Homeসাহিত্যরবিয়াণীঅন্ধকারের আলোর সন্ধান-৩

অন্ধকারের আলোর সন্ধান-৩

✒️কলমে: অভিজিৎরায়

তিন।।                                                             ভাগ্য নয় বোধ, শুধুমাত্র বোধ নয় দর্শন আর যথাযথ আঙ্গিকের প্রয়োগ শিক্ষার কারণেই কবিজন্ম সার্থক হতে পারে। শিক্ষা শব্দটিতে ভয়ংকর আপত্তি দেখি আধুনিক তরুণ কবিদের। এদের প্রত্যেকেরই নির্ধারিত কবি ও গুরু ধরা আছে এবং গুরুকূলের প্রায় কেউই আজকাল আর শিক্ষায় উৎসাহিত করেন না। কিন্তু কেন? নিজের চেয়ার সামলে রাখার তাগিদ নাকি রেকর্ড ভাঙতে না দেবার গোপন প্রয়াস? নাকি কবি যখন প্রকাশকও তখন তার উদ্দেশ্য হয়ে পড়ে বেশি বেশি করে বই প্রকাশ করে নিজের পকেট ভরানো? হ্যাঁ, সম্ভবত এইসব কারণেই তরুণেরা কবিতার ন্যূনতম ব্যাকরণ শিক্ষার আগ্রহ হারাচ্ছেন।

অগ্রজরা যখন নিজেদের বই বিক্রি অথবা বই ছাপানোর তালিকা দীর্ঘ করতে পিঠ চুলকানির শর্টকাট পথ বেছে নেন তখন এরকম অবক্ষয়ের মুখে পড়তে হয় বৈকি বাংলা কবিতাকে! এখন সেই সময় যখন বাজারে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতা যতসামান্য। বিজয়া সম্মিলনীতে সুর ভুল করা গায়ক গায়িকাও দু-পাঁচশ টাকা সাম্মানিক পেয়ে থাকেন কিন্তু কবিদের সে সবের বালাই নেই। বরং পকেটের পয়সা খরচ করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র পত্রিকার দ্বারা সম্মানিত হতে এবং স্মারক বাড়িতে জমিয়ে রাখতেই ব্যস্ত অধিকাংশ। নিজের সাথে নিজের এই ছলনা করা লোকগুলো আর যাই হোক কবিতার প্রতি সৎ থাকতে পারেন না।

আর এই না পারা, ব্যর্থতা সহজেই ধরা পড়ে শব্দচয়নে, ছন্দের প্রয়োগে এবং বোধের চিত্রকল্পে। পাঠকের কাছ থেকে নির্বাসিত কবির একমাত্র আশ্রয় তখন আর বাংলা কবিতা নয়, সম্বর্ধনা, সম্মাননা আর ফেসবুকের সেলফিটুকুই। অহংকারের কবিজন্ম কি সত্যিই এমন হতে পারে? এই অসম্মানের জন্যই কি এখনও শয়ে শয়ে তরুণ বাংলা কবিতা লিখতে আসছেন? না। স্বপ্নপূরণের একটা নির্দিষ্ট, কঠিন পথ থাকে। ইদানিংকালে সবাই সেই পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে শর্টকাট পথ বেছে নিচ্ছে। যা তাদের এবং বাংলা কবিতার ক্ষতি করছে। অন্য সমস্ত শিল্পের মতোই বাংলা কবিতা একটি শিল্প এবং তার সুনির্দিষ্ট শিক্ষা ও রেওয়াজই তরুণ কবিদের আলোর সন্ধান দিতে পারে নয়তো আলেয়ার মোহে বাঁধা পড়ে থাকলেই সর্বনাশ। স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনাও নষ্ট আবার নষ্ট বাংলা কবিতার ভবিষ্যতও।

সত্যিই কি শয়ে শয়ে তরুণ বাংলা কবিতার ভবিষ্যত নষ্ট করতে প্রতিদিন আজ এখানে তো কাল ওখানে ছুটে যাচ্ছেন কবিতা পড়তে বা অগ্রজ কবিদের কবিতা শুনতে? প্রথমে হয়ত নয় কিন্তু পরে অগ্রজদের কৌশলে তারা মূল লক্ষ্য থেকে ছিটকে গিয়ে শেষমেশ পত্রিকা সম্পাদক এবং প্রকাশক হয়েই থেকে যাচ্ছেন। নিজেদের এই পরিণতির কথা একবার ভেবে দেখলে ভাল হতো। কবি হতে গিয়ে নামকরা প্রকাশক হলেও শান্তি নেই যদি তাদের এই জন্ম কবিজন্ম হয়ে থাকে। গৌতম বুদ্ধের শরণে গিয়ে একবার দেখে নিতে পারলে বোধের বিকাশ ঘটবে অবশ্যই।

RELATED ARTICLES

Most Popular