Homeএখন খবরপর্দা ফাঁস নন্দীগ্রাম চক্রান্তের! মেদিনীপুর শহরে চটি পুলিশের চটি ঝোলানো হল নেতা...

পর্দা ফাঁস নন্দীগ্রাম চক্রান্তের! মেদিনীপুর শহরে চটি পুলিশের চটি ঝোলানো হল নেতা আর বুদ্ধিজীবীদের ছবিতে, পুড়ল কুশপুত্তলিকা

নিজস্ব সংবাদদাতা: চটি ফেরৎ দেওয়া হল বুদ্ধিজীবীদের, ফেরৎ দেওয়া হল তাঁদেরও যাঁরা সেদিন চটি পরা পুলিশ সাজিয়ে পুলিশের মধ্যে ভিড়ে গিয়ে নন্দীগ্রামে ১৪জন খুন করেছিল বলে চ্যালেঞ্জ নিয়ে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃনমূল নেত্রী। শনিবারই সেই পর্দা ফাঁস করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের রেয়া পাড়ার সভা থেকে সরাসরি বলেছেন, ‘চটি পরা পুলিশ পাঠিয়েছিল কাঁথির বাপ-ব্যাটা অর্থাৎ শিশির আর শুভেন্দু অধিকারী। ওই পুলিশই গুলি চালিয়েছিল।’ ১৪বছর আগে নিজেদের কৃতকর্মের পর্দা এভাবেই খুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজেই বুঝিয়ে দিয়েছেন বাম সরকারকে ফেলার জন্যই নন্দীগ্রামকে এই লাশ উপহার দিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারী নেতৃত্বাধীন তৃনমূল-বিজেপি-মাওবাদী জোট। আর তাদের সমর্থনে নেমেছিলেন বাংলার এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা। সোমবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরে সেই বুদ্ধিজীবী সহ  শিশির-শুভেন্দুর গলায় চটির মালা পরিয়ে বিক্ষোভ দেখালো বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠন।

  সোমবার মেদিনীপুর কলেজের সামনে পঞ্চুরচকে ছাত্র-যুব সংগঠন এসএফআই-ডিওয়াইএফআই য়ের উদ্যোগে একটি ধিক্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সেখানেই এই অভিনব কর্মসূচিতে প্রতিবাদে মুখর হয় তারা যাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিতে দেখা যায় সাধারণ ছাত্র যুবদেরও।  এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বক্তারা বলেছেন, “এই ষড়যন্ত্র সেদিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যেদিন ১৪ টি লাশের ময়না তদন্ত হয় জএ ১৪ জনের মধ্যে ৮ জনের দেহে গুলির আঘাত ছিল কিন্তু বাকি ৬ জনের মধ্যে ৫ জনের দেহে ছিল তীক্ষ্ণ অস্ত্রের আঘাত। পুলিশ কাটার, ছুরি, ভোজালির মত অস্ত্র ব্যবহারই করে না। আর একজনের দেহে ছিল বোমার আঘাত। তাও আসল পুলিশ ব্যবহার করে না। ওই ৬ জনকে পিছনে থাকা দুষ্কৃতীরাই মেরেছিল। আর বাকিদের মেরেছিল ওই চটি পরা পুলিশের দল। কারন নন্দীগ্রামের মাওবাদীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল যারা পুলিশের গুলি অনায়াসেই জোগাড় করতে পারে। তৃণমূলও সংগ্রহ করে থাকতে পারে। এবং সেটাই যে হয়েছিল তা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কথাতেই স্পষ্ট। সেদিন যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র বলেছিলেন তখনও এই বুদ্ধিজীবীরা তা মানতে চাননি বরং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেই মিথ্যাবাদী বলেছিলেন।”

যুব নেতা কুন্দন গোপ বলেন, ‘ সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, শালবনীতে বাংলার হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থানের স্বপ্নকে পরিকল্পনা মাফিক কবরে পাঠানোর যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল তাতে সামিল হয়েছিলেন এই বুদ্ধিজীবীরাও। লক্ষ লক্ষ টাকা আর সরকারি পদের বিনিময়ে নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিকে বিক্রি করেছিলেন এই মানুষের দল। বাংলা যাঁদের সম্মান করত বুদ্ধিজীবী বলে তাঁরা যে আসলে বাংলার সর্বনাশের মুখোশধারী তা প্রমাণ হয়ে গেল। আরেক বিক্ষোভকারী নেতা মানস প্রামানিক বলেন, “সত্য কোনোও দিনই চাপা থাকেনা। এবারও রইলনা, শুধু দেরিতে প্রকাশ হল কিন্তু সেই দেরির জন্য সর্বনাশ হয়ে গেল বাংলার যুব সমাজের। অর্থাৎ ১৪ই মার্চ ১৪ জনকেই ক্ষমতা দখলের জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায়রাই মেরেছিলেন আজ তা অনেকটাই স্পষ্ট হল।”

সোমবারের এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক চ্যাটার্জী, সুব্রত চক্রবর্ত্তী,জয়ন্ত মজুমদাররা বলেছেন, সেদিন নক্কারজনক ছিল তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের একাংশের ভূমিকা। অপর্ণা সেন সোনচূড়ায় শঙ্কর সামন্তর শহীদ বেদীতে লাথি মেরেছিলেন। নন্দনে বুদ্ধিজীবীদের আলোচনায় ডেকেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই সভায় কৌশিক সেনের মত কয়েকজন তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। ব্রাত্য বসুর মত বেশ কয়েকজন বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে তীব্র, জঘন্য প্রচার শুরু করেছিলেন। এরা সবাই কিছু নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেছেন। তা আরও স্পষ্ট বোঝা যায় যখন দেখা যায় ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষরা তৃণমূলের নেতা হয়ে যান। মন্ত্রী, সাংসদ হয়ে যান। সেদিন এরা সবাই মূলত বামপন্থীদের সরিয়ে রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপিকে জায়গা করে দেওয়ার চক্রান্তের শরিক ছিলেন।

এখন বোঝাই যাচ্ছে কেন গত দশ বছরে রাজ্যে বিজেপি এত বেড়েছে। কেন তৃণমূলের নেতারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজ্যকে সাম্প্রদায়িক বিজেপির হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত ছিল মমতা ব্যানার্জী – শুভেন্দু অধিকারীদের যৌথ চক্রান্ত। নন্দীগ্রামের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের চক্রান্তের অংশীদার করা হয়েছিল। এদিন কুশপুত্তলিকাও দাহ করা হয় বুদ্ধিজীবীদের।

RELATED ARTICLES

Most Popular