ওয়েব ডেস্ক : প্রায় দেড় মাস আগে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল বছর ১৪-র এক নাবালিকা৷ পরীক্ষার পর দেখা যায় ওই কিশোরীর তলপেটের ক্ষুদ্রান্ত্রের একটা বড়ো অংশ পচে গিয়েছে। একথা জানতে পেরে আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় কিশোরী। একেই কলকাতায় থাকার জায়গা নেই, তার ওপর কলকাতাতে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়েছে। এদিকে মেয়ের সুস্থ হতে সময় লাগবে বুঝতে পেরে বাড়ি ফিরে যান পরিবারের লোকেরা৷ এরপর টানা ৪৮ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে তাকে নিয়ে চলে যমে মানুষে টানাটানি। অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠে ওই কিশোরী। কিন্তু সুস্থ হলেও বাড়ি যাওয়ার উপায় নেয়। লকডাউনের কারণে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ময়না থেকে আসতে পারছিলেন না পরিবারের লোকেরা। এদিকে অপারেশনের পর কিশোরীর শরীরে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে গত শনিবার কিশোরীকে নিজের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যান এসএসকেএম-এর ইউনিট ৬ সার্জারি বিভাগের দুই চিকিৎসক ডা. পবন মণ্ডল এবং অ্যানাথেসিস্ট ডা.সর্দার। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই নজির গড়লেন ওই দুই চিকিৎসক৷
জানা গিয়েছে, ৭ই জুন তলপেটের ব্যথা নিয়ে এসএসকেএমে ভর্তি হয়েছিলেন বছর ১৪ র ওই কিশোরী। এবিষয়ে ইউনিট ৬ সার্জারির বিভাগীয় প্রধান ডা. বিতান চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই কিশোরীর শরীরে বিরল এক হার্নিয়ার সমস্যা হয়েছিল। যার কারণে তার দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ভয়ে অপারেশন টেবিলেই হার্ট অ্যাটাক করেন মেয়েটি৷ এরপর তাকে সামান্য সুস্থ করে পেট খুলে দেখা যায় কিশোরীর ৫০০ সেন্টিমিটার ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে ২৪০ সেন্টিমিটারই পচে গিয়েছে। বোঝা যায় “সেপটিক লোড”-এর কারণেই এই হার্ট অ্যাটাক। বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ওই পচে যাওয়া অংশ।
অপারেশনের পর ফের একবার হার্ট অ্যাটাক হয় কিশোরীর৷ এরপর তাকে দ্রুত আইটিইউতে ঢোকানো হয়। এয়ারওয়ে সিপিআর-এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা হয়। এরপর দীর্ঘ ১ মাস কেটে গিয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু একে লকডাউনে তার পরিবার আসতে পারছিল না, তার ওপর অপারেশনের পর সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে৷ ফলে কিশোরীকে একা ছাড়তে সাহস পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরা। এরপর ওই দুই চিকিৎসকের তরফে কিশোরীকে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এনিষয়ে ডা. বিতান চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ওর এখন প্রয়োজন দীর্ঘ বিশ্রামের। ক্ষুদ্রান্ত ছোট হয়ে গেলে শর্ট বাওয়েল সিন্ড্রোম দেখা যায়। তা কাটাতে ইন্ট্রাভেনাস খাবার দিয়েছি আমরা। ধীরে ধীরে “মাউথ ফুড” বাড়িয়েছি। কয়েকদিন ধরেই ও বাড়ি যেতে চাইছিল। তাই ডা. পাবন মণ্ডল আর ডা. সর্দার সাপ্তাহিক লকডাউনের মধ্যে নিজেদের গাড়িতে ওকে মেদিনীপুরের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।”