Homeএখন খবরদাদা, আমরা নেগেটিভ! চিৎকার করে কাঁদছে পরিবার, শুনেছেনা হৃদয়হীন মেদিনীপুর শহর

দাদা, আমরা নেগেটিভ! চিৎকার করে কাঁদছে পরিবার, শুনেছেনা হৃদয়হীন মেদিনীপুর শহর

নিজস্ব সংবাদদাতা: “দাদা, আমরা নেগেটিভ! এই দেখুন কাগজ।” চিৎকার করে বলছে পরিবার কিন্তু শুনছেনা হৃদয়হীন শহর! যে সে শহর নয়, শহরের নাম মেদিনীপুর। যে শহরে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক আর শিক্ষকের ভিড়। যে শহরে উকিল,জজ, ম্যাজিস্ট্রেট আর বড় বড় আমলারা বসতবাড়ি তৈরি করে থাকেন। গ্রাম থেকে মানুষ ছেলে মেয়েকে মেদিনীপুরের স্কুলে ভর্তি করে ‘মানুষ’ হবে বলে! সেই শহর মেডিক্যাল কলেজের সার্টিফিকেট পড়তে পারেনা যেখানে দেখা যায় পরিবারের সমস্ত সদস্যই নেগেটিভ।

এমনকি নেগেটিভ হয়েই মৃত্যু হয়েছে পরিবারের কর্তার। তবুও বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে পরিবারকে কারন পরিবারের কর্তার করোনা ধরা পড়েছিল।
তিন তিনটে প্রথাগত কলেজ, খান কুড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়, দু’দুটি মেডিক্যাল কলেজ, ল’কলেজ, প্যারা মেডিক্যাল কলেজও শিক্ষিত করতে পারেনি শহরটাকে! পরিবারের একজনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল এই অপরাধেই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে দেওয়া হয়েছে নেগেটিভ হয়ে থাকা পুরো পরিবারকেই।

ঘটনা মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়ায়, ভুক্তভোগী রজক পরিবার। দিন কয়েক আগেই জ্বর কাশি শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন রঞ্জিত রজক। করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসার পরেই আগষ্ট মাসের ২৪ তারিখ তাকে স্থানান্তরিত করা হয় শালবনী কোভিড হাসপাতালে। কিন্তু চারদিনের মাথায় ২৯ তারিখ তার কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর করোনামুক্ত ওই রোগীকে করে তাকে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেই ৩১ তারিখ ভোরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় রঞ্জিত রজকের। মৃত ব্যাক্তি পুনরায় করোনা সংক্রমিত হতে পারে এই সন্দেহেই মৃতের লালারস সংগ্রহ করে কোলকাতায় পাঠানো হয়েছে করোনা পরীক্ষার জন্য।

এদিকে রঞ্জিতের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে জানার পরই তার বাড়িতে যাওয়া আসার রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে কিছু মানুষ। অথচ রঞ্জিতের রিপোর্ট আসার পরই পরিবারের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, সবাই নেগেটিভ। রঞ্জিত হাসপাতালে। তাহলে বাকি পরিবারের। কী দোষ? তাঁদের কী দোষ? পরিবারটি বাইরে কোনোও প্রয়োজনে যেতে পারছেনা। বাজার, ঘাট সব বন্ধ। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য আনা যাচ্ছেনা। ফলে মহাসঙ্কটে পরিবার।

রঞ্জিতের পরিবার যখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এই নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার শিকার তখন আরেক সমস্যা প্রসানিক। করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ তা দেখার জন্য মৃতদেহ ছাড়া হয়নি। কিন্তু এসএসকেএম থেকে রিপোর্ট এসে পৌঁছায়নি ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও। মেদিনীপুর মেডিক্যালের ভাইরোলজি ল্যাব বন্ধ বলে নমুনা যাচ্ছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসেনি। মৃত্যুর এতদিন পরেও মৃতের মুখই দেখতে পায়নি পরিবার। সেই রিপোর্ট না আসা অবধি নাকি এরকমই থাকতে হবে এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। ফলে, দাদা, আমরা সবাই নেগেটিভ বলেও রেহাই মিলছেনা। রিপোর্ট দেখতেই চাইছেনা অন্ধ শহর।

RELATED ARTICLES

Most Popular