Homeএখন খবরমেডিকেল কলেজ চত্বরেই দাঁতালকে ঘুম পাড়ালেন বন আধিকারিকরা, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মেদিনীপুর...

মেডিকেল কলেজ চত্বরেই দাঁতালকে ঘুম পাড়ালেন বন আধিকারিকরা, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মেদিনীপুর শহরবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রায় সাড়ে চার ঘন্টার টানটান লড়াই শেষ। চওড়া হাসি হাসলেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। শেষ অবধি ঘুম পাড়ানি ওষুধ গুলি করে হাতির শরীরে ঢুকিয়ে তাকে নিস্তেজ করলেন বনকর্মীরা। তারপর তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হল মেদিনীপুর বনদপ্তরের আওতায়। সেখানে দাঁতালটির অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর তাকে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং সুস্থ মনে হলে তাঁকে কোনও জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেই জানালেন বনকর্মীরা। আর শেষ পর্বটি সাঙ্গ হল সেই মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ চত্বরে যেখানে শহরের এক চতুর্থাংশ চষে বেড়ানোর ঠাঁই নিয়েছিল হাতিটি।

বনদপ্তরের কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন হাতিটিকে তাড়িয়ে আর শহর থেকে বের করার চেষ্টা না করে এখানেই ট্র্যাঙ্কুলাইজ বা ঘুম পাড়ানির গুলি করে কাবু করা হবে। কারন বনদপ্তরের আশঙ্কা ছিল যে শহরের মধ্যে দিয়ে হাতিটিকে তাড়িয়ে নিয়ে বাইরে বের করতে গেলে শহরের মধ্যে এদিক ওদিক ছুটবে হাতিটি এবং তার ফলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এমনকি জীবনহানির আশঙ্কা থাকতে পারে।

মেদিনীপুর মেডিকেল চত্বরে একটি প্রাচীর ঘেরা জায়গায় হাতিটিকে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর পুরো চত্বরটি ফাঁকা করে দেওয়া হয়। আগের ২ঘন্টা শহর জুড়ে দাপানোর পর হাতিটি ক্লান্ত ছিল। সেটি কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরই মধ্যে চলে আসেন ভেটেনার বা পশুচিকিৎসকদের একটি দল। তাঁরা হাতিটিকে পর্যবেক্ষন করে তাঁর বয়স, ওজন ইত্যাদি সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে নেন কারন তারই ওপর নির্ভর করে হাতিটিকে কতটা পরিমান ঘুম পাড়ানির ওষুধ দেওয়া হবে। বন দপ্তরের কর্তারা জানিয়েছেন ঘুম পাড়ানি ওষুধের এই ডোজ বা পরিমান নির্ধারণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ কারন ওষুধের পরিমান বেশি হয়ে গেলে হাতির মৃত্যু হতে পারে আবার কম হয়ে গেলে হাতি নিস্তেজ হওয়ার পরে পুরো শক্তি নিয়ে দাপাদাপি করবে তখন ফল হয় আরও মারাত্মক।

এরপরই বন্ধুকে সেই ঘুমপাড়ানি ফয়েল ভরে নিয়ে নিশনার পালা। জায়গাটা অন্ধকার করে দেওয়া হয়। প্রাচীর ঘেরা গেটের এপাশে আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। বন দপ্তরের কর্মী এবং হুলা পার্টির সদস্যরা এই অংশে তৈরি থাকেন মশাল ইত্যাদি নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী শরীরের গুলির আকারে ঘুমপাড়ানি ওষুধ ভর্তি ফয়েলটি শরীরে ঢুকেই ফেটে যায়। ওই ধাতব সিরিঞ্জ যখন হাতির চামড়া ভেদ করে তখন যন্ত্রনায় হাতি দৌড়াবে, ক্রুদ্ধ হয়ে উঠবে। যতক্ষন না ওষুধ কাজ করবে এবং হাতিকে নিস্তেজ করার কাজ শুরু করবে ততক্ষণ সেই যন্ত্রনায় হাতিটি মারাত্মক দাপাবে। তাই সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।

এরপরই হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়া হয়। গুলিটি লাগার পরেই আশঙ্কা মতই দাঁতালটি ক্রুদ্ধ গর্জন করেই ছুটে আসে গেটের সেই ফাঁকা অংশ দিয়ে। কিন্তু অসম্ভব দক্ষতা নিয়ে বনকর্মী আর হুলাপার্টির দল ঘিরে ফেলে হাতিটিকে। চারদিকে মশাল নিয়ে ঘুরে হাতিটিকে একটি নির্দিষ্ট সীমায় কিছুক্ষন আটকে রাখে। কিছুক্ষন দাপাদাপির পর হাতিটি ক্রমশ নিস্তেজ হতে শুরু করে এবং শেষে পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়ে দাঁতাল। হাতিটি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই হাতিকে ক্রেনে করে লরিতে তোলা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বনবিভাগের কার্যালয়ে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে বনবিভাগ, পুলিশ ও শহরের জনতা। রাত দেড়টা নাগাদ পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়।

উল্লেখ্য দাঁতালটি বৃহস্পতিবার সন্ধা গড়ানোর কিছু পরে ৬০নম্বর জাতীয় সড়কের পাশাপাশি এলাকা ধরে মেদিনীপুর শহরের হবিবপুর হয়ে বিজয় সাহার গলি ধরে শহরের ভেতরে প্রবেশ করেছে। হাতিটিকে এরপর দেখা যায় পঞ্চুর চক ও মেদিনীপুর কলেজের সামনে দিয়ে মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট মাঠে প্রবেশ করতে। ঘটনায় পঞ্চুর চক ও কলেজের সামনের জনতা হৈ চৈ শুরু করে পালাতে থাকে। এদিকে জনতার শোরগোল আর চোখ ধাঁধানো আলোয় অপরিচিত জায়গায় হাতিও দৌড়াতে থাকে প্রানপনে। এরপর হাতি কলেজিয়েট গার্লস স্কুল ধরে ঢুকে পড়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের রাস্তায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‍্যাফ ঘিরে ফেলে এলাকা। জনতাকে ঘরে ঢুকে যেতে বলা হয়। সাড়ে আটটা থেকে ৬ঘন্টার লড়াই শেষ অবধি দেড়টা নাগাদ শেষ হয়।

RELATED ARTICLES

Most Popular