Homeরাজ্যফাইনাল সেমিস্টার নিয়ে ফাঁদে পড়তেই রাজ্যপালের শরণাপন্ন পার্থ

ফাইনাল সেমিস্টার নিয়ে ফাঁদে পড়তেই রাজ্যপালের শরণাপন্ন পার্থ

ওয়েব ডেস্ক : রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে রাজ্যের বিরোধ সুবিদিত। চলমান সেই বিরোধকে বহুবার ছাড়িয়ে গেছে ব্যক্তিগত আক্রমন। এমনকি সেই আক্রমনে পিছপা হননি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও। কখনও বলেছেন, রাজভবনের ঘোষ(দিলীপ ঘোষ) বাবু, আচার্য হওয়া স্বত্ত্বেও কেন বিশ্ববিদ্যালয়েরর সমাবর্তনে আমন্ত্রন পাননি এই প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল যার প্রত্যুত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাজ্যপাল সমাবর্তনে যাওয়ার জন্য কাঁদেন। এরপর নজির বিহীন ভাবে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য্য ছাড়াই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। কখনও রাজ্যপালকে বিজেপি নেতা, কখনও অবিচক্ষন ইত্যাদি নানা ভাবে আক্রমন করেছেন শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল সেমিস্টার নিতেই হবে ইউজিসির এমন নির্দেশ আসতেই সমস্যায় পড়ে গেছে রাজ্য। বর্তমানে এ রাজ্যের এমন পরিকাঠামোই নেই যাতে পরীক্ষা নিতে পারে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয় শিক্ষার সমস্ত স্তরেই একই অবস্থা। ভাগ্যে আগেভাগে মাধ্যমিক হয়ে গিয়েছিল তাই বাঁচোয়া তাও তার রেজাল্ট বের করতে যথেষ্ট সময় নিচ্ছে সরকার। উচ্চমাধ্যমিকের বকেয়া পরীক্ষা নিতে পারেনি রাজ্য, দিনের পর দিন তারিখ পিছিয়ে শেষ অবধি আদালতের রায়ে পরীক্ষা না নিয়েই ফল বের করার ফর্মুলায় বেঁচে গিয়েছে রাজ্য।
বাকি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় গুলির সেমিস্টার। কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় চূড়ান্ত পরীক্ষা ছাড়াই সেমিস্টার শেষ করার ঘোষনা করতেই পোয়াবারো হয় রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরের। ফেল করা ছাত্রের মতই পরীক্ষা ছাড়াই সেমিস্টার উৎরে দেওয়ার ফর্মুলা বের করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। সেই মত পরীক্ষা বাতিল করেই সেমিস্টার শেষ করে দিয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয় ব্যাক বা সাপ্লি পাওয়া পড়ুয়াদের উৎরে দেওয়ার ফর্মুলাও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাদ সাধল ইউজিসি। দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলি ইউজিসি জানিয়ে দিয়েছে চূড়ান্ত বর্ষেপরীক্ষা ছাড়া কাউকেই পাশ করানো যাবেনা। ইউজিসি বলেছে পরীক্ষা ছাড়া কাউকে পাশ করালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মান ও যোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে যাবে।
রাজ্যের যুক্তি হল এই মূহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনোভাবেই ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা সম্ভব নয়। সে অনুযায়ী সংক্রমণের আবহে সেপ্টেম্বরে ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা যাতে এড়ানো যায়, সেই অনুরোধ করে গত কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। কিন্তু সেই উত্তর এখনও আসেনি। ফলে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তা হিসেবে রাজ্য সরকারের তরফে এবার বিষয়টি রাজ্যপালকে সরাসরি জানানো হয়েছে৷ সোমবার রাজভবনে রাজ্যপালের সাথে বৈঠক করে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, পরীক্ষা দিতে গিয়ে কোনো পরীক্ষার্থী যাতে করোনায় সংক্রমিত না হয়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে সে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করা হল।

তবে শুধু যে পশ্চিমবঙ্গই ইউজিসির এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি দিল্লি পঞ্জাব সহ দেশের অন্যান্য ৬টি রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেভাবে প্রতিদিন রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কিছুতেই সেপ্টেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। সোমবার রাজভবনে রাজ্যপাল ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকে মূলতঃ এই বিষয়টিই উঠে এসেছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত ইউজিসি কমিশন যে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে তার বিরোধীতা করে রাজ্যের তরফে বলা হয়েছে, পরীক্ষার নামে যে অমানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি কমিশন তা আসলে ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে খেলা করা৷

প্রথমদিকে ফাইনাল সেমিস্টার নেওয়ার কথা ভাবা হলেও পরে রাজ্যের করোনা সংক্রমণের হার যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তাতে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য৷ কিন্তু কিছুদিন আগেই ইউজিসি কমিশনের তরফে হঠাৎ ফাইনাল সেমিস্টার নেওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়। তবে পশ্চিমঙ্গের পাশাপাশি পাঞ্জাব, রাজস্থান, দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও ওড়িশা সরকারের তরফেও জানিয়ে দেওয়া হয় করোনা পরিস্থিতিতে কোনওভাবেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই এ রাজ্যের তরফে কেন্দ্রকে জানিয়েছে, শুধু করোনা নয়, আমফান পরবর্তী অবস্থায় অনেক কলেজে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছে এবং ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ছাত্রছাত্রীর হাতে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ নেই। তার ফলে তারা অনলাইনে পরীক্ষায় বসতে পারবে না। আর করোনা সংক্রমণের কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।

এই সমস্ত সমস্যার কথা সোমবার রাজ্যপালকে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরপর রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় শিক্ষামন্ত্রীদের কথা দেন, পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্যায় হবে না। এদিন বৈঠক শেষে পার্থবাবু বলেন, “আমরা রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি সুপারিশ পাঠিয়েছিলাম। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেইমতো আগের সেমিস্টারে পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ণ হবে। আমরা অহেতুক ছাত্রছাত্রীদের সংকটে ফেলতে চাই না।” এদিন রাজ্যপাল-শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উচ্চশিক্ষা সচিব মনীশ জৈন ও রাজ্যপালের সচিব সতীশ তিওয়ারি। প্রায় দু’ঘন্টা এবিষয়ে রাজভবনে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানান, “রাজ্যপালকে এই সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকতে বলেছি। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে এই প্রেক্ষাপটে তিনি নিশ্চয়ই বিচার বিবেচনা করতে বলবেন।”

একই ইস্যুতে এদিন বৈঠক করে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপা। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক কৃষ্ণকলি বসু জানিয়েছেন, “ইউজিসি ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইছে। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় সরকার এভাবে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।”

RELATED ARTICLES

Most Popular