Homeএখন খবরস্বামীর বাড়িতেই মরল মেয়ে! সবংয়ে পারিবারিক অশান্তি, আত্মহত্যা গৃহবধূর

স্বামীর বাড়িতেই মরল মেয়ে! সবংয়ে পারিবারিক অশান্তি, আত্মহত্যা গৃহবধূর

শশাঙ্ক প্রধান: ‘মরলে স্বামীর ঘরেই মরব, বাপের বাড়ি যাব না!’ এমনটাই বলেছিলেন ২দিন আগে। ভাইরা এসেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসবি চল।’ কিন্তু মেয়ে বলেছিল, ‘না। বাপের বাড়ি যাবনা, মরলে স্বামীর বাড়িতেই মরব।’ সত্যি সত্যি সে মারা যাবে কেউ ভাবতেই পারেনি। শনিবারও সকাল সকাল মুখে দাঁত মাজার কাঠি আর হাতে কাস্তে নিয়ে গেছিল মাঠে, দক্ষিনের খোলা মাঠ থেকে সবুজ কচি ঘাস কেটে আনবে বলে, সংগে নিয়েছিল একটা কাপড়। সে কাপড়ে ঘাস কেটে আনার কথা। কিন্তু কেউ জানতেও পারেনি সে কাপড়েই মনে মনে মরার ফাঁস বানিয়ে রেখেছে মেয়ে, স্বামীর বাড়িতে মরবে যে সে!

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার কেরুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কেরুর গ্রামেরই গৃহবধূ প্রভাতী দে’র ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে শনিবার সকালেই। বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দুরে উচিতপুর গ্রামের খোলা জমির পাশে একটি কাঁঠাল গাছে বাড়ি থেকে আনা সেই কাপড়েই ফাঁস দিয়ে ঝুলছিল বছর ছাব্বিশের প্রভাতি। সাত সকালে বাড়ির গরুর জন্য ঘাস কাটতে বেরিয়ে ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে শ্বশুর ভোলানাথ দে খুঁজতে গিয়েছিলেন মাঠে।

সেখানেই গিয়ে দেখেন এই কান্ড! তিনি এরপর খবর দেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুশান্ত মাজীকে। সুশান্ত বাবু ফোন করেন পুলিশকে। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে। সুশান্ত মাজী জানান, “পারিবারিক অশান্তি চলছিল বলে শুনেছি। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে। কী বিষয় তা অবশ্য জানা নেই। তবে মেয়েটির বাপের বাড়ি মুরারিচক। সেখান থেকেই লোকজন এসেছিলেন দুদিন আগেই। দুই পক্ষের পারিবারিক আলোচনা হয়। শুনেছি তখনই বাপের বাড়ির লোকেরা বলেছিল প্রভাতিকে বলেছিল মুরারিচকে গিয়ে থাকতে কিন্তু প্রভাতি যেতে চাননি। আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন মেয়ে বলেছিল, না, যাবনা। মরতে হলে স্বামীর বাড়িতেই মরব।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে কেরুর গ্রামে দে পরিবার যৌথ পরিবার। চার ভাইয়ের সংসার। তিন ভাই বিয়ে করেছে। সেজ ছেলের বউ প্রভাতী। ৮ বছরের ছেলে আর সাড়ে তিনবছরের মেয়ে অপর্না আর অয়ন। স্বামী নিরঞ্জন। প্রভাতীর ধারনা হচ্ছিল যৌথ পরিবার হলেও পরিবারের মধ্য থেকেই নিজেদের মত করে গুছিয়ে নিচ্ছে উপরের দুই ভাই। কিন্তু সংসারে গাধার খাটুনি খেটেও তাঁরা কিছু করতে পারছেননা। প্রভাতী চাইছিলেন আলাদা হতে কিন্তু পরিবারের বাকিরা তা চাইছিলনা। এ নিয়েই ইদানিং বেশ অশান্তি চলছিল সংসারে। যা ক্রমশ জটিল আকার ধারন করে।

শুক্রবার সাত সকালেও পরিবারের কেউ প্রভাতীকে এমন কিছু বিদ্রুপ করেছিল যা সে মেনে নিতে পারেনি। প্রভাতীর এক ভাসুর অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছে, প্রভাতীর ছেলে মেয়েকে খাবার দেওয়া নিয়ে অবহেলা করেছিল বলেই তাঁকে দু’চার কথা বলাতেই এই কান্ড। প্রভাতীর বাপের বাড়ির লোকেরা, তাঁর মা, ভাইরা ছুটে আসে। তাঁরাও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শ্বশুর বাড়ির প্রতি যদিও লিখিত অভিযোগ এখনও দায়ের হয়নি।

প্রভাতীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আপাতত ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা। সংসার, আইন এখন সব কিছুর উর্দ্ধে প্রভাতী। সে তার কথা রেখে স্বামীর বাড়িতেই মরেছে, আর পাঁচটা মেয়ের মতই সে স্বামীর সংসারই করতে চেয়েছে। বাকিটা আইনের হাতে।

RELATED ARTICLES

Most Popular