্মিতা-অমিত দের পাশে মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৪ সালে লড়াইটা শুরু হয়েছিল, চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারতে মারতেই হঠাৎই একটা ভাবনা, না, মরতে দেওয়া যাবেনা। বাঁচাতেই হবে। ছেলে গুলোর কেউ কলেজে পড়ে, কেউ পড়া শেষ করে চাকরি খুঁজছে আর কেউ চাকরি পেয়েছে কিন্তু সবারই মনে বেঁচে আছে ছাত্র, যেমন আজও বেঁচে আছে কিংবা বাঁচিয়ে রেখেছে। সেদিন খবর পেয়েছিল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ছাত্র সুখেন্দু ভক্তার ক্যান্সার, টাকার খুব দরকার। চার পাঁচ দিন রাস্তায় নেমে দিন রাত এক করে স্রেফ কৌটা নাড়িয়েই তুলে আনা ২লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।

তারপর একে একে মৌমিতা মান্না, অনির্বাণ ঘোষ, সঞ্জীব ভূঞ্যা, মলয় ঘোষ, অপু চক্রবর্তী,তাপস শাসমল, আক্রম শেখ, রজত শীট, প্রিয়শ্রী জানা। কারও ক্যান্সার, কারও কিডনি প্রতিস্থাপন। ২লাখ ৩০হাজার, ১লাখ, ৫০হাজার যাকে যতটা বেশি দেওয়া যায়। সেই অসংগঠিত লড়াই এখন অনেক বেশি সংগঠিত। ততদিনে কয়েকজন থেকে অনেকজন আর পড়ুয়াদের জন্য একটা আপাদমস্তক সংগঠন, নাম ‘মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ।’ এবার সেই মেদিনীপুর ছাত্র সমাজের লড়াই শুরু দরিদ্র পরিবারের দুই সন্তান বাঁকুড়া জেলার ক্যান্সার আক্রান্ত সুস্মিতা লোহার ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত অমিত দাসের চিকিৎসার জন্য।

বাঁকুড়া জেলার কনিয়ারী গ্রামের মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের নার্সিং পাঠরতা সুস্মিতা লোহারের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য কলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজন ছিলো চার লাখ টাকা। অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার পার্শ্ববর্তী সিদ্ধা গ্রামের বি.এড পাঠরত পিতৃহারা অমিত দাসের দুটো কিডনিই বিকল। ডায়ালিসিস,ঔষধপত্র ও অন্যান্য চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন।

আর্থিক অনটনের কারণে দুই দুঃস্থ পরিবারের পক্ষে সেই অর্থের জোগাড় সম্ভবপরও ছিলো না। সুস্মিতার তৎকালীন অস্ত্রোপচার ও অমিতের চিকিৎসার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মেদিনীপুর ছাত্রসমাজের মানবিক আবেদনে অসংখ্য মানুষ এগিয়ে আসেন ও আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। সংগৃহিত অর্থ তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয় মেদিনীপুর ছাত্রসমাজের সদস্য-সদস্যারা। বর্তমানে সুস্মিতা লোহারের অপারেশন ভালোভাবেই সম্পূর্ণ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। এখন ভালো আছে,সুস্থ আছে।
মেদিনীপুর ছাত্রসমাজের সভাপতি কৃষ্ণগোপাল চক্রবর্ত্তী বলেন,”বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পথে না নেমে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে আমরা যে বিপুল পরিমান অর্থ সুস্মিতা ও অমিতের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি, সকল শুভানুধ্যায়ী সহৃদয় মানুষজনের নিকট আমরা কৃতজ্ঞ।”

গত ৬বছরে ১০জন পড়ুয়ার জন্য এই লড়াই চালিয়ে গেছে মেদিনীপুর ছাত্র সমাজ। ছ’জনকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে মৃত্যুর মুখ থেকে। চারজনকে ফেরানো যায়নি কিন্তু তাঁদেরও বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চলছে। তাঁদের নামে স্থায়ী তহবিল গড়ে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ অথবা উদ্যান গড়ে শিশুদের বিনোদনের জায়গা করে দেওয়ার কাজ চলছে।
মেদিনীপুর ছাত্র সমাজের কোষাধ্যক্ষ কৌশিক কঁচ জানালেন,
“কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য প্রিয়শ্রী জানাকে ১লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর কিছুদিন পর ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার মৃত্যু হয় তাঁর। তাই এবছর ওনার পরিবারের মতামত নিয়ে তাদের উপস্থিতিতে পিন্ডরুই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাতে প্রিয়শ্রী স্মৃতি পুরস্কার হিসেবে ২০ হাজার টাকা তুলে দিই। যার সুদের অর্থ থেকে প্রতিবছর দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাসামগ্রী তুলে দেওয়া হবে ও আমাদের প্রিয়শ্রী বেঁচে থাকবে আজীবন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে।” এমন লড়াই যারা লড়ছে তাদের হাত থেকে ছাত্রছাত্রীদের কেড়ে নেবে কে?

RELATED ARTICLES

Most Popular