Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✍️কলমে: আশিস মিশ্র

(পর্ব–২১)

দু’হাজার কুড়ি । এই টুকু হলে অন্তত একটা টি শার্ট আর একটা জিন্স হয়ে যাবে। কিন্তু তা এবার আর দরকার নেই। তাই ছেলেটিও তার বাবা-মায়ের কাছে এ নিয়ে কোনো কথাই বলেনি। এই ক’ মাস সে কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা মুক্ত আকাশও দেখেনি। কিংবা বন্ধুর হাত ধরে নদীর দিকে যায়নি। কিংবা কোনো রেঁস্তোরায় গিয়ে মোগলাই খায়নি বান্ধবীর আব্দারে। সে আরও অনেককিছু করে না। যেমন ফোনে পাবজি খেলা বন্ধ। নেশা করে না কারুর পাল্লায় পড়ে। সে কেবল একটি অ্যানড্রয়েড নিয়ে থাকে। সেখানে তার অনলাইন ক্লাস। কখনো একটু গান শোনা। বা খবর দেখা। নানান খবর তাকে খুব টানে। এই তার মোটামুটি একটা রুটিন। আগেও যেমন ছিলো, এখনও তাই। শুধু যা বদলে গেছে, তার চাওয়াগুলি। একুশের যুবক, কী কী পেতে চায়? পেতে চায় অনেককিছু। কিন্তু এখন থাক। মধ্যবিত্ত পরিবারে কতোরকম চাপ। তা সে বোঝে বইকি। তবুও তার আকাশে যখন চাঁদ ওঠে, সেও স্বপ্ন দেখে। একদিন তার আকাশ আরও কতো বর্ণময় হবে।

এমন সপ্ন দেখা হাজার হাজার মধ্যবিত্ত তরুণ – তরুণী এবার পুজো নিয়ে কী কী প্ল্যান করতে পারে, তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়। অন্তত বাজারের সাম্প্রতিক হালচাল দেখে তা মনে হয়।

সব কেমন ওলট -পালট হয়ে গেল। সব সূচির পাতা আর আগের মতো নেই। পুজোর নস্টালজিয়া ভাবলে মনের কোণে উঁকি মারে কত ঘটনা। পুজোর ছুটি মানে সেই তো একেবারে ভাইফোঁটার পর স্কুল – কলেজ। যেন ওই প্রায় একমাসের সবদিনই রবিবার। তার কোনোটা হলুদ, কোনোটা নীল, কোনোটা লাল। কতো প্ল্যান। কতো যাওয়া – আসা। কতো ছবি।

ছবির কথা মনে পড়ে। মেয়েটির নামও ছবি। দুর্গানবমীর মঞ্চে হঠাৎ এসে হাজির। একটু আলাপেই রাজি হয়ে গেল সে ‘কর্ণ কুন্তী সংবাদ ‘পাঠে কুন্তীর পাঠ বলবে। আমি কর্ণের।

পাঠ শেষ করে চোখে চোখ। তারপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সন্ধে। সে ইঙ্গিত দিয়ে গেলো। ইঙ্গিত। মানে তার হৃদয়ের ডাক। এসো। গ্রহণ করো। সারাজীবনের জন্য। পারলে, আজই নিয়ে চলো। এখুনি হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে রাজি।

না,তা হয় না। একটু সময়ে পুরো জানা যায় না ছবিকে। আরও সময় চাই। আরও কিছুদিন যাক। তা হয় না। যা হওয়ার এখুনি হোক। এমনই ছিলো তার জেদ।
বিসর্জনের পর এলো মনখারাপের দিন। কেউ আর কারুকে দেখতেই পেল না। একটা ফাঁক তৈরি হলো। তা থেকেই গেল আজও।
নিশ্চয় তারও বয়স বেড়েছে। আমারও। সত্যি কি ছবির বয়স বেড়েছে? আমারও কি বয়স বেড়েছে? মনে হয় না। তাহলে? তার কোনো সদুত্তর নেই। সেই সব রবিবারের দুপুরের কেবল জ্বর বেড়েছে। জ্বর। বড়ো ভয় করে। বড়ো ভয় করে তোমার হাত ধরতে। বড়ো ভয়…

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular