Homeএখন খবরমদের মর্মান্তিক পরিনতি, পিংলায় ভয়াবহ নৃশংসতার বলি শিশু সন্তানের জননী, সন্দেহের বশে...

মদের মর্মান্তিক পরিনতি, পিংলায় ভয়াবহ নৃশংসতার বলি শিশু সন্তানের জননী, সন্দেহের বশে থেঁতলে কুপিয়ে খুন তরুনী গৃহবধুকে খুন করে পলাতক স্বামী

শশাঙ্ক প্রধান: ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার এক গৃহবধূ। মাথার কপাল এবং করোটি থেঁতলে দেওয়ার পাশাপাশি ভ্রু কুপিয়ে খুন করা হয়েছে এক ৭ বছরের শিশু সন্তানের জননীকে। পিংলার ক্ষীরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রামপুরা গ্রামের ওই নিহত মহিলার নাম রাধারানী পাল। পাশবিক বর্বরতার শিকার ওই ২৮ বছরের যুবতী গৃহবধূকে তাঁর স্বামীই খুন করেছে বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। ঘটনার পরই পলাতক মৃতার স্বামী ভোলানাথ পাল। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

সব শেষ!

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান গভীর রাতে অথবা ভোরের দিকে ঘটনাটি ঘটেছে। সাত সকালেই মৃতার শিশু সৌম্যদ্বীপ মাকে বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে ডাকাডাকি করে কিন্তু মায়ের কোনও সাড়া না পেয়ে ছুটে যায় পাশেই তার কাকুর বাড়িতে। কাকুর ছেলে মানসকে সে জানায় মায়ের কথা। এরপরই সবাই ছুটে এসে দেখে রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানাতেই পড়ে রয়েছেন রাধারানী। প্রতিবেশীরা খবর দেন পুলিশে পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে কপালের মাঝখানে, কপালের বাঁ দিকে, মাথার পেছনের একাধিক জায়গায় থেঁতলে দেওয়া হয়েছে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে। এছাড়াও বাঁ দিকে ভ্রুর ওপরে একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে। মাথার খুলি কার্যত ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুনের বীভৎসতা প্রমান করছে প্রচন্ড রাগ থেকেই অপরাধী এই ঘটনা ঘটিয়েছে অথবা মদের ঘোরে উপূর্যোপরি আঘাত করে যাওয়া হয়েছে।

মৃতার স্বামী ভোলানাথ অত্যন্ত মদ্যপ বলেও জানা গিয়েছে। মদের নেশায় তাঁকে বহুবারই অসংবৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যেত। প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, সংসারে প্রায়ই অশান্তি হত এবং ভোলানাথ রাধারানীকে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে যুক্ত বলে মনে করতেন যদিও এসম্পর্কে কোনো উপযুক্ত প্রমান তার নিজের কাছে এমনকি প্রতিবেশীদের কাছেও নেই। বারংবার সালিশি বসেও এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি হতভাগ্য পরিবারটি।

ভোলানাথের আত্মীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে প্রায় বছর দশেক আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। বেলদা থানার তুতরাঙা এলাকায় বাপের বাড়ি রাধারাণীর। বিয়ের প্রথম দিকে ভালই চলছিল। পিংলার জামানা বাজারে ভোলানাথের একটি চালু স্বর্ণালংকারের দোকান ছিল। এক রাতে সেই দোকান চুরির পরই সংসারে বিপর্যয় নেমে আসে। সর্বশান্ত হয়ে যান ভোলানাথ। মাথার ওপর লক্ষাধিক টাকার দেনা চাপে। এরপরও একটি ধাবা চালিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ভাগ্য সায় দেয়নি তাতে।

বিপর্যস্ত ভোলানাথ ক্রমশ মদের নেশায় ডুবে যান। মাঝখানে বেশ কয়েক মাস নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ডায়রি করা হয়। ইতিমধ্যে নিজে চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ রাধারানী। শোনা যায় চাকরির জন্য দালালের পেছনে তিনিও বেশ কিছু অর্থ খুইয়েছেন। এই চাকরি খোঁজার সূত্রেই হয়ত বাইরে বেরিয়েছেন, কারও সাথে যোগাযোগ করেছেন। সেখান থেকেই সন্দেহ উঠে এসেছে ভোলানাথের। একে মানসিক বিপর্যস্ততা তার ওপর মদ আর সর্বশেষে সন্দেহ ভোলানাথকে নিয়ে গেছে এই পাশবিকতার পথে। সাংসারিক বিপর্যয়ের এও এক মর্মান্তিক পরিনতি। আর যার অনিবার্য কারন হল মদ। যা এখন গ্রামে গঞ্জে সহজলভ্য।

পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘এখানে ভোলানাথ শুধুই ভিলেন নয়, সংসারের জটিল সমুদ্রে সেও এক পরাজিত নায়ক যার জন্য আজ আর কারও কোনও সহানুভূতি নেই ঠিকই কিন্তু সময় কাকে কখন এই আবর্তে নিয়ে ফেলে তা কেউ জানেনা।’
ঘটনার খবর পেয়েই তুতরাঙা থেকে ছুটে এসেছেন রাধারানীর বাবা হীরালাল জানা। জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘প্রায়ই অত্যাচার হত মেয়ের ওপর। অনেকবার আলোচনায় বসেছি, জামাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু এই নির্মম পরিণতি হবে বুঝতেই পারিনি। আমার মেয়ের খুনের উপযুক্ত বিচার চাই।” ভোলানাথের খোঁজ করছে পুলিশ।

RELATED ARTICLES

Most Popular