শশাঙ্ক প্রধান: চিকিৎসক দেখাতে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক ৮২বছরের বৃদ্ধার। ঘটনায় আহত হয়ে শারীরিক যন্ত্রণার চেয়ে শতগুন মানসিক যন্ত্রনায় দগ্ধ সন্তানের হাহাকার, ‘মাকে মেরে ফেললাম আমিই।’ সোমবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার অন্তর্গত বাড়জীবন এলাকায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় আহত ওপর বাইক আরোহীর অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। তার পায়ের একটি অংশ গুঁড়িয়ে যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশায় ছুটে গিয়েছেন আত্মীয় পরিজনেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতা ওই ৮২ বছরের বৃদ্ধার নাম সুভদ্রা মুড়া। বয়স জনিত কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন বৃদ্ধা।ছেলের নাম ভক্তি মুড়া বাড়ি সবং থানারই বুড়াল গ্রাম পঞ্চায়েতের রামভদ্রপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধাকে নিজের বাইকে চাপিয়ে তেমাথানীতে চিকিৎসককে দেখানোর জন্য যাচ্ছিলেন ছেলে ভক্তি মুড়া। ভক্তিবাবুর নিজেরও বয়স ৬২ বছর। সবং বাজারে একটি ওষুধ দোকানের কর্মচারী ভক্তি বাবু এদিন সকালে মাকে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন তেমাথানীর উদ্দেশ্যে। বাড়জীবন কিষান মান্ডি থেকে ৭০০ মিটার দুরে বিপরীত দিক থেকে দুরন্তগতিতে ছুটে আসা এক বাইক চালক সরাসরি ধাক্কা মারে ভক্তিবাবুর বাইককে। আর তারপরই এই মর্মান্তিক ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মা কে নিয়ে খুবই পরিমার্জিত গতিতে সড়কের বাঁদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন ভক্তিবাবু। আচমকা ছুটে আসা প্রায় ৭০কিমি প্রতিঘন্টায় আছড়ে পড়া ওই বিপরীত দিকের বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষের অভিঘাতে সুভদ্রা মুড়া কার্যত বাইক থেকে কয়েক ফুট উঁচুতে উড়ে গিয়ে পীচের রাস্তার ওপর মুখ থুবড়ে পড়েন। মাথার খুলির কপালের অংশ ফেটে যায় বৃদ্ধার। অনুমান ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। রেহাই পাননি বিপরীত দিক থেকে আসা বাইক চালক সেক মুস্তাক নামের ওই যুবকও। দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পা গোড়ালি থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়।
স্থানীয় মানুষজন ছুটে এসে বৃদ্ধা সহ তিনজনকেই সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। মুস্তাককে সবং গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করার পর তাঁকে নিয়ে ওড়িশার কটকের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃদ্ধার ছেলে ভক্তি মুড়া সবং গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর একটাই আফসোস, ‘দুর্ঘটনায় আমি কেন মারা গেলামনা! মায়ের মৃত্যুর দায় যে চিরকাল আমাকেই বয়ে বেড়াতে হবে!” ঘটনায় শোকের ছায়া।