Homeএখন খবরদলত্যাগী তৃণমূলীদের দলে কেন? ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপিতে, 'মেনে নিতে পারছিনা' বললেন মন্ত্রী...

দলত্যাগী তৃণমূলীদের দলে কেন? ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপিতে, ‘মেনে নিতে পারছিনা’ বললেন মন্ত্রী বাবুল ‘আমরা তাহলে কোন বিজেপি?” প্রশ্ন উঠেছে দলেই

নিজস্ব সংবাদদাতা: যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এতদিন তাঁরাই এখন মাথায় চেপে বসতে চলেছে বিজেপি কর্মীদের। এমনই আশঙ্কায় হতাশা, ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে বিজেপির স্থানীয় নেতা কর্মীদের মধ্যে। বাঁকুড়া, আসানসোল সহ বিভিন্ন জায়গায় সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে কোথাও আবার ফেসবুকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নজর করা গেছে। শনিবার অমিত শাহের সভায় জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপি–তে যোগ দেবেন কিনা তা নিয়ে খোলসা করে কিছু বলেননি তিনি। কিন্তু এ নিয়ে জল্পনা উঠেছে চরমে। আর সেই সম্ভাবনার আগেই ফেসবুকে তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি তাঁর পোস্টে পরিষ্কার জানিয়েছেন যে জিতেন্দ্র তিওয়ারি বা আসানসোল–দুর্গাপুরের কোনও তৃণমূল নেতা যদি বিজেপিতে যোগ দেন তা তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারবেন না।

ফেসবুক পোস্টে বাবুলের বক্তব্য, ‘‌শীর্ষ নেতৃত্ব কী করেন, সেটা একেবারেই আলাদা ব্যাপার। সেই সিদ্ধান্তই সর্বোচ্চ। তাতে আমার কিছু বলার অধিকার নেই। কিন্তু এটাও ঠিক যে এতদিন ধরে চূড়ান্তভাবে আমার প্রচুর বিজেপি সহকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ আহত হয়েছেন, কারও মৃত্যুও হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভুয়ো কেসে জেলে রয়েছেন। আর এর নেপথ্যে র‌য়েছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি–সহ আসানসোল–দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতারা। আর যাঁর নির্দেশে এ সব করা হয়েছে তিনি তৃণমূলের মাননীয়া নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই এঁদের কারও বিজেপিতে আসা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারব না।’‌

একইভাবে বিদ্রোহের সুর শোনা গেছে বাঁকুড়াতেও। বাঁকুড়ার বিজেপি নেতা কর্মীরা মেনে নিতে পারবেননা যদি তৃনমূলের দলত্যাগী প্রাক্তনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দলে ভিড়তে চান। সেখানকার স্থানীয় নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই শ্যাম মুখার্জীকে বিজেপিতে মানছিনা মানবনা বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। মাঝারি নেতারা ইতিমধ্যেই রাজ্যে কমিটির নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন যাতে কোনও ভাবেই শ্যামাপ্রসাদকে দলে না সুযোগ দেওয়া হয় এই আবেদন জানিয়ে।

প্রকাশ্যে না হলেও বহু জায়গায় সদ্য দলত্যাগী তৃনমূল নেতাদের দলে আসার সম্ভাবনা দেখা দিতেই ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফুটছেন স্থানীয় স্তরের নেতাকর্মীরা।ফেসবুক, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ লিখছেন, ‘খারাপ শুভেন্দু আমাদের নেতা হবে?’ আবার কেউ কেউ এই দলত্যাগী নেতাদের ছবি সহ পোষ্ট করেছেন তাঁদের অতীতের কীর্তি যার প্রতিবাদ দলের তরফে করা হয়েছিল। এই সব তৃনমূল ত্যাগী নব্য বিজেপিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আছড়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে পোস্টার ব্যানারেও। প্রাক্তন বিজেপিরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে আমরা কারা?

বনগাঁতে মুকুল রায়, সৌমিত্র খাঁ, নিশীথ প্রামানিক সহ এক গুচ্ছ নেতাকে সারদা কান্ড, গরুপাচার, এসএসসি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এরাই যদি এখন বিজেপি তাহলে আমরা এ কোন বিজেপি?
বাবুল সুপ্রিয়র সেই ফেসবুক পোষ্ট যেন একাত্ম হয়ে গেছে নন্দীগ্রাম, খেজুরি এবং জঙ্গলমহলের বিজেপি কর্মীদের মনোভাবের সাথে। বাবুল লিখেছেন, “যাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এতদিন শাসকদেলর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, সেই সহকর্মীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে আমি কোনও গোপন আঁতাতে যাব না। আমার তেমন মানসিকতাও নেই। আশা করি এই লেখা সমস্ত গুজবের মৃত্যু ঘটাবে।’’‌

কয়েকমাস আগেও নন্দীগ্রামে দিলীপ ঘোষকে সভা করতে গিয়ে ফিরতে হয়েছিল পুলিশের চাপে। নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে এমনিতেই তৃনমূলের অবস্থা আগের চেয়ে ঢের খারাপ। আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। শুভেন্দু অনুগামীদের হাতে বিজেপির নেতাকর্মীরা বারংবার নিগৃহীত হয়েছেন দাবি করে সেই নন্দীগ্রাম খেজুরির নেতাদের বক্তব্য,’সেই শুভেন্দু অধিকারীকেই যদি আমাদের নেতা হিসাবে মেনে নিতে হয় তবে তার চেয়ে তো ঢের ভাল আমাদের দল ছেড়ে দেওয়া।’

দলীয় কর্মী আর স্থানীয় নেতাদের এই ক্ষোভ টের পেয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। কিন্তু এখানে যা কিছু হচ্ছে সবই কেন্দ্রীয় স্তরে। তাই তিনিও নিরুপায় হয়ে মন্তব্য করেছেন, অন্যদল থেকে যাঁরা দলে আসবেন তাঁরা যেন নিজের চরিত্র জামাটা খুলে রেখে আসেন।”
রাত পেরুলেই মেদিনীপুর শহরে অমিত শাহের সভা। এই সভাতেই নাকি যোগদানের মেলা বসে যাবে! ঘটনায় আনন্দ পাওয়ার কথা আপামর বিজেপি নেতা কর্মীর কিন্তু কোথাও যেন প্রশ্নের কাঁটা খচ খচ করে বিঁধছে বিজেপি স্থানীয় নেতাকর্মীদের। নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করছেন, আমরা তাহলে এ কোন বিজেপি?

RELATED ARTICLES

Most Popular