যৌবনকাল

✍️কলমে: দীপ মুখোপাধ্যায়

(পর্ব-৪)

কারোর বুদ্দি পরামশশো তহুন তিতা লাহে। কাগজের শেষ পাতা প্রিন্টঅর্ডারের পর গন্তব্য,শিয়ালদার কাছে ডিকশন লেনে। ওটা ছিল হবু ডাক্তারদের ছাত্রাবাস।একদা বাড়িটার মালিক ছিলেন প্রখ্যাত তবলিয়া জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ। রাতও তখন অতি দ্রুত যুবতী হয়ে যেত। কোলে মার্কেটের পাইকারদের থেকে মাগনায় সংগ্রহ করে নিতাম শশা,পেঁয়াজ আর টমেটো। সেই স্যালাড সহযোগে ঢুকুঢুকু পর্বের পর চাচার হোটেলে পঁচাত্তর পয়সায় রুটি-সবজি। হয়তো বা কোনও দিন পেট-চুক্তির ডাল-ভাত। শিয়ালদা অঞ্চলে সারারাত কিছু না কিছু খাবারের ব্যবস্থা ছিল। মূলত,কুলি-মজুর আর আনাজফড়েদের জন্য। আমরা কয়েকজন তাজা তরুণ শাসন করতাম মধ্যরাতের শিয়ালদাকে।আমাদের সঙ্গে রঙ্গরসিকতা করত রূপোজীবীনিরাও।ডিকশন লেনে আমাদের ঠেক বলতে ছিল যে ঘরটা, তার বৈধ অধিকার ছিল সাহিত্য অনুরাগী আশিস আচার্য এবং সুরেশ আগরওয়াল-এর। খাটের নীচে ডাঁই করা থাকত খালি মদের বোতল। সেগুলো বেচেও মদ্যপান করেছি কতবার। পঞ্চপান্ডবের কুন্তী হয়ে কখনও বা রাত কাটিয়ে গিয়েছেন আমাদের মতো অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কোনো না কোনো মহিলা কবি।পদধূলি পড়েছিল সুনীল-শক্তি থেকে শুরু করে চন্ডী লাহিড়ীর মতো বিখ্যাত কার্টুনিস্ট-এর অবধি। এমনি অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্রের সমাবেশে ঘরটি হয়ে উঠত একটি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। ছোট্ট ঘরটিতে স্থান সঙ্কুলানের জন্য আনন্দবাজারের মলয় সিংহ কিংবা আমাদের সাবএডিটর সুভাষ মৈত্রের সঙ্গে শেষ ট্রেন ধরে চলে যেতাম ক্যানিং। ঘুরঘুর করতাম মাছের বাজারে। সেখানে সারারাত ধরে মাছের নীলাম চলে।মাতলার বুক চিরে আলোর ফুটকির মতো এগিয়ে আসত জেলে নৌকা। আমরা মাদি কাঁকড়া আর কলপা চিংড়ির চাট নিয়ে জম্পেস করে বসতাম জেটি ঘাটে। ক্যানিং থানার ওসি ছড়াকার কৃষ্ঞলাল মাইতির সৌজন্যে পানীয়ের অভাব হতনা। মাতলায় চাঁদে আলো তখন জলে পড়ে পিছলে যাচ্ছে। মলয়ের আবার এই সময় সঙ্গমের ইচ্ছে জাগে।মদের কল্যাণে অচৈতন্য অবস্থায় ওকে ভ্যানরিক্সায় তুলে দিতে হয়।চালক বলে,বাবু তো পেকে গিয়ে ঢিস হয়ে আছে।আমি বলতাম,তুমি ওকে খানকিপট্টিতে নিয়ে যাও।ভাড়াটা আগেই মিটিয়ে দিচ্ছি। এখন মরার মতো পড়ে থাকলেও শেষ রাতের হাওয়া ওকে ঠিক ঠেলে তুলবে।
আকাশ তখন পচা ন্যাসপাতিরঙা থেকে ক্রমে কচি নিমফলের মতো হয়ে উঠছে। মলয় তার মদনানন্দ মোদক সেবন করে যথাকর্ম সম্পাদনের পর স্টেশনে যোগ দিয়েছে আমাদের সঙ্গে। আমরাও সাতসকালের প্রথম ট্রেনে আবার ফিরে চললাম শিয়ালদা অভিমুখে।

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular