Homeসাহিত্যরবিয়াণীএকটি হলুদ রবিবারে

একটি হলুদ রবিবারে

✍️কলমে: আশিস মিশ্র

( পর্ব –২০)

তেমন করে কি আর প্রেমের স্বাদ এখন পাওয়া যায়? সেই টান অনুভব হয় কি? একজনের সঙ্গে আর একজনের সেই অন্তহীন টান? হয় না। হয় না। এই যে, এসেছি, বসেছি, উঠে গেছি। নদীও তা দেখে হেসেছে। ধীরে ধীরে সম্পর্কের চর জেগেছে। যে চর প্রাণহীন। যেকোনো দিন তার ক্ষয় হয়ে যাবে। আর তো তেমন করে বলে না কেউ ‘ সুরঞ্জনা যেও নাকো ওই যুবকের সাথে ‘। কিংবা প্রথম প্রথম প্রেমপত্র লেখার সময় শুধু কাব্য করা,বা স্মরণীয় প্রেমের কবিতার চরণ লিখে তাতে গোলাপ বা সুগন্ধি লাগিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া। অথবা ক্লাসে লুকিয়ে বইয়ের পাতায় গুঁজে দেওয়া। এসব আর এখন ভাবতেও পারি না। সময়ের চালে প্রেমের সেই সব মুহূর্ত বদলে গেছে। এখন তার ভাষাও হয়ে গেছে ভার্চুয়াল। ফলে সেই স্বাদ নেই তাতে। সে যেন স্বাদহীনতায় ভুগছে। অথচ একদিন তা ছিলো প্রাণের আরাম, আত্মার আনন্দ।
এবার আমাদের হলুদ রবিবারের আড্ডায় উঠে এলো প্রেমের বিকেল বা মধ্যরাত। প্রেম তো নয়, যেন দু’কানে এয়ার ফোন লাগিয়ে গুজগুজ করে যাওয়া। কে যে কী বলছে, কোউ জানি না। শুধু মনে হয় ‘ কী কথা তাহার সাথে তার সাথে ‘
পৃথিবীর এমন কোনো কবি নেই, যিনি প্রেমের কবিতা লেখেননি। মনে হয়, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি প্রেমের কবিতাই লেখা হয়েছে।
হ্যাঁ, আমাদের রাধা- কৃষ্ণের প্রেম, থেকে কতো পূর্বরাগ,অনুরাগ অনুবাদ হয়ে গেছে মনে মনে। মনে মনে এও বলেছেন কবি ‘ মনে পড়লো পড়লো তোমায় মনে / বাঁশি বাজলো হঠাৎই জংশনে..’। কিংবা ‘ মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায় ‘ কিংবা ‘ ভ্রুপল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে’ কিংবা ‘ গত বছর এমন দিনে ছোট্ট ছিলে/ এবছর হঠাৎ হলে মস্ত বড়ো/ তোমায় বাঁধে এমন বিদ্যে কেউ শেখেনি/ যত বিশাল পাত্রে রাখি উপচে পড়ো’ কিংবা ‘ তেমন করে ভালবাসলে পাথরও ঝর্ণা হয়ে যায় / তুমি তো কোন নারী’।
না, আর তেমন করে কবিদের বনলতা সেন নেই, নীরা নেই, জবা নেই, সুচেতনা নেই, মালবিকা নেই, গায়ত্রী নেই, আছে শুধু অন্ধকার…।
অথচ এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা হলো প্রেম। যে কথা সে কি জানতে চায় না আর? আর কি গায় না সে
‘ আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে / দেখতে আমি পাইনি তোমায়… ‘
হয়তো গায়, কিন্তু তেমন করে লুকিয়ে থাকার আনন্দে সেই লুকোচুরি খেলা কোথায়?
সেই রাধারাণী, সেই রুক্মিণীকুমার, সেই চারুলতা, সেই সাবিত্রী বা কিরণময়ী, সেই অনিমেষ ও মাধবীলতা, তারা আজ কোথায়?
কেমন যন্ত্রের যন্ত্রণায় ছটফট করে যাওয়া সেই মেয়েটি বা ছেলেটি কানে কানে বলারও সময় পাচ্ছে না.. ‘দেখো নীলা বাঁই বাঁই মহাশূন্যতায় স্তনসিগ্ধ জোৎস্না উড়ে চলে…’।
না, আর তেমন করে রবাট ব্রাউনিং ও এলিজাবেথ ব্যারেটের মতো পরস্পর পরস্পরকে চিঠি লেখে না। এখন চিঠি নেই আছে চ্যাট…

( চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular