Homeএখন খবরসবংয়ে না-পসন্দ প্রধানদের সরানোর কাজ শুরু করল তৃনমূল! অনাস্থা আনল বলপাই প্রধানের...

সবংয়ে না-পসন্দ প্রধানদের সরানোর কাজ শুরু করল তৃনমূল! অনাস্থা আনল বলপাই প্রধানের বিরুদ্ধে

শশাঙ্ক প্রধান : বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী হুঙ্কার দিয়েছিলেন তাঁরা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসলে তৃনমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি ভেঙে দেবেন। কারন সেগুলি নাকি সব গায়ের জোরে জেতা। শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য খুব ভালো ভাবেই জানতেন কোন পঞ্চায়েত কিভাবে জেতা হয়েছিল কারন দক্ষিনবঙ্গে তিনিই তখন তৃনমূলের সৈনিক। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রকাশ্যেই তাঁকে আফসোস করতে শোনা গেছে রাতের অন্ধকারে ভোট গণনায় নাকি কারচুপি করে বিরোধীদের জয়ী হতে চলা বহু পঞ্চায়েত দখল করা হয়েছিল। যাইহোক শেষ অবধি রাধা নাচেনি বটে কিন্তু সাত মন তেল পুড়তে চলেছে সবংয়ে। বিজেপি ক্ষমতায় না এলেও অন্ততঃ সবংয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে চলছে তৃনমূলই। সবংয়ের একাধিক গ্রামপঞ্চায়েত বোর্ড ভাঙার লক্ষ্যে এগুচ্ছে তৃনমূলই যার বেশিরভাগই তৃনমূল পরিচালিত।

নির্বাচনে জেতার পরই এই কাজ শুরু করে দিয়েছিল সবং তৃনমূল। কয়েকজনকে সরানোর জন্য অনাস্থা আনাও শুরু হয়ে গেছিল কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছিল। বর্তমানে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে করোনা। জেলায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আর তারপরই ফের শুরু হয়েছে সেই কাজ। ১৭ই জুন সবং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত বলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতের না-পসন্দ তৃনমূল প্রধান এবং উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্যরা। এই অনাস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৩শে জুন সবং বিডিও একটি তলবি সভার নোটিশও পাঠিয়ে দিয়েছেন প্রধান এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সদস্যাদের।

বলপাই গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান প্রতিমা প্রামানিক জানিয়েছেন, ” আমি জানিনা কেন বা কী উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে আমারই দল অনাস্থা আনল। গত মাসেও এই একই কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় জেলার তরফে সেই অনাস্থা আটকে দেওয়া হয়। আমাদের দলের ব্লক নেতৃত্ব আমাকে ডেকে বলেন দলের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে। বিশেষ তিনজনের নামও বলে দেন তাঁরা। সেইমত আমি কাজও করছিলাম কিন্তু তারপরও আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হল। গত আড়াই বছর আমি মানুষের হয়ে কাজ করেছি। এরপর মানুষই দেখবেন কী হচ্ছে।” নিশ্চিতভাবেই এই অনাস্থায় পরাজিত হতে চলেছেন প্রধান এবং উপপ্রধান, ভেঙে যেতে বসেছে চলতি বোর্ড। কারন ১৫ সদস্যের এই বোর্ডে ৯জন তৃনমূল, একজন করে ২জন বিজেপি ও কংগ্রেস ও ৪জন নির্দল সদস্য ছিলেন। এই ৯জন তৃনমূল সদস্যের কয়েকজন ও বাকিদের নিয়ে প্রধান হয়েছিলেন প্রতিমা দেবী।

বর্তমানে প্রধান ও উপপ্রধান বাদ দিলে বাকি ২জন ছাড়া সবাই অনাস্থার পক্ষে। কংগ্রেস এবং বিজেপি সদস্যরাও অনাস্থার পক্ষে। ফলে এই অনাস্থা পাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। বলপাই অঞ্চলের তৃনমূল সভাপতি মানিক মাইতির অভিযোগ বর্তমান প্রধান মানুষের কাজ করেছেননা। তাছাড়া বিধানসভা নির্বাচনে প্রধান ও তাঁর স্বামী বিজেপির হয়ে গোপনে কাজ করেছেন। আমরা অন্য প্রধান নির্বাচিত করব। যতদুর জানা যাচ্ছে এই নতুন প্রধান হতে পারেন মানিক মাইতির স্ত্রী গীতারানী মাইতি।

এখানে অংক খুবই পরিষ্কার বলপাইয়ের বর্তমান প্রধান বিধানসভা নির্বাচনে সবং কেন্দ্রের বিজেপির পরাজিত প্রার্থী অমূল্য মাইতির বোন। সবং বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসার পর তৎকালীন তৃনমূল নেতা অমূল্য মাইতির সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। সবংয়ের কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি নতুন তৃনমূল নেতা মানস ভূঁইয়ার সঙ্গে আর তৃনমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত গুলি পুরানো তৃনমূল নেতা অমূল্য মাইতির সঙ্গে থেকে যায়। বিধানসভা নির্বাচনের আগের কয়েক বছর ধরে চলে একের পঞ্চায়েত অন্যের পক্ষে আনার লড়াই। এই লড়াইয়ে জয় এসেছে মানস ভূঁইয়ারই। বর্তমানে সবংয়ের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টি কার্যত মানস ভূঁইয়া নিয়ন্ত্রনাধীন। যদিও এখানেই সন্তুষ্টির অবকাশ নেই। মানস অনুগামীরা চাইছেন নিজ নিজ পছন্দের লোকেদের প্রধান পদে বসাতে। আর সেই দিকে নজর রেখেই অনাস্থা আনা হয়েছে বলপাই গ্রামপ্রধানের বিরুদ্ধে।

মানস ভূঁইয়া অনুগামী সবং ব্লকের এক নেতা জানিয়েছেন আপাতত চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পরিবর্তন করতে চান তাঁরা। যার মধ্যে এখুনি অনাস্থা আনা হয়েছে বা হচ্ছে বলপাই এবং দেভোগ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের বিরুদ্ধে। বাকি দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সামান্য কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদটি সংরক্ষিত এবং সেই পদে যিনি রয়েছেন তিনি একমাত্র পঞ্চায়েত সদস্যা যিনি মহিলা এবং তপশিলি জাতি ভুক্ত। ওই পদ থেকে প্রধানকে অপসারিত করলেই হবেনা সাথে সাথে কোনও একজনকে পদত্যাগ করিয়ে একজন তপশিলি জাতিভুক্ত মহিলাকে জিতিয়ে তবে প্রধান করতে হবে। অন্য একজন প্রধানকেও সরাতে চাইছেন তারা।

প্রশ্ন হল যদি সবাই-ই মানস ভূঁইয়া গোষ্ঠীর অনুগত হয়ে পড়েন তবে তাঁদের সরানো হচ্ছে কেন? কারন ওইসব এলাকায় যাঁরা আগে থেকেই মানস অনুগামী ছিলেন তাঁরা বর্তমান প্রধানদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন। এখন তাঁদের পুরস্কৃত করার পালা। আর সেই পুরস্কার লুকিয়ে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির জন্য বরাদ্দ বিপুল অর্থ ভান্ডারের মধ্যেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular