Homeএখন খবরলালগড়ের কুয়োয় শাবক! মজা দেখতে আসা মানুষের সাইকেল, বাইক গুঁড়ো গুঁড়ো করে...

লালগড়ের কুয়োয় শাবক! মজা দেখতে আসা মানুষের সাইকেল, বাইক গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিল মা হাতি, বনকর্মীদের তৎপরতায় উদ্ধার হস্তি শিশু

ধুলো মাখানো হচ্ছে শাবকটিকে

পলাশ খাঁ :– ১৫ ফুট নিচে মায়ের শুঁড়ের নাগালের বাইরে কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়ে কাঁদছে হাতির শাবক। রাতভর সেই কুয়োর চার পাশে ঘুরে বেড়িয়ে চিৎকার করেছে মা হাতি। চেষ্টাও করেছে বিস্তর বাছাকে কুয়ো থেকে তোলার কিন্তু পারেনি। অপ্রশস্ত আর গভীরতায় গিয়ে নাগাল পাওয়া যায়নি শাবকের। আর সে কারণে মা হাতি আর তার এক সঙ্গি মিলে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে কুয়োর পাশেই। ভোর অবধি কুয়োকে ঘিরে তাদের অস্থির পদচারনা। মানুষ দেখলে কুয়ো থেকে সরে গিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। নিজের সন্তান যখন ঘোর বিপদে, তখন ‘হাতির পাঁকে পড়া’ র মজা দেখতে জুটে গেছিল কিছু মানুষও। কেউ কেউ হাহা হিহি করে গেছে। এরপরই ক্রুদ্ধ মা হাতি ক্ষেপে গিয়ে তাড়া করে তাদের। পড়িমরি করে তারা পালায় সাইকেল, বাইক ফেলে। ক্রুদ্ধ হাতি দুটি গুঁড়িয়ে দেয় মজা দেখতে আসা মানুষের একের পর এক বাইক আর সাইকেল। মঙ্গলবার সাত সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড়ের জঙ্গলে।

কুয়োর ভেতরে শাবক

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই লালগড়ের ঝিটকার জঙ্গলে ৩০-৩৫ টি হাতির একটি পাল রয়েছে৷ তারাই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে প্রতিদিন৷ গতকাল রাতেও এই পাল হাতিটি সখীশোল, আমডাঙ্গা প্রভৃতি গ্রামের চাষের জমিতে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে ছিল৷ সেই পাল হাতির মধ্য থেকেই একটি মা হাতি তার বাচ্চাকে আর অন্য একটি পুরুষ হাতিকে সঙ্গে নিয়ে পাল থেকে আলাদা হয়ে সখীশোলের মাঠে থেকে যায়৷ বাচ্চা হাতিটি তার মায়ের সঙ্গে খাবার সন্ধান কারতে গিয়েই মাঠের মাঝখানে থাকা একটি কুয়োতে পা পিছলেপড়ে যায়। কুয়োর মধ্যে থেকেই প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করে মায়ের কাছে সাহায্য চায়৷

মা হাতিটিও তার সন্তান কে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। সামনের দুপা কুয়োতে নামিয়ে শুঁড় বাড়িয়ে বার বার চেষ্টা করলেও সফল না হওয়াতেই সারারাত ওই কুয়োর চারিদিকে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। এদিন স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি জানতে পেরেই বনদপ্তরে জানায়৷ এদিকে হাতির বাচ্চা কুয়োতে পড়েছে এই খবর চাউর হতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি উৎসুক জনতার ভীড় জমে যায়। প্রায় হাজার খানেক মানুষের জমায়েত হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় লালগড় রেঞ্জের বনকর্মীও লালগড় থানার পুলিশ কর্মীরা।

এদিকে উৎসুক জনতাকে কুয়োর কাছাকাছি যেতে বারণ করা সত্ত্বেও কুয়োর কাছাকাছি চলে যায় জনতা। আর যখনই মানুষ কুয়োর খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছে তখনই মা হাতিটি তাড়া করে হটানোর চেষ্টা করে সবাইকে। মা হাতির এই তাড়া খেয়ে হতাহত কেউ না হলেও মা হাতির হামলা চালিয়ে তিনটি মোটর সাইকেল ও দুটি সাইকেল গুঁড়িয়ে দেয়। এরপরেই জনতাকে হটাতে আসরে নামে লালগড় থানার পুলিশ। পুলিশ ও বনদপ্তর মিলে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে এলাকা থেকে হটিয়ে তিনটি জেসিবি মেশিন দিয়ে কুয়োর চারপাশের মাটি কেটে বাচ্চা,হাতির শাবকটিকে উদ্ধার করে। আশ্চর্য্যর বিষয় এই যে উদ্ধার পর্বে দুটি হাতি বনকর্মী বা পুলিশকর্মীদের কোনও বাধাই দেয়নি। নিশ্চল হয়ে উদ্ধার কার্য দেখেছে।

উদ্ধার কার্য সম্পন্ন হওয়ার পর ফের জনতা আসে হস্তি শাবকটি দেখার জন্য কিন্তু বন আধিকারিকরা জনতাকে সতর্ক করে দেন শাবকটিকে যেন না কেউ স্পর্শ করে কারন হাতির শরীরে মানুষের ছোঁয়া লাগলে তাকে আর ফিরিয়ে নেয় না হাতিরা। তবে উদ্ধার পর্বে শাবকটির গায়ে উদ্ধারকারিদের স্পর্শ লেগেছিল বলে তাকে ধুলো কাদা মাখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে তাকে নিজেদের সাথে নিতে কোনো সমস্যা হয়নি।সন্তান কে কাছে পেয়ে তাকে নিয়ে লেজ নাড়িয়ে দুলকি চালে মা হাতি আর তার সঙ্গি মিলে ফিরে যায় জঙ্গলে৷

হাতির উদ্ধার হওয়া দেখতে এসেছিলেন ঝিটকার বাপ্পা মাহাত৷ তিনি জানান, আমরা জানতাম হাতির গায়ে মানুষ হাত দিলে তাকে আর দলে ফিরিয়ে নেয়না৷ ফলে সে দলছুট হয়ে পড়ে৷ এতে আমাদের হিতে বিপরীত হয়ে পড়ে৷ তাই উদ্ধার হওয়ার পর এই বাচ্চা হাতিটির গায়ে সাধারণ মানুষ কেউ হাত না দিয়ে নিজেদের সচেতনতার পরিচয় দিয়েছে।

কর্তব্যরত এক বনকর্মী বলেন, বাচ্চাটি যে কুয়োর মধ্যে পড়েছিল সেই কুয়োর গভীরতা ছিল পনের ফুটের মতো৷ কিন্তু কুয়োতে জল ছিল না বলেই আমরা হাতিটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে জঙ্গলে ফেরৎ পাঠাতে পেরেছি৷ জল থাকলে শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা যেতে পারত শাবকটি।

RELATED ARTICLES

Most Popular