Homeসাহিত্যরবিয়াণীঅপেক্ষার অন্ধকার

অপেক্ষার অন্ধকার

✍️কলমে অভিজিৎ রায়

(চতুর্থ পর্ব)

যে অন্ধকার পড়তে শিখে নিলো, যে শিখে নিলো আলোকেও পড়ে নিতে সে তো অনায়াসে মস্তিষ্কের উন্মুক্ত উদ্যানে অন্ধকারের অপেক্ষার শব্দ অনুভব করতে পারবেই। প্রতিমুহূর্তে তার হৃদয় কেঁদে উঠবে শব্দের অপেক্ষার অন্ধকারের জন্য। আর, তারপরই তার চোখে পড়বে নীরবতার আলো। যে আলো সর্বক্ষণ আড়ালে, গোপনে মস্তিষ্কের অন্ধকারের বুকে, পিঠে আঁচড় কেটে যাচ্ছে। লিখে রাখছে শিল্পের ব্যাকরণ। যে পাঠ অসমাপ্ত থাকলে শব্দেরা কবিতা লিখে উঠতে পারে না, রং পারে না চিত্রকলা সৃষ্টি করতে। শুধু আলো নয়, ছবিকে চিত্রকলা হয়ে উঠতে গেলে খুব জরুরি ছায়ার শরীর আর তার অসম্ভব সুন্দর নগ্নতা এবং ঠিকই একইভাবে শব্দ সাজিয়ে কবিতা রচনা সম্ভব নয়। সেখানে প্রয়োজন এক ভয়ংকর নীরবতার। যে নীরবতা চিৎকার করে উঠবে যে কোনো ভারি শব্দের চেয়েও জোরে আর হাজার হাজার মানুষের মনের দরজা কৌতুহলে খুলে যাবে আচমকা। এইসব চিত্রকল্প, এইসব কবিতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্ধকার হল অপেক্ষার অন্ধকার। এই সব শীতের মেঘ বৃষ্টি দেয় না কিন্তু ছায়া দিয়ে বুঝিয়ে দেয় আলোর তাৎপর্য। এক একজনের কাছে সেই ছায়া এক এক অর্থে ধরা দেয় আর শিল্পের বহুমাত্রিকতা আমাদের অপেক্ষাকেও ক্রমশ মূর্ত থেকে বিমূর্ত করে তোলার উন্মাদনায় অপেক্ষার অন্ধকার গভীর হতে হতে আলোর পরিধি অতিক্রম করে ফেলে। আমাদের চিরকালীন অপ্রাপ্তিগুলো নিজেদের রূপ বদলিয়ে ধরা দেয় অক্ষর, শব্দ, যতি ও রঙের ব্যবহারে। কল্পনার সে অন্ধকার বেনারসি পড়ে ছাদনাতলায় বসার জন্য। বাস্তবে সে অন্ধকার নিজের আদিম আলোকে খুঁজে বেড়ায় প্রতিমুহূর্তে। আর আমাদের চেনা মুহূর্তগুলো ক্রমশ অচেনা অনন্তে বিলীন হয়ে যায়। অন্ধকারগুলো আলোয় আর আলোগুলো আলোছায়ায় মিলে মিশে যে শব্দহীনতার ভাস্কর্য বানায় তা কখনও শুধুমাত্র একটি যতিচিহ্নের অপেক্ষায় থাকে। আর৷ অপেক্ষার শেষে অন্ধকার আলো নয়, মুঠোভর্তি ছায়া নিয়ে আমাদের হৃদয়কে পালন করে। আমরা প্রত্যেকেই এমনই এক অপেক্ষার অন্ধকারের প্রতীক্ষায় ভুল করে আলো জ্বেলে পথে হাঁটছি আজও।

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular