Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✍️কলমে: আশিস মিশ্র

(পর্ব -১৩)

‘অবসর ‘ শব্দটি শুনলে মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। আর ‘অসম্ভব ‘ শব্দটি কি কেবল মূর্খের অভিধানে থাকে? নেপোলিয়ন সেই কতোদিন আগে এমন একটি কথা বলেছিলেন। এবার আমাদের রবিবারের হলুদ আড্ডায় এমন দুটি শব্দ নিয়ে আমরা কয়েকজন আলোচনা করলাম। শব্দের কতো মহিমা। কতো তার রহস্য। তেজ। ওজন। সে তাই ব্রহ্ম। এমন কথাই এখন মিথ।
সে যাই হোক অবসর নিয়ে নিলেন ২২ গজ থেকে ধোনি ও রায়না। এখন তাঁদের অন্য কাজ। তাঁদের এই ২২ গজ থেকে অবসরের সংবাদ শুনে দেশবাসী বিষণ্ণ হয়েছে নিশ্চিত এই অতিমারির সময়েও।
আচ্ছা, সংবাদ কি কোনো মানুষের অশ্রু ঝরাতে পারে? নিশ্চয় পারে। বললো, আমাদের এক বন্ধু। তার উদাহরণ দিতে গিয়ে সে বললো, মারাদোনার অবসর নেওয়ার সংবাদ প্রতিবেদনটি পড়ে তার চোখ দিয়ে জল এসে গেছিল। তা প্রকাশ হয়েছিলো
‘ আজকাল’ পত্রিকায়। অনেক বছর আগে।
তার মানে শুধু ওই সংবাদ প্রতিবেদন নয়,এমন অনেক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তা পড়ে পাঠকের চোখ ভিজে যায়।
আবার এমন এমন সাফল্যের সংবাদ প্রতিবেদন আছে, তা পাঠের পর আনন্দেও চোখে জল আসে। যেমন আমাদের চন্দ্রযান ‘ বিক্রম’। তার যাওয়া, তার চলাচল, তার গতিবিধির সবটা আমাদের আনন্দ দিয়েছে। কিন্তু শেষটা সে শুধু নয়, আমরা সবাই ভেঙে পড়েছি। কেঁদেছি।
তেমনি ‘ ঈশ্বর কণা’ বা ‘ গড পার্টিক্যাল ‘ এর আবিস্কারের আগে ও পরের কাহিনি আমরা পড়েছি। শেষে যখন একটা চূড়ান্ত সাফল্য এলো, তখন সেই সংবাদ প্রতিবেদন পড়ে আমরা আনন্দে কেঁদেছি।

আর অসম্ভবের কথা কী বলবো। এখন সবই সম্ভব। তবে সব সম্ভবও নয়। কৌতুহল আমাদের সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেবে বলেই আমরা এই অতিমারির কাছে পরাজয় স্বীকার করছি না। তাকে মানুষ হারিয়ে দেবে, দিচ্ছেও। তার প্রতিষেধক ঠিক আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে। মারি নিয়ে চিরকাল আমরা ঘর করবো না। আমরা সাফল্য পাবোই।

আমাদের আড্ডার গতিপথ কখন কোনদিকে টার্ন নেয়,তা আগে থেকে ঠিক থাকে না। কারণ আড্ডার বিষয় যাই হোক, তা সে অন্যরকম হয়ে যাবে, এ আর নতুন কী। আড্ডা মানেই তো তাই। তাই ধোনি, রায়না থেকে ঈশ্বরকণা ছাড়িয়ে কবিতার চরণে এসে থমকে দাঁড়ায় আড্ডা ।
কারণ কবিতার কোনো অবসর নেই। তাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব বা অসম্ভবের গল্প আছে, কিন্তু কবির কবিতা রচনার অবসর বলে কিছু নেই। এই মুক্ত ঘটনাটি আজও ঘটে চলেছে।
না হলে আজও বিস্ময়কর মনে হতো না কবিগুরুর অন্তিম জীবনে ওই ক’টি চরণ। জোড়াসাঁকো, কলিকাতা, সকাল, ২৭ জুলাই ১৯৪১,১১ শ্রাবণ ‘ ৪৮- এ লেখা ” প্রথম দিনের সূর্য ” কবিতাটি একবার দেখে নেওয়া যাক। ” প্রথম দিনের সূর্য /প্রশ্ন করেছিল/ সত্তার নূতন আবির্ভাবে–/কে তুমি / মেলে নি উত্তর। / বৎসর বৎসর চলে গেল / দিবসের শেষ সূর্য / শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল/ পশ্চিমসাগরতীরে/ নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-/ কে তুমি? / পেল না উত্তর।। ”
আজও তার উত্তর পাইনি আমরা। কবিগুরু বেঁচে থাকলে আজ ভুবনডাঙার মাঠে এসে দাঁড়িয়ে দেখতেন, অসম্ভব অস্থির হয়ে গেছে মানুষের মনের অসুর। তারা সব ভেঙে দিতে চায়। এ কোন সময়! এ কোন রাজনীতি!

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular