Homeএখন খবরমেদিনীপুর শহরে শ্যুট আউট! ছাত্রের গলার নিচ দিয়েই এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল...

মেদিনীপুর শহরে শ্যুট আউট! ছাত্রের গলার নিচ দিয়েই এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল বুলেট

নিজস্ব সংবাদদাতা: রাত প্রায় সাড়ে ৯টা, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পুরানো জরুরি বিভাগের সামনে বসে এক কিশোর, মৃত্যু যার গলা ছুঁতে ছুঁতে থেকে গেছে। কন্ঠনলি থেকে ইঞ্চি খানেক দূরে আর হৃৎপিন্ড থেকে তিন ইঞ্চি দূরত্ব দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে বুলেট। পরনের জামা ভিজিয়ে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। কোনও এক অজ্ঞাত মানুষ বাড়ি থেকে ৭৫০মিটার দুরে মেডিক্যাল কলেজের গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে তাকে। বাকি ১০০মিটার রাস্তা হেঁটেই এসেছে কিশোর। সে বুঝতে পেরেছে হাসপাতালে যেতেই হবে তাকে না’হলে মারা পড়বে সে।

ছেলেটা তার মা কে খুঁজছে, মা হাসপাতালে আয়ার কাজ করে। গুলিটা লাগার পরেই নিজের মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেছিল, অন্ধকারে খুঁজে পাওয়া যায়নি বা খোঁজার সময় পাওয়া যায়নি। জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে একটা কাউকে খুঁজছিল ছেলেটা, একটা মোবাইল, মা কে খবর দিতে হবে। অনেকেই এড়িয়ে গেছে শেষে একজন মোবাইল দেয়। সেই মোবাইল থেকেই মা কে একটা ছোট্ট কথা জানায় ছেলেটি, মা আমার গুলি লেগেছে। মা ছুটে আসে। রাত দশটা। রাতেই অপারেশন হয়, বেঁচে যায় কিশোর কিন্তু জানিয়ে দেয় কেমন অবস্থা মেদিনীপুর শহরের, বিশেষ করে হর্ষন দীঘি এলাকা।

ঠিকই ধরেছেন, ঘটনস্থল সেই হর্ষনদীঘি মেদিনীপুর শহরের অপরাধ প্রবন জায়গার প্রায় ওপরের দিকের তালিকায় থাকা স্থান। বহুবারই সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে জায়গাটা। নিজস্ব এলাকার সমাজ বিরোধীদের মধ্যে গন্ডগোল তো আছেই পাশাপাশি এলাকার বাইরেও খুন খারাপিতে জড়িয়ে পড়ার নজির রয়েছে। কয়েকমাস আগে ধর্মার মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় জড়িয়ে গেছে যুবকের নাম। এলাকার শাসকদলের নেতা কিংবা বিরোধীদের সাথেও সমাজ বিরোধি যোগের অভিযোগ উঠেছে কয়েকবার।

১২ বছরের কিশোর ওই নবম শ্রেনীর আহত ছাত্র শুভ বেরার মা কৃষ্ণা জানিয়েছেন, নারায়নগড় এলাকার কুশবাসান হাইস্কুলের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করত ছেলে। লকডাউনে ফলে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। মাস খানেক আগে বাবা মারা গেছে শুভর। পরিকল্পনা হচ্ছিল স্থানীয় কোনও স্কুলে ভর্তি করার। সোমবার সকালে বন্ধুদের সাথে শিবের মাথায় জল ঢালতে গেছিল । দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ে এরপর রাত্রি ৮টা নাগাদ নিজের পাড়াই অদুরে প্রাইমারি স্কুলের মাঠে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছিল সে। জায়গাটা অন্ধকার। কিছুক্ষন পরেই গুলির শব্দ, লুটিয়ে পড়ে ছাত্রটি। সবাই পড়িমরি করে ছুটে পালায় শুভ। কিছুক্ষন পরে নিজেই উঠে দাঁড়ায় সে। আলোর দিকে কোনও মতে আসে। তখনই একজন বাইকে করে তাকে নিয়ে গিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের গেটে ছেড়ে দিয়ে যায়। সম্ভবতঃ পুলিশের ঝামেলার ভয়ে হাসপাতালের ভেতরে যায়নি।

কৃষ্ণা জানান, “সাথে সাথে ছুটে আসেন ডাক্তার। ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করে রক্ত বন্ধ করা হয়। এরপর এক্সরে করে দেখা যায় বুক ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গেছে পিঠ দিয়ে।” এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে কৃষ্ণার শিব রাত্রির সলতে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান মাঠে বসে থাকা অন্য গোষ্ঠীর কাউকে মারার জন্যই শ্যুট আউট করেছিল অপর গোষ্ঠীর কেউ অথবা ব্যক্তিগত শত্রুতা। মাঝখানে শুভ পড়ে গেছিল নাকি শুভকেই অন্ধকারে শত্রু ভেবে গুলি করা হয়েছিল সেটা তদন্ত স্বাপেক্ষ। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। করোনা অতিমারির মধ্যেও যে অপরাধীরা ঘুমিয়ে নেই প্রমান হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular