Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✍️কলমে: আশিস মিশ্র

(পর্ব-১৭)

এই সাত মাস পর বেশ বোঝা যাচ্ছে, আমাদের হলুদ রবিবারের আড্ডার রসদ ফুরিয়ে আসছে। নতুন করে আর কিছু বলার নেই। যা কিছু বলতে চাই, সবই পুনরাবৃত্তি। ফলে একটি হলুদ রবিবারেও একদিন এমনই বন্ধ হয়ে যাবে।
এই প্রথম দেখলাম, মহালয়া এবং বিশ্বকর্মাকে নিয়ে আগের মতো কোনো উচ্ছ্বাস নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ অতিমারির কোপ পড়েছে সর্বত্র। তাই নম নম করে পুজোটা মিটিয়ে নাও। মাইক বাজিয়ে, লোক খাইয়ে আর লাভ নেই। তার মানে এই সামাজিক ব্যবস্থারও রসদ ফুরিয়ে আসছে কি?
বলতে বলতে এক বাউল বন্ধুর ফোন। বললো, লেখা একটা পাঠিয়েছি। দেখে নিস। লেখার কথা বলতে বলতে আমরা একটু সুখদুঃখের কথায় ঢুকে পড়লাম।
তার নির্যাসটুকু বললে যা দাঁড়ায়, তা হলো–যা কিছু করতে চাইছি আমরা, সেখানে ওই মালটি ঢুকে পড়ছে। মানে কোভিড-১৯। এখন মনে হচ্ছে কদিন একটু আত্মীয় বাড়িতে ঘুরে আসি। বা কোনো আত্মীয়কে নিজের বাড়িতে ডাকি। তার কোনোটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তার কারণ সবাই তো রেশনের চালের ভাত খাচ্ছি। তার ওপর আয়উপায়ের বারোটা বেজে গেছে। ফলে কেউ কারুর সংকটের কারণ হবো না। চেপে যাওয়াটা ভালো। দরকার হলে নিজের বাড়ির ছাদে বসে চাঁদ দেখো বা পুকুর পাড়ে বসে নদী মনে করো।
এবার আর দুর্গোৎসবের সময়ে নতুন পোশাক কেনা হবে না। মানে না হলেও চলে। কেনার সামর্থ্য যেমন নেই, তেমনি পোশাকের উচ্ছ্বাস দেখানোরও জায়গা নেই। কে কাকে দেখবে? আর কাকেই বা দেখাবো? দূরে সরিয়ে দিলাম আমাদের সব পোশাকি অহংকার। প্রয়োজনে দুটো গামছা বা লুঙ্গি, বা একটা আটপৌরে শাড়ি বৌয়ের জন্য, একটা ঘরোয়া জামা মেয়ের জন্য, একটা বারমুডা ছেলের জন্য। এই হলেই আপাতত চলে যাবে। চলে যাচ্ছেও।
তাহলে ছোট ব্যবসাদার হাত কামড়াচ্ছে। দৈনিক শ্রমিক হাত কামড়াচ্ছে। পরিযায়ীদের নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে। প্রাইভেট টিউটর থেকে সমস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাস মাইনে বেতন নেই। ওই মাঝে মাঝে একটু অনুদানের মতো কিছু হাতে পাওয়া। ছোটবড়ো শিল্পীরা ভাবছেন, এবার বুঝি বাজারে কলা বেচার দিন আসন্ন! কী হবে,কী হবে,কী হবে— এই রব ভেতরে ভেতরে ধ্বনিত হচ্ছে। শুধু সরকারি কর্মীরা যাহোক মাস মাইনে পাচ্ছেন। তাই তারা চালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা কতো? দেশের একটা বড়ো অংশই তো কৃষিজীবী ও দিন মজুর। তাহলে কি আমরা ধরেই নিতে পারি, এবার চাষবাস করেই বাঁচতে হবে। কিন্তু সকলের তো জমি নেই চাষের মতো। তাদের কী হবে। এই যে গোটা বিশ্ব সিস্টেমটা ভেঙে গেছে, তার জন্য কি শুধুই করোনা দায়ী? না এর পেছনে আরও বড়ো চক্রান্ত আছে? তার অনুসন্ধান জরুরী।
এসব কথার কোনো শেষ নেই। শুরুটা আছে। তাই আর নতুন করে কথা খুঁজে পাচ্ছি না আমরা। এই কথা খুঁজে না পাওয়াও একটা সংকট। নতুন প্রজন্ম ভাবছে, তারা এরপর কী করবে? কোনো উত্তর নেই! তেমনি উত্তর নেই এই অতিমারিরও। সে যেন আমাদের সবাইকে তার হাতের পুতুল পেয়ে নাচিয়ে চলেছে…।

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular