Homeএখন খবরমাসের পর মাস ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার! নারায়নগড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রৌঢ়ার, অবসাদে...

মাসের পর মাস ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার! নারায়নগড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রৌঢ়ার, অবসাদে আত্মহত্যা নাকি খুন

নিজস্ব সংবাদদাতা: গত কয়েক মাস ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার এক প্রৌঢ়ার দেহ উদ্ধারকে ঘিরে ধ্বন্দে পরিবার । মানসিক  অবসাদে আত্মহত্যা নাকি খুন হয়েছেন ওই প্রৌঢ়া তাই নিয়ে ধন্দে প্রৌঢ়ার ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়নগড় থানা এলাকার খুড়শি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুরিয়া গ্রামে। থানা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরের ওই গ্রাম থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অনুমান করা হচ্ছে দু একদিন আগে ঘটনাটি ঘটেছে । কারন মৃতদেহটিতে পচন ধরে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে মৃতার নাম লক্ষী সিং, বয়স ৫৬ বছর।

মৃতার ছেলে সুভাস সিং জানিয়েছেন, “পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে আমার বাবা কাকাদের মধ্যে সমস্যা চলছিল যার পরিপ্রেক্ষিতে আইনের দ্বারস্থ হয়েছিল আমার বাবা। কেন আমরা সমাজকে না জানিয়ে আইনের দ্বারস্থ হয়েছি এই অভিযোগ তুলে বয়কট করা হয় আমাদের। যে পাড়ায় আমরা বসবাস করি সেই পাড়ার খাবার জল নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাদের বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আমাদের রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে জমির মধ্যে জল কাদা ভেঙে আমাদের যাতায়ত করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে মা-বাবা ওখানেই থাকতেন, আমি আমার স্ত্রী বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দুরে ওই পাড়ার বাইরে চলে আসতে বাধ্য হই।”

সুভাস জানায়, ” দিন পাঁচেক আগে বাবার খুবই শরীর খারাপ হয়। তখন বাবাকে আমরা আমাদের কাছে নিয়ে চলে আসি। মা একাই ছিলেন। এরপর বাবার শরীর ভাল হয়ে যায়। আমরা ঠিক করি মা কেও আমাদের কাছে এনে রাখব। শুক্রবার বিকালে আমার স্ত্রী মাকে আনার জন্য সেই জল কাদা ভেঙেই ও বাড়ি গিয়েছিল। গিয়েই দেখে মা গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে। এরপরই আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত ও তৃনমূল নেতৃত্বকে জানাই। তাঁদের মারফৎ খবর পেয়ে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে।”

দুরিয়া গ্রামের স্থানীয় বুথ সভাপতি উত্তম মাইতি জানিয়েছেন, ” জমি জায়গা নিয়ে পারিবারিক বিবাদ এবং পরে তা স্থানীয় সমাজ সংগঠনের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। ওই সংগঠনের তরফেই বয়কট করা হয়। এই পরিবার আমাদের কাছে বিষয়টি মিটমাট করার জন্য আবেদন জানায়। আমরা সেই মত দুই পক্ষকে নিয়ে বসতে চেয়েছিলাম কিন্তু অপর পক্ষ জানিয়ে দেয় যে তাঁরা নিজেদের সামাজিক সংগঠনের বাইরে গিয়ে অন্য কোনও হস্তক্ষেপে রাজী নন। ফলে আমাদের সরে আসতে হয়। এটা ঘটনা যে বয়কট হওয়া পরিবারটি রাস্তা ব্যবহার করতে পারতনা। এমনকি নিজেদের জল সংগ্ৰহ করতে পারতনা ওই পাড়া থেকে। মাঠের জল কাদা ভেঙেই তাঁদের অন্যত্র যেতে হত পানীয় জলের জন্য।”

জানা গেছে পুলিশের তরফেও ঘটনাটি মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কয়েক মাস আগে নারায়নগড় থানার এক আধিকারিক গিয়েছিলেন বিষয়টি মেটানোর জন্য কিন্তু পুলিশকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান ওই সামাজিক সংগঠনের লোকেরা।পুলিশও পিছু হটতে বাধ্য হয়, পরিবারকে বলে আসে সমাজে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। পরিবারের তরফে বিষয়টি মেটানোর জন্য ওই সামাজিক সংগঠনের নেতাদের কাছে যাওয়া হলে জরিমানা বাবদ দশ হাজার এক টাকা চাওয়া হয় যা দেওয়ার মত ক্ষমতা এই পরিবারের নেই বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। কারন রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবন যাপন করেন।

মৃতার ছেলে জানিয়েছেন, একে জ্ঞাতি শত্রুতা তার ওপর সামাজিক বয়কট ইত্যাদিতে বিপর্যস্ত হয়ে গেছিলেন বাবা-মা দুজনেই। এরপর বাবাকে নিয়ে চলে আসার পর মা আরও একা হয়ে যায়। আমার বাবা সহজ সরল কিন্তু মা একাই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন পারিবারিক সম্পত্তির দাবিতে তাই তাঁকে একা পেয়ে মেরে ফেলাটা অসম্ভব নয় আবার মমানসিক অবসাদ থেকেও তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। হুমকির চোখ রাঙানি চলছে মৃত্যুর পরেও। যে কারনে মৃতার পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়াতে পারেনি। ফোনে সমবেদনা জানিয়েছেন অনেকেই কিন্তু কেউ কাছে আসলে তাঁকেও জরিমানা করা হবে এমনটাও জানিয়েছেন অনেকে।

পুলিশ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে একেবারেই কোনোও কথা বলতে চায়নি। নারায়নগড় পুলিশ সূত্রে মৃতদেহ উদ্ধার ও একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়েছে এই কথার বাইরে ‘বয়কট’ নিয়ে কোনোও কথাই বলা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় নারায়নগড়ে এক তৃনমূল নেতার সঙ্গে যিনি এই সামাজিক সংগঠনের উপরের স্তরের নেতৃত্বও বটে। সমস্ত কিছু বলার পর তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন বললেও পরে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। ক্রমাগত ফোন করলেও সুইচ অফ বলছে তাঁর মোবাইল।

RELATED ARTICLES

Most Popular