Homeএখন খবরকয়েকঘন্টা আগে ফাঁসির গাছ নির্বাচন! জোড়া ডিউটি সারার পর গাছ থেকে উদ্ধার...

কয়েকঘন্টা আগে ফাঁসির গাছ নির্বাচন! জোড়া ডিউটি সারার পর গাছ থেকে উদ্ধার সবং থানার সিভিক ভলেনিটিয়ারের ঝুলন্ত দেহ

নিজস্ব সংবাদদাতা: ঠান্ডা মাথায় খুনের মতই এ যেন ঠান্ডা মাথায় আত্মহত্যা! একেবারে মহড়া দেওয়া, সময় নির্বাচন করা এবং কোনও ঝুঁকি না নিয়ে ও সন্দেহ এড়ানোর জন্য নতুন নাইলন দড়ি কেনা, সবটাই নিখুঁত পরিকল্পনা মাফিক। আত্মহত্যার জন্য এত একাগ্রতা, এমন দায়বদ্ধতা ও বাঁচার সমস্ত সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া এর আগে কখনও দেখেননি বলেই জানালেন এক পুলিশ আধিকারিক। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার মনোহরপুর গ্রামে। ঘটনাস্থল থানা থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

সবং পুলিশ জানিয়েছে, ” মৃত ব্যক্তির নাম গোপাল চন্দ্র চাউলিয়া। ৩৬ বছরের চাউলিয়া গত বেশ কয়েকবছর ধরেই সবং থানার সিভিক ভলেনিটিয়ার হিসাবে কাজ করে আসছে। শুক্রবার খুব সকালে নিজেরই গ্রাম লাগোয়া একটু নির্জনতর জায়গায় খালের পাশে একটি গাছের ডাল থেকে নাইলনের দড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় গোপালের দেহ। খালের পাশেই সামান্য ঝোপঝাড় আর তারপর রাস্তা। শুক্রবার সাত সকালে সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় লোকে দেখতে পায় রাস্তার ধারে দাঁড় করানো বাইক। এত সকালে রাস্তার ধারে বাইক অথচ আশেপাশে কেউ নেই দেখে পথচারীর সন্দেহ হয়। এদিক ওদিক উঁকি দিতেই দেখা যায় গোপাল ঝুলছে।

এরপরেই হাঁকডাক শুরু হয়। মানুষজন ছুটে আসেন। খবর যায় পুলিশে। দেহ উদ্ধার করে তড়িঘড়ি পাঠানো হয় হাসপাতালে কিন্তু ততক্ষনে মৃত্যূ হয়েছে তাঁর। প্রতিবেশীদের বক্তব্য দেহ গাছ থেকে নামানোর সময়ও দেহে উষ্ণতা ছিল। আর এ থেকে মনে হয় সদ্য আত্মহত্যা করেছে সে। সূত্র মারফৎ জানা গেছে রাতে ডিউটি করেছিল গোপাল। নাইট ডিউটি শেষ করেই বাড়িতে না ঢুকে সোজা চলে যায় আত্মহত্যা স্থলে। সম্ভবতঃ বাইকের ডিকিতেই রাখা ছিল একেবারে সদ্য কেনা নাইলনের দড়ি যা দিয়ে ঝুলে পড়ে সে।

অনুমান করা হচ্ছে বাড়ির লোকেরা যাতে কোনও রকম সন্দেহ না করে তাই নতুন দড়ি জোগাড় অথবা কিনে ডিকিতে রেখেছিল সে।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে বৃহস্পতিবার সকালে ডিউটি করে সে। রুইনানে ডিউটি ছিল তার। নিয়ম অনুযায়ী এরপর তার সারাদিন ছুটি কিন্তু তা স্বত্ত্বেও সে এক সহকর্মীর রাতের শিফটের ডিউটি নেয়। ওই সহকর্মী প্রথমে নিজের শিফট ছাড়তে চায়নি। কিন্তু গোপাল তাকে বলে যে তাকে রাতের ডিউটি করতেই হবে কারন সোমবার সে মেদিনীপুরে যাবে ডাক্তার দেখাতে। এইভাবে সে এক প্রকার জোর করেই রাতের শিফট নেয়। অনুমান করা হচ্ছে আত্মহত্যায় যাতে কোনও রকমের বাধা বিপত্তি না আসে তাই সে ভোর বেলার সময়টা বেছে নেয় এবং কাজ সেরে সোজা ঘটনাস্থলে চলে যায়।

তবে এরপরও অবাক করা কান্ড হল, আত্মহত্যার আগে আত্মহত্যার স্থল নির্বাচন করে গেছিল বলে মনোহরপুরের কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেছেন। তাঁরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলার দিকে গোপালকে তারা দেখতে পেয়েছিলেন রাস্তা ও খালের মধ্যেকার ওই ঝোপ ঝাড়ের অংশে। যাঁরা দেখেছিলেন তাঁরা গোপালকে প্রশ্নও করে যে ওই রকম অস্থানে সে কি করতে গেছে? গোপাল তাঁদের বলেছিল এমনিই সে ওখানে গেছিল। তখন ওই গ্রামবাসীদের মনে খটকা লাগলেও ব্যাপারটা কেউ ভাবতেই পারেনি। ঘটনার পর তাঁদের মনে হয়েছে রেকি করতেই গিয়েছিল গোপাল। ‘রেকি’ শব্দের অর্থ হল অপরাধ বা ঘটনা ঘটানোর আগে অকুস্থলের খুঁটিনাটি দেখে আসা যাতে অপারেশন নির্ভুলভাবে করা যায়।

কী কারণে এই আত্মহত্যা তা নিয়ে দুটি সম্ভাব্য কারন বা মত পাওয়া গেছে। একদলের মতে গোপালের একটা শারীরিক সমস্যা ছিল যা থেকে সে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। যদিও কী সেই সমস্যা তা জানা যায়নি তবে তাঁর এক প্রতিবেশী ও দূর সম্পর্কের ভাই তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল ডাক্তার দেখানোর জন্য। গোপাল হয়ত সেরকমই মনস্থির করেছিল কারন সে তাঁর সহকর্মীকে বলেছিল যে সে ডাক্তার দেখাতে মেদিনীপুর যাবে। সবং, তেমাথানিতে অনেক ডাক্তার চেম্বার করে। তবে সে কেন মেদিনীপুর যাওয়ার কথা ভেবেছিল? রোগটা কী জটিল নাকি রাতের ডিউটি করার জন্যই সে ওই কথা বলেছিল?

দ্বিতীয় আরেকটি দাবি করা হয়েছে যে গোপালের সাথে তাঁর স্ত্রীর কিছু সমস্যা, মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি চলছিল। এক্ষেত্রেও কী সেই পারিবারিক সমস্যা খোলসা করেননি প্রতিবেশীরা। গোপালের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং ৯বছর ও ৫বছরের মেয়ে ও ছেলে রয়েছে। পুলিশ অবশ্য এখুনি এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলতে রাজি নয়। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করার পর পুলিশ অপেক্ষা করছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য। এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য এলাকায়।

RELATED ARTICLES

Most Popular