Homeঅন্যান্যমিউজিক সিস্টেম বাজিয়ে আত্মহত্যা পিংলার যুবকের! দাদার বকুনি খেয়ে মর্মান্তিক পথ বেছে...

মিউজিক সিস্টেম বাজিয়ে আত্মহত্যা পিংলার যুবকের! দাদার বকুনি খেয়ে মর্মান্তিক পথ বেছে নিলেন কাজ হারানো পরিযায়ী

বৃহস্পতিবার! শ্মশানে জ্বলছে শান্তনুর দেহ

শশাঙ্ক প্রধান: লকডাউনে কাজ হারিয়েছিলেন ১বছর আগে। করোনা কালের শুরুতে যখন দেশজোড়া লকডাউন শুরু হয় তখন আরও হাজার হাজার পরিযায়ীর মত তিনিও ফিরে এসেছিলেন চেন্নাই থেকে। কথা ছিল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের ফিরে যাবেন চেন্নাইতেই কিন্তু এরই মধ্যে চলে এল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ফলে আর ফেরা হয়নি। বুধবার দাদার বকুনি খেয়ে চলে গেলেন একেবারেই না ফেরার দেশে। চলে গেলেন প্রিয় মিউজিক সিস্টেম বাজিয়ে গান শুনতে শুনতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানার পিন্ডরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের পদিমা গ্রামের ঘটনায় হতবাক পরিবার, হতবাক গ্রামবাসীরাও।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ২১ বছরের ওই যুবকের নাম শান্তনু মন্ডল। দুই ভাই আর বাবা-মা এই নিয়ে সংসার ছিল শান্তনুর। বাড়িতে কিছু চাষের জমি রয়েছে পাশাপাশি বাবা শুকদেব মন্ডল হাওড়ার ধুলাগাড়ি এলাকায় সবজি ব্যবসা করেন। অভাব সেই অর্থে ছিলনা কিন্তু শান্তনুর মনের মধ্যে একটা যন্ত্রনা ছিল, সে যন্ত্রনা বেকারত্বের। এই যন্ত্রনা থেকেই খানিকটা অবসাদের মধ্যেই চলে গিয়েছিল সে। প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, একা একাই থাকতেন শান্তনু। বন্ধুবান্ধব ইয়ারদোস্ত খুব একটা ছিলনা। মাঝে মধ্যে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। কখনো একটু আধটু মদও খেতেন আর বাড়ি ফিরে নিজের মিউজিক সিস্টেম বাজিয়ে ডুবে যেতেন গানের মধ্যে। বুধবার সেই গানের মধ্যেই নিজেকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে নিলেন শান্তনু।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বুধবারও বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেছিলেন শান্তনু। এরপর কোথাও মদ খেয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে বাইক নিয়ে পড়ে যান। ভালই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাইকটি। বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাড়ি ফেরেন তিনি। বাইকের এই অবস্থা দেখে রেগে যান শান্তুনুর দাদা সুশান্ত। এর আগেও শান্তনু বাইক নষ্ট করেছিলেন দুর্ঘটনায় পড়ে। সেই প্রসঙ্গ তুলে দাদা তাকে বকাবকি করেন। বলেন, ‘বাবাকে বাড়ি আসতে দে তারপর যা করার করবে।’ বাবাকে ভয় করতেন শান্তনু। শান্তনুর মা ও বলেন, ‘এদিক ওদিক ঘুরে জমিতে চাষের কাজ করতে পারিস।’

এতকিছুর পর অবশ্য কোনও কিছু বলেননি শান্তনু। চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে পড়েন। এরপর শোনা যায় তাঁর ঘর থেকে গানের আওয়াজ আসছে। মা রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন, দাদা নিজের কাজে। রাতে রান্নার পর ভাত খাওয়ার পালা। শান্তুনুকে ডাকা হয়। কয়েকবার ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখা যায় দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এরপরই প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করে দরজা ভাঙা হয়। দেখা যায় ঘরের কড়িতে দড়ি দিয়ে ঝুলছেন শান্তুনু। তখনও মিউজিক সিস্টেমে গান চলছে।

এরপরই খবর দেওয়া হয় স্থানীয় সিভিক ভলেনটিয়ারকে। তারই মারফৎ খবর যায়  পিংলা পুলিশ থানায়। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। দেহ পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। গোটা ঘটনার জন্য অবশ্য গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা চোলাই মদের কারবারকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের অভিযোগ প্রায় প্রতি গ্রামেই মদ এখন এতটাই সহজলভ্য হয়ে উঠেছে তরুণ প্রজন্ম মদে ডুবে যাচ্ছে আর তারই পরিণতিতে এরকম ঘটনা ঘটছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular