Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✒️কলমে: আশিস মিশ্র

পর্ব –৩

তাহলে কি ধরেই নিলে মুদ্রিত অক্ষরের সিঁড়ি ভেঙে তুমি আর উপরে উঠতে পারবে না? যে বইয়ের পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেছিলে, তা কি আকাশে উড়িয়ে দেবে? যতদিন বাঁচবে, ততদিন এভাবে আকাশে কিছু শব্দ উড়িয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার বাসনা তোমার মধ্যে বাসা বেঁধেছে। তাই তুমি ভার্চুয়ালি যা খুশি করে চলেছো।

এই সব যখন ভাবছো,তখন তোমার চারপাশে যে বিপর্যয় ঘটে গেলো — তা তুমি জানলেও কোনো সাড়া দাওনি। উল্টে জিজ্ঞেস করলে, কী হয়েছে, কিছু কি হয়েছে, জানি না তো।

জুনের ৩০। তার মধ্যে কয়েকজন কবির ছাই গঙ্গায় ভেসে গেলো। রবিবারের আধখানা চাঁদ, ঝড়ে বিধ্বস্ত বটগাছের মাথায় উঁকি দিচ্ছে, এদিকে অন্ধকারে মশার তীব্র দংশন। শ্লো নেটওয়ার্কে কোনো কাজ করা যায় না। আর এসময় তোমার আঁতলেমির শেষ নেই। যে কবিদের তুমি চেনো না,জানো না,তার সম্পর্কে যা খুশি সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু করলে, তা বড়োই হাস্যকর। এই যে স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে কখনো লাইভে আসছো,কখনো গদ্যে ভাসছো,কখনো ফালতু কবিতায়,এসব লেখা কে পড়বে তোমার? কে দেখবে ওই অচল শব্দ সমাহার? এত হালকা, এত সস্তা হয়ে যাওয়ার লোভ তোমাকে তাড়িত করছে। তুমি ভাবছো না একবারও, যে এখন আমার কী করা উচিত। কী করা উচিত নয়।

সে যাই হোক, তোমাকে নিয়ে আর আমি ভাবছি না। ভাবছি, আমার লেখার টেবিলে এতো ধুলো, চেয়ারে মাকড়সার ফাঁদ,জানালার কাচ ভাঙা, মুদ্রণ যন্ত্রের শরীরে অবসাদ, কম্পিউটারের গায়ে তীব্র শীতলতা,এসবকে আমি আবার যত্ন করে সাজিয়ে তুললাম। রবিবারের রোমান্টিকতায় গা না ভাসিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। আবার কলম ধরলাম। না কিছুই আসছে না মাথায়। সরছে না কলমের কালি। তবুও অগাধ চেষ্টা। ভেতরের সব ইচ্ছেশক্তি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে গেল। আমি সব মৃত কবিদের দেখতে পাচ্ছি। তাঁরা বেশ শান্তিতে আছেন!

একটি হলুদ রবিবারে বসে আমার যা যা করার কথা ছিলো, তারও বদল ঘটে গেলো। এখন কোনো কাজ কখন কীভাবে হবে, তার সূচিতে টলমল করছে ক্লান্তির ধারা। জীবনের প্রথম কাব্যগ্রন্থর নাম রেখেছিলাম, বিপর্যয়ই তোমাকে ভয় পায়। এখন আর সেরকম বই হওয়া সত্যিই অসম্ভব। এখন বিপর্যয়কে ভয় পেয়েছি। কারণ বৈঠকখানার গলি পেরিয়ে, কলেজস্ট্রিট পাড়ায় ঘাড়ে করে ছাপা বই এনে আর দিতে পারবো না পাতিরাম বা ধ্যানবিন্দুতে। কবে পারবো জানি না। কবে আবার চিত্তদার চায়ের দোকানে রুটি খেয়ে নন্দনে হরির ভাঁড়ের চা খেয়ে অকাদেমিতে দুটো কবিতা পড়ে লাস্ট ট্রেনে বাড়ির পথে পা বাড়াবো? আমার সেই সব কবিতা পাঠের হলুদ রবিবার গুলির মৃত্যু হয়েছে, যা তুমি জানতেও পারলে না…
( চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular