লকডাউন

✒️কলমে:   অখিলেশ সুর                           ‘শুনছো, অমিতের পাশের বাড়িতে এক বৃদ্ধের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।কি যে হবে ! সরকারের কোনো মাথা মুন্ডু নেই। হঠাৎ করে লক্ ডাউন ঘোষণা করে বসলো। এখন ছেলেটি ওখানে থাকে কি করে ?’
– ওকে বলেছিলাম, পালিয়ে আয়। কথা শুনলো না’।
‘কোম্পানি না ছাড়লে কি করবে ?’
‘-লক্ ডাউন উঠলে চলে যেতো।’
– আহারে ! কি আল্হাদের কথা। লক্ ডাউনের পর কোম্পানি চলবে কিনা ঠিক নেই।’
-‘ তা অবশ্য মন্দ বলনি। সারা পৃথিবীর মানুষ আক্রান্ত হবে অর্থনৈতিক মন্দায়’।
‘-পৃথিবী,টিথিবি বুঝি না। এখন ছেলেটিকে করোনার হাত থেকে কি ভাবে রক্ষা করা যায় দেখো।’
-‘ ঈশ্বর,আল্লা,গড সবাই ব্যার্থ। আমি তো কোন ছার’।
‘কেন, বাড়িতে, পাড়ার পুজো তে, বেশ তো দাদাগিরি করো। এই একটি ছেলের সুষ্ঠু ব্যাবস্থা করতে পারছো না ?’
এতোক্ষণ পর একটু একটু করে ঘামতে শুরু করলাম। সত্যি তো পাশের বাড়িতে থাকে। যেকোনো সময় অমিত ও আক্রান্ত হতে পারে। পড়াশুনা ভালোই করতো।আই টি আই থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর সরকারি দপ্তরে কাজ পাওয়ার জন্য কম ছুটোছুটি করেনি।সব জায়গায় টাকা। টাকার পরিমাণ ও কম নয়-১০-১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। এতো টাকা আমার মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকের পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন। অগত্যা কোম্পানির কাজ নিয়ে পুনেতে। আমার নীতি বাগিশ জীবন তো পেট শুনবে না। অমিতের থেকে কতো কম মেরিটের ছেলে মেয়ে চোখের সামনে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়ে দিব্বি ঘরে বসে আছে। সরকারের নীতি, রাজনীতির লবি, এসবের গন্ধমাদনের আড়ালে চাপা পড়ে ছিল অমিতের জীবন ও যন্ত্রনা।মাথা ঘামাই নি। বরং গর্ব করে বলে বেড়িয়েছি- ‘আমার ভাই ঘুষের চাকরি করে না। স্বাধীন আছে বাইরে।’ আজ এই আসন্য বিপদের সময় তাকে উদ্ধার করার কোন উপায় খুঁজে পাই না। চেয়ারে বসে আছি। শরীরের আপাত কোন সমস্যা নেই। তবু মাথাটা যেন ঝিম ঝিম করে উঠল। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো।
-‘কি হল,জড়ভরতের মতো বসে রইলে যে। কিছু একটা ব্যাবস্থা করো। ছেলেটাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা কর’।
আমার মুখে কোন শব্দ এলো না।কি করতে পারি আমি। বিমান বন্ধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ। কিভাবে ওকে ফিরাবো ? অন্য সময় হলে,যে করে হোক আনতে পারতাম। এই লক্ ডাউনের বাজারে আমি অসহায়।তাই চুপ করে বসে রইলাম।
-‘হু হুঁ ,বাবা আপনা গলি মে সের হ্যায়’
খোঁচাটা বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। কিন্তু মুখে কোন কথা এলো না। আমি সত্যিই লক্ ডাউন হয়ে গেলাম। এই অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে নিজের ভিতরে খুঁজতে লাগলাম, জীবন বাঁচানোর পথ।

RELATED ARTICLES

Most Popular