Homeএখন খবরকরোনা নিয়ে বৈঠকের জন্য বঙ্গ সফর বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী! দেশ জুড়ে সমালোচনার...

করোনা নিয়ে বৈঠকের জন্য বঙ্গ সফর বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী! দেশ জুড়ে সমালোচনার মুখেই এই সিদ্ধান্ত, দাবী রাজনৈতিক মহলের

অশ্লেষা চৌধুরী: শুক্রবার বঙ্গ সফরে আসছেন না মোদি, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করার দরুন এদিনের সফর বাতিল করার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার ট্যুইট করেন প্রধানমন্ত্রী। ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, ”করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে হবে। সেইজন্য আমি কাল বাংলায় যাচ্ছি না।“ করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই বঙ্গে সভা করা নিয়ে বারবার বিরোধীপক্ষের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে নরেন্দ্র মোদিকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সভা থেকে নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করেছেন। এমনকি বৃহস্পতিবার আসানসোলের সভা থেকেও করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকেই দায়ী করেন মমতা।

বাংলায় এইভাবে সভা করে নিয়ে বাংলায় মমতা ছাড়া অন্যান্য বিরোধী দলের তপের মুখে পড়ার পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকুরের ক্ষোভের শিকারও হয়েছেন। দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। তাই তিনি মহারাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারলেন না। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত, তাই করোনা নিয়ে চিন্তা নেই। মহারাষ্ট্র সরকারের বক্তব্য, সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। শনিবার পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ৭২৯ জন। রাজ্যে করোনা সংক্রমণের এই উর্দ্ধমুখী গতির ফলে রাজ্যে অক্সিজেনের এবং রেমডেসিভিয়ারের ঘাটতি রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে না পেরেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে এই অভিযোগ করেন।

আর মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ সামনে আসতেই সেটা লুফে নেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মোদির সমালোচনায় সরব হয়ে মমতা বলেন, “এই হচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। কাজের বেলায় কিছু নেই।” সেইসঙ্গেই মোদিকে দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমও পরামর্শ দেওয়ার মতো করেই বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এক ফোনের দূরত্বে থাকা। কেননা কেন্দ্রীয় সরকারের সব সিদ্ধান্তই প্রধানমন্ত্রী একা নেন।

এইসব কিছুর মধ্যেই দেশের শীর্ষ আদালত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রকে করোনা মোকাবেলায় জাতীয় পরিকল্পনা তৈরির জন্য কড়া নির্দেশ দেয়। অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় ওষুধের জোগান সহ চারটি বিষয় ওই পরিকল্পনায় উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। শুক্রবার এই বিষয়ে আবারও শুনানি হবে। আর শুধু এদিনই নয়, গত বুধবারেও ম্যাক্স হেল্থকেয়ারের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লী আদালত প্রশ্ন তুলেছিল, পেট্রোলিয়াম এবং ইস্পাত শিল্প থেকে কেন মেডিকেল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করছে না কেন্দ্র ? অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে বলে বিচারপতিরা কেন্দ্রকে জানিয়ে দেয়, এক্ষেত্রে আপনারা ভিক্ষা করবেন না ধার করবেন, না চুরি করবেন, না প্ল্যান্ট তৈরি করবেন তা আমরা জানি না।

এমন পরিস্থিতির মাঝেই তড়িঘড়ি শুক্রবার বঙ্গ সফর বাতিলের ঘোষণা করে ট্যুইট করেন মোদি। শুক্রবার মোদির একাধিক সভা ও তাতে হওয়া ভিড় নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সকলে। যদিও বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সভায় পাঁচশোর বেশি লোক থাকবে না। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর সভা হলেই লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়, সেখানে পরিকল্পনা করে পাঁচশোর মধ্যে রাখা হবে মোট দর্শক সংখ্যা বলেই জানানো হয়েছিল। তবে করোনার কারণে দেশ জুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় শুক্রবারের বঙ্গ সফর বাতিল করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি এদিন গাজোল ও দুর্গাপুরের সভা বাতিল করে দিল্লী ফিরে যাওয়ার কথাও জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।

এসব কিছুর মধ্যেই একটি বিষয় উঠে আসছে, যা হল- বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হওয়া সত্ত্বেও বাংলা দখলের লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বার বার বাংলায় ছুটে ছুটে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে বাংলায় সভা করা নিয়ে কটাক্ষ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি, উল্টে শনিবার প্রধানমন্ত্রী মোদি আসানসোলের একটি সভায় বক্তব্য রাখার সময় বিশাল জন সমাগম হওয়ায় প্রবল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সেই তিনিই হঠাৎ করে বঙ্গ সফর বাতিল করে দিলেন শুধুই কী করোনা পরস্থিতি বিবেচনায় বৈঠকের জন্য! না কি শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে পড়ে তিনি এই সফর ও সভা বাতিল করতে বাধ্য হলেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular