Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✍️কলমে: আশিস মিশ্র

(পর্ব -১২)

বর্ষায় আমাদের জামা- কাপড় বাক্সবন্দী হয়ে গেছে। এবার আর চৈত্রসেলে গিয়ে কিছু কেনা হলো না। চৈত্রসেলের শাড়ি গুলি এখনো দোকানে ঝুলছে। গিন্নিরও এবার তেমন জোরালো দাবী নেই, যে দিতেই হবে। ‘ওই তুমি যা ভালো মনে করো,তাই এনো–‘ এমন কথায় পুরুষ মন খানিক বিগলিত হয়েছে। তাই শাড়ির মোহ থেকে বেরিয়েও আবার সেই শাড়ির মোহে ডুবে গেলাম। রবিবারের আড্ডা দেওয়ার আগে ব্যাগে করে খানদুই নতুন শাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়লাম সেই ইংলিশ পেরুজালের ঘরটায়। বন্ধুরা তা নিয়ে বেশ মজাও করলো। আসলে কবিও যে বৌয়ের জন্য শাড়ি চয়েস করে কিনতে পারে, তা জেনে ব্যচেলর ছেলেগুলো বেশ রসায়ন খুঁজে পেয়েছে।
এখন রসে- বশে থাকাটাও বেশ মুশকিল হয়ে গেছে। আর মগজের স্টকও যে ফুরিয়ে আসছে। তাই বর্ষায় জমে থাকা পোশাক গুলিকে শরতের রোদে শুকনো করার মতো ফেসবুকের দেওয়ালে যা কিছু এই কয়েক মাস টাঙানো হলো, তারপর কী কী টাঙাবে তাই নিয়ে অনেক বন্ধু বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে। তার মধ্যে আবার কিছু উঠকো ঝামেলা শুরু হয়েছে। ঝামেলা মানে, এই বাঙালির যা অভ্যেস, অন্যের দেওয়ালে উঁকিঝুঁকি মারা। মানে একটু ঘেঁটে দেওয়া। এই অবস্থায়
আমার এক সাংবাদিক বন্ধুকে ফরোয়ার্ড স্ক্রিনসট নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী গো দেখলে? সে বললো, ভাইরে, নিজেদেরই ফাটছে খবর লিখতে। ওই সব চুলকানি মার্কাদের কে আর খবর রাখে। ওদের জ্বালা উঠেছে। তাই লকডাউন পড়তেই শুয়ে গেছে। টাকার তো অভাব নেই। আবগারি ওয়েদার। যত চুলকানি,ওই ভারচুয়ালি।

কী আর বলবো। সারাদিন অনলাইনে খবর লিখে পেটের ভাত জোগাড় করতে হয় যাদের , তখন সত্যি চুলকানি মার্কাদের দিকে নজর থাকে না। ‘আর ইদানীং ফেসবুকের দেওয়ালটি দেখলে মনে হয়, পচা চালকুমড়োর ত্বকের মতো। হাত দিলেই নষ্ট রস বেরবে।’ এই কথাগুলি বললেন এক লেখক বন্ধু।

তিনি আরও বললেন, এই করোনা আবহে পচা চলকুমড়ো মার্কা বিদ্বজ্জনদের অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না বলেই মনে হয়। তবে আমাদের সমাজে, মানে এই সাহিত্য – শিল্প- সংস্কৃতি জগতে পচা চালকুমড়োদের সম্পর্কে চেঁচামেচি চলছে বিস্তর।
চলুক গে। চুলকানি মার্কাদের নিয়ে সত্যি অতো ভাবার সময় নেই।

তেমন প্রতিভাবান নই। শক্তি – সুনীল, ঋত্বিক, অরুণ, বিনয়দের মতো খালাসিটোলায়ও যাতায়াত করার সামর্থ্য নেই। সমবেতভাবে মদ খেতে গেলেও ট্যাক্স আদায় হয় না বন্ধুদের কাছ থেকে। কফিহাউসের টেবিলে আড্ডা ভুলে গেছি। তেমন গিরিশও হতে পারিনি। তেমন গুরুও নেই, বকলমা দিয়ে উদ্ধার করবে। তেমন বিনোদিনী কোথায়? যে গুরুর পায়ের কাছে আছড়ে পড়বে? চেতনার সেই স্তর বড়ো ম্লান এখন। ফলে চুলকানি মার্কাদের নিয়ে চর্চার শেষ নেই। আসল লেখা – লেখিতে কোনো মগ্নতা শূন্য ।

রবীন্দ্রনাথ এই করেছেন ৷ গান্ধীজী এই করেছেন। আইনস্টাইন এই করেছেন। শেক্সপিয়ার এই করেছেন। পিকাসো এই করেছেন। কানুট হামসুন এই করেছেন। বোদলেয়ার এই করেছেন। সুনীল এই করেছেন। রুশদী এই করেছেন। মাইকেল এই করেছেন। কিশোরকুমার এই করেছেন। মহাশ্বেতাদেবী এই করেছেন। ওমুকে এই করেছেন। তমুকে এই করেছেন। —তো কী হয়েছে। তুমি কী করলে? তুমি তো শুধু অন্যের দোষই দেখলে। তোমার তো কোনো সৃষ্টিই নেই। তোমার মুখে তো কুকুর পেচ্ছাপ করে দিয়ে যায়। ফারাকটা বুঝতে শেখো হে…।

তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, কীই বা করতে পারলাম। শুধু চুলকানি মার্কাদের নিয়ে সময় কাটলো। শক্তি – সুনীল- সন্দীপনদের মতো স্বীকারোক্তি করতে পারলাম না। বলতে পারলাম না–‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ। ‘ সাহিত্যের সেই আন্দোলন কোথায়? থাকলে বলুন। কী আন্দোলন আছে। কীসের লড়াই আছে? কী জানছে আমাদের পরের প্রজন্ম। কী দিচ্ছি তাদের আমরা? কিচ্ছু না…।

রাত বাড়ছে। আবার সেই সাংবাদিক বন্ধুর ফোন–কী রে, কী করছিস।
–কী আর করবো। ঢ্যামনামো করছি ফেসবুকে।
— মাল কতটা খেয়েছিস?
— তিন পেগ।
— মাল খেয়ে সবাই ভালো লিখতে পারে না। কেউ কেউ পারে। তুই একটু -আধটু পারিস।
— জলমারা কথা বলিস না।
— বলছি তো। লিখে যা। পচা চালকুমড়োদের চুলকানির দিকে মন না দিয়ে লিখে যা।

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular