Homeএখন খবরপ্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, শৌচাগারের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে গ্রেপ্তার পিংলার ঠিকাদার

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, শৌচাগারের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে গ্রেপ্তার পিংলার ঠিকাদার

শশাঙ্ক প্রধান: পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানা এলাকার এক ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। রবিবার ডেবরা থেকে পিংলা থানার পুলিশ ওই ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অন্ততঃ ১০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে পিংলা এলাকার ক্ষীরাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে একাধিক অভিযোগ এসেছে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে। পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত ওই ঠিকাদারের নাম গোপাল দাস। বাড়ি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাপুকুর গ্রামে।

সম্প্রতি ওই গ্রামেরই দুলালি মান্ডি নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন যে, গোপাল দাস নামে ওই ঠিকাদার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাবদ তাঁর আ্যকাউন্টে জমা পড়া সরকারের প্রথম দফায় বরাদ্দ ৩০হাজার টাকা তাঁর টিপ নিয়ে তুলে নিয়ে হাপিস করে দিয়েছে। দুলালি বলেন, ” ব্যাংকে আমার খাতায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় টাকা ঢুকেছে বলে খবর পেলাম। আমি ওই ঠিকাদারের বাড়িতে ২২ বছর ধরে পরিচারিকার কাজ করে আসছি। এতদিন কাজ করছি তাই ওদের পরিবারের প্রতি আমার একটা আস্থা ছিল। তার ওপর ও গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বীকৃত ঠিকাদার। সরকারের বরাদ্দ টাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি, নির্মল বাংলা মিশনের শৌচালয় বানায়। তাই আমি ওকেই বললাম যে আমার টাকা জমা পড়েছে কিনা একটু জেনে বল। ও আমাকে নিয়ে ব্যাংকে নিয়ে গেল। ও ব্যাংকের ভেতরে ঘুরে এসে বলল, তোমার খাতায় কিছু গন্ডগোল আছে। একটা কাগজ দিয়ে বলল এখানে টিপ দাও। আগে সব ঠিক করে নিয়ে তারপর বলতে পারব টাকা ঢুকেছে কিনা। আমি টিপ দিয়ে দি। এরপর সে বলে, ও আমার খাতা এবার ঠিক হবে। আরেক দিন এসে জানতে হবে যে টাকা ঢুকেছে কিনা?”

দুলালি বলল, “এরপর আর ও কিছুতেই বলেনা টাকা ঢুকেছে কিনা। শুধু এড়িয়ে যায়। আমার পাশবই ওর কাছেই আছে। এরপর আমি নিজেই ব্যাংকে যাই। আমার কাছে একটা কাগজে খাতার নম্বর লেখা ছিল। সেটা নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি ৩০হাজার টাকা এসেছিল সেটা নাকি আমিই তুলে নিয়েছি। ব্যাঙ্কের লোকই আমাকে বলে যে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে এসে গোপালই আমার টাকা তুলেছে। আমি গোপালকে বলতে সে অস্বীকার করে। এরপর আমি পঞ্চায়েতের কাছে যাই। পঞ্চায়েত আমাকে থানায় যেতে বলে।”

পঞ্চায়েতের অবশ্য থানায় যেতে বলার যথেষ্ট কারন ছিল। কারন ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েতের কাছে, স্থানীয় তৃনমূলের বুথ সভাপতির কাছে আরও অভিযোগ এসেছিল। স্থানীয় তৃণমূল এর বুথ সভাপতি মধুকর অট্ট বলেন, “ঘটনাটি জানার পর দুলালি মান্ডির অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটা সালিশি সভায় বসে বিষয়টা মিটিয়ে নেবার চেষ্টা করেছিলাম। আরও অন্ততঃ ৪০/৫০ জনের নির্মল বাংলা মিশনের টাকা আত্মসাৎ করেছে গোপাল। কিন্তু গোপাল অস্বীকার করল। প্রথম দিকে ও আমাদের দলই করত। তখন বলত সবার টাকা দিয়ে দেবে কিন্তু নির্বাচন আসার আগে ও বোধহয় ভাবল যে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। তখন থেকে ও বিজেপির সাথে চলা ফেরা করে। টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা বললে বলে, আমি কারও টাকা নেইনি। যা পার করে নাও। এরপর আমরা সবাইকে বলে দেই প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে। যা করার আইনই করবে।”

গুণধর এই ঠিকাদারের শৌচালয়ের টাকা হাতিয়ে নেবার কায়দাটাও বড় অদ্ভুদ। তখন নির্মল বাংলা মিশনে সাধারণ মানুষের সরকারি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার নিয়ম ছিল ব্যক্তিকে ৯০০টাকা দিতে হবে। বিনিময়ে সরকার ১০হাজার টাকা বরাদ্দ করবে শৌচালয় বানাতে। গোপালের বালিচক বাজারে একটি কম্পিউটার কাফে রয়েছে। সেখান থেকেই সে জানতে পারত কার কার নামে শৌচালয় বরাদ্দ হয়েছে। তার ওপর সে নিজেই ঠিকাদার। সে সবাইকে ৯০০টাকা করে জমা দিতে বলত। তারপর ওই সব মানুষকে বলত সরকারের টাকায় বরাদ্দ শৌচালয় ভালো হয়না। ওই টুকু টাকায় কী হবে? নিজেরা বরং আরও একটু বেশি টাকা খরচ করে মজবুত করে শৌচালয় বানিয়ে নাও। লোকে সে কথা ঠিক মনে করে নিজের প্রয়োজন মত টাকা খরচ করে শৌচালয় বানিয়ে নিত।

স্থানীয় এক গ্রামবাসী দয়াল কান্ত নন্দী জানান, ‘ গোপাল যেহেতু ঠিকাদার তাই সবার টাকা তার নামে জমা করে দিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। কথা ছিল গোপাল সেই টাকা তুলে আমাদের দিয়ে দেবে। কিন্তু গোপাল কারুরই টাকা ফেরত দেয়নি।এরকম অন্ততঃ ৫০জনের ১০হাজার টাকা করে আত্মসাৎ করেছে গোপাল দাস।’

RELATED ARTICLES

Most Popular