Homeএখন খবরবর্ষার শুরুতেই জলমগ্ন মেদিনীপুর শহরের একাংশ! পাইপে ঢুকে পড়া কচ্ছপ ধরে বনদপ্তরের...

বর্ষার শুরুতেই জলমগ্ন মেদিনীপুর শহরের একাংশ! পাইপে ঢুকে পড়া কচ্ছপ ধরে বনদপ্তরের পার্কে দিয়ে এল দুই কিশোর

নিজস্ব সংবাদদাতা: বছরের পর বছর হচ্ছেনা পৌর নির্বাচন। নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই তাই মাথা ব্যাথা নেই নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে। খালি নিয়ম করে গুনে নেওয়া পৌর কর। মানুষ কী দুর্দশায় রয়েছে তা দেখার সময় নেই পৌরসভার। ফলে আপনা হাত জগন্নাথ। নিজে পারলে কর না পারলে মর। এমনই অবস্থা মেদিনীপুর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মা, বিবেকানন্দ নগরের উত্তর অংশ। ক’দিনের এলাকা বৃষ্টিতেই জলমগ্ন এলাকা। রাস্তার জল হাপর কেটে ঘরের উঠোনে উপচে পড়ছে। আর সেই জলের সাথে সাপ, ব্যাঙ মায় কচ্ছপও ঢুকে যাচ্ছে। বুধবার এমনই একটি কচ্ছপ ধরেছিল এলাকার দুই কিশোর। বৃহস্পতিবার তারা দিয়ে এল বনদপ্তরের একটি উদ্যানে।

স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক স্নেহাশিস চৌধুরী জানালেন, ” ক’দিনের বৃষ্টিতে এতটাই জল জমেছে যে এই জল কিছুদিন দাঁড়িয়ে থাকলে ঘাস-পাতা পচে দুর্গন্ধ উঠবে। পাশাপাশি প্রাচীরগুলিও ক্ষতি হচ্ছে, যাতায়াতের রাস্তা উপচে জল ঢুকছে এদিক ওদিক। বাধ্য হয়েই আমরা কয়েকজন
প্রতিবেশী অসিত দত্ত, স্বরূপ দত্ত, সিদ্ধার্থ শাসমল, প্রকাশ বাগ, পূর্ণেন্দু মণ্ডল ইত্যাদিরা মিলে নিজেরাই জল নিকাশীর সুবিধার জন্য অস্থায়ী রাস্তা কেটে পাইপ বসিয়েছি যাতে জল দ্রুত বেরিয়ে যায়।”

স্নেহাশিস বাবু বলেন, “বুধবার দুপুরে হঠাৎ লক্ষ্য করা যায় জল বেরোনো প্রায় বন্ধ। আমার ছেলে বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের দশম শ্রেণীর ছাত্র সোমসপ্তক চৌধুরী এবং প্রতিবেশী আরেকটি ছেলে পাঁচখুরী দেশবন্ধু হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সাথী স্বপ্ননীল সামন্ত সেই পাইপে জল আটকে পড়ার কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখে ভিতরে উঁকি দিতে গিয়ে তার ভেতরে একটি অতিকায় কচ্ছপ আটকে পড়েছে। কিছুতেই বেরোতে পারছে না। এরপর আমরা ক’জন মিলে বহু সময় চেষ্টার পর কচ্ছপটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে ওই দু’জনকে সাহায্য করি।”

বুধবার দিনভর বৃষ্টি আর জামাইষষ্ঠী থাকায় কচ্ছপটিকে নিয়ে কিছু করা যায়নি। সোমসপ্তকের মা শিক্ষিকা শবরী বসুর তত্ত্বাবধানে সোমসপ্তকদের বাড়িতে থাকে।এদিকে কচ্ছপটিকে দেখতে অনেকেই ভিড় জমান। কেউ প্রস্তাব দেন নদী বা পুকুরে ছেড়ে দেবার। আবার খবর পেয়ে দু-এক জন কচ্ছপটিকে কিনতেও হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা কিশোর দুজন জানায় যে তারা মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ শিশু উদ্যানে এমন অনেক কচ্ছপকে সংরক্ষিত অবস্থায় থাকতে দেখেছে। তাই প্রায় বিলুপ্ত হতে চলা বন্যপ্রাণটি রক্ষা করতে হলে কচ্ছপটিকে অরবিন্দ শিশু উদ্যানের সংরক্ষিত স্থানে ছেড়ে দেওয়া দরকার।সেইমতো বৃহস্পতিবার সোমসপ্তকের বাবা শিক্ষক স্নেহাশিস চৌধুরী এবং স্বপ্ননীলের বাবা শিক্ষক প্রতাপ সামন্ত দুজনে মিলে বৃহস্পতিবার, অরবিন্দ শিশু উদ্যানের ছোট্ট জলাশয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে উদ্ধার হওয়া কচ্ছপটি ছেড়ে দিয়ে আসেন।

দুই কিশোরের এই পরিবেশ সচেতনতায় খুশি তাদের বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা। এই প্রয়াসে তাদের পিতামাতারা। সোমসপ্তকের বাবা-মা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের মতো পরিবেশ প্রেমী সংস্থা গুলোর সাথে যুক্ত রয়েছেন। স্বপ্ননীলের বাবা যেমন শিক্ষক তেমনই মা স্বপ্না সামন্ত একজন পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিত্ব। পরিবারের ধারা বেয়েই কিশোরদের মধ্যে গড়ে ওঠা বাস্তুতন্ত্র শিক্ষা নিশ্চিতভাবে খুশি করেছে প্রতিবেশী। কেউ কেউ অবশ্য মজা করে বলছেন পৌরসভা নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে সচেতন হলে দুই কিশোরের এমন পরিবেশ প্রেম জানাই যেতনা!

RELATED ARTICLES

Most Popular