Homeএখন খবরদুই বিশিষ্ট চিকিৎসকেরই ডিগ্রি জালের অভিযোগ, কাদের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছে মেদিনীপুর? ...

দুই বিশিষ্ট চিকিৎসকেরই ডিগ্রি জালের অভিযোগ, কাদের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছে মেদিনীপুর? কার কার ডিগ্রি ঠিকঠাক আছে

বিশেষ সংবাদদাতা: আপনি যখন আপনার শিশুকে নিয়ে একজন এম.ডির কাছে যাচ্ছেন তখন আপনি এটাই জেনে যাচ্ছেন যে ওই চিকিৎসক একজন এম.ডি। ওই চিকিৎসক সাধারন এম.বি.বিএস নন। উনি একজন বিশেষজ্ঞ এবং যে কারনে আপনি মনে করছেন আপনার শিশু ওই চিকিৎসকের কাছে সুরক্ষিত। আপনি তার জন্য অতিরিক্ত পয়সা দিচ্ছেন। কিন্তু যদি জানা যায় যে তিনি এম.ডি নন। তা’হলে? একজন এমবিবিএস ডাক্তার নিজেকে এম.ডি বলে চালিয়ে দেওয়া আর একজন আর.এম.পির(হাতুড়ে)নিজেকে চিকিৎসক বলে চালিয়ে দেওয়ার মধ্যে খুব ফারাক আছে কী?

হ্যাঁ, এবার ডিগ্রি জালিয়াতির এই অভিযোগ এবার উঠল খোদ মেদিনীপুর শহরে। তাও একজন নয়, দু’দুজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ভাবা যায়! সেই মেদিনীপুর শহর যাকে সেরা চিকিৎসকদের শহর বলে সারা জেলা এমনকি জেলার বাইরের মানুষেরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে একবার ‘ভগবান’কে দেখানোর জন্য?
কী অভিযোগ উঠে এসেছে? অভিযোগ দুই চিকিৎসকের কোনও এম.ডি ডিগ্রি না থাকলেও তারা দাবি করেছে যে তাদের এই ডিগ্রি আছে এবং তাদের প্রেসক্রিপশনের যে প্যাড আছে তাতেও নিজেদের উল্লেখ করেছেন এম.ডি বলেই।

এনিয়ে অভিযোগ আসার পর মেদিনীপুর শহরের এক নার্সিং হোমের মালিক ও দুই চিকিৎসক অভিযোগ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, নবান্ন, স্বাস্থ্য দফতর এমনকি ‘ দিদিকে বলো ‘ তেও। তথ্য জানার অধিকার আইন অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে সন্ধ্যা মন্ডল ধাড়া ও শশীভূষণ পান্ডে নামে দুই চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিল জানিয়েছে যে ওই দুই চিকিৎসকে র এম বি বি এস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কোনও রকম ডিগ্রি নেই। মেদিনীপুর শহরে দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসা করছেন ও সকলের কাছে পরিচিত এমন দুই চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় জেলার চিকিৎসক মহলে।

মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্র নগরে বসবাস করেন ও সেখানেই ২০০৩ সাল থেকে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে প্রাকটিস করছেন তিনি। যুক্ত আছেন রবীন্দ্র নগরে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে । তার স্বামীও একজন প্রতিষ্ঠিত স্ত্রী রোগ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ।
অন্যদিকে শশীভূষণ পান্ডে একজন রেডিও লজিস্ট। তারও এম ডি ডিগ্রি আছে বলে তিনি দাবি করেন । তিনি যুক্ত মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ।

এই দুই চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর শহরের এক নার্সিং হোমের মালিক ও দুই চিকিৎসক অভিযোগ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে । তথ্য জানা অধিকার আইনে ওই দুই চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিল জানিয়েছে যে, ১৯৯৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বি বি এস ডিগ্রি লাভ করেন সন্ধ্যা মন্ডল ধাড়া । এর বাইরে তার অন্য কোন ডিগ্রি নেই। আর শশীভূষণ পান্ডে ১৯৯৭ সালে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম বি বি এস ডিগ্রি লাভ করেন । ২০০১সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.এন.আর.ডি ডিগ্রি লাভ করেন তবে তারও কোনও এম ডি ডিগ্রি নেই।

এম ডি ডিগ্রি না থাকলেও কেন এই দুই চিকিৎসক তাদের সেই ডিগ্রি আছে বলে দাবি করে ব্যবহার করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে র মালিক সমর দাস। তার দাবি ওই দুই চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একজন তাদের কাছে জানালে তারা রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানান ।
। যদিও সন্ধ্যা মন্ডল ধাড়া দাবি করেন যে তিনি কলকাতার শিশুমঙ্গল হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা নিয়ে একটি ডিগ্রি লাভ করেন । আর সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে এম ডি করেছেন । এই সঙ্গে তিনি বলেন যে রাজ্যের যে মেডিক্যাল কাউন্সিল আছে তারা বিদেশ থেকে করা কোনও ডিগ্রি কে মান্যতা দেয় না

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মন্ডল জানিয়েছেন যে তাদের কাছে এই দুই চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে । তারা সেটা মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা না’হয় সামনে এল কিন্তু আরও যদি থাকে? আপনি কী চিকিৎসা করাতে গিয়ে বলবেন, ‘ ডাক্তারবাবু আপনার ডিগ্রির কাগজটা একবার দেখি?’

RELATED ARTICLES

Most Popular