Homeএখন খবরTragic Suicide: ফেসবুকে দাদার সুইসাইড নোট পড়েই জানতে পারি সর্বনাশের কথা! ওর...

Tragic Suicide: ফেসবুকে দাদার সুইসাইড নোট পড়েই জানতে পারি সর্বনাশের কথা! ওর হাতে বিষ তুলে দিল কারা? প্রশ্ন সবংয়ে আত্মহত্যা করা যুবকের ভাইয়ের

নীলোৎপলের মা ও ভাই

শশাঙ্ক প্রধান,উচিতপুর(সবং): “আমি তখন মণিপুরে। ১০দিন আগে একটা কোম্পানিতে কাজে ঢুকেছি। কাজ শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।হঠাৎ বাবার ফোন পাই, দাদাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু ধরছেনা। দাদা নাকি বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে যাচ্ছি বলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেছে। আমি আমার গ্রামের বন্ধুদের ফোন করি
।দাদার বন্ধুদেরও। তারা কেউ দাদাকে দেখেনি। কেউই জানেনা দাদা আসলে মোহাড় গ্রামে গিয়েছে, আলোচনা করে বউদিকে ফিরিয়ে আনবে বলে। আমিও দাদাকে ফোন করেছিলাম কিন্তু অনেকক্ষন ধরে বারবার ফোন বেজে গেছে, দাদা ধরেনি। আর এরপরই হঠাৎই দাদার ফেসবুক খুলে চমকে উঠি! দাদার সুইসাইড নোট! পোষ্ট হয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট আগেই। মরিয়া হয়ে আবার ফোন করি দাদাকে। এবার সে ফোনটা ধরে। হ্যালো বলতেই বুঝে যাই, জড়িয়ে যাচ্ছে কথা। ওকে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞাসা করি,কোথায় আছিস? ও কোনওরকমে বলে, শ্বশুরবাড়ির কাছে। তারপর ফোনে আর শব্দ নেই, ফোন অন করাই আছে। ওপাশ থেকে কোনো কথাই নেই, সো‍ঁ সোঁ শব্দ। মনে হয় ততক্ষণে বিষের প্রভাব জোরালো হয়ে গেছে, লুটিয়ে পড়েছে দাদা।এরপরই ফোন কেটে দিয়ে আমি আমার বন্ধু, পরিচিতদের খবর দেই। ওরা ছুটে যায় দাদাকে উদ্ধার করতে। আমি মাথা খুঁড়ছিলাম। আমার কিছু করার নেই। আমি তখন দেড় হাজার কিলোমিটার দুরে। প্লেন ছাড়া আসার উপায় নেই।”

সবং থেকে কাজে যোগ দিতে এয়ারপোর্টে

মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার উচিৎপুর গ্রামে বসে কথা গুলো বলছিলেন নীলোৎপলের মাজীর ভাই উৎপল। অভিযোগ স্ত্রী আর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে শ্বশুরবাড়ির উঠোনেই বিষ খায় নীলোৎপল। ১১তারিখ মৃত্যু হয় তাঁর। ৯তারিখ দাদার অবস্থা জানতে পেরেই এয়ারপোর্ট ছুটেছিল উৎপল কিন্তু করোনা বিধির কারনে কোভিড টেস্ট না করিয়ে প্লেনে উঠতে পারা যায়না। সে সব করে ১১তারিখ সে সব ঝামেলা মিটিয়ে উৎপল বিমানে ওঠার দেড়ঘন্টা আগে জানতে পারেন মৃত্যু হয়েছে তার দাদার।

মঙ্গলবার, বড়ছেলের মৃত্যুর ২দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও ঘন্টায় ঘন্টায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন মা, বাসন্তী মাজী। আড়াই দিন কিছুই খাওয়ানো যায়নি তাঁকে। প্রতিবেশীরা ঘন ঘন চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছেন। জ্ঞান ফিরলেই প্রশ্ন করছেন, ‘ বড় কচি (নীলোৎপলকে এই নামেই ডাকতেন মা) ফেরেনি এখনও?’ কখনও বলছেন, ‘এখনও ফেরেনি? আসুক আজ ওর আড্ডা দেওয়া বের করব।’

কাজের ফাঁকে বন্ধুর সাথে বেড়িয়ে নেওয়া

উৎপল বলেন, “মাত্র বিঘা খানেক জমি আমাদের। সংসারের ঘানি টানতে ক্লাশ টুয়েলভে ওঠার পরই দাদা কাজে লেগে যায়। আর পড়া হয়নি। কখনও হায়দারাবাদ, কখনও অন্য জায়গায় কাজ করেছে। ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন হোটেলে কাজ শুরু করে। বর্তমানে কাজ করছিল ব্যাঙ্গালুরুর ওল্ড হাউস পিৎসাতে। হোটেলের ক্যাপ্টেন হয়ে গেছিল সে। এরপর বাড়ির কাজ শুরু করে। বাবা-মার জন্য একটা রুম ছাড়াও আমার জন্য ও নিজের জন্য একটা করে মোট তিনটি রুম বানায় সে। পাশাপাশি আমার পড়ার খরচও চালিয়ে যায়। ও নিজে পড়তে পারেনি বলে আমাকে কোনও কাজে যেতে না দিয়ে পড়তে বলত। ওর জন্যই আমি গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে পেরেছিলাম।”

উৎপল আরও বলেন, ‘ ও বিয়ে করতে চাইছিলনা তখুনি। বলত আরও একটু গুছিয়ে নি। কিন্তু আমি মা বাবা ওকে বললাম বিয়ে কর। মায়ের একটু বিশ্রাম দরকার। দেখাশুনা করে বিয়ে হল। এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা না হলেই ভালো হত। বৌদির আগে থেকেই কারও সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সেটা আড়াল করেই ওর বাবা-মা বিয়ে দেয়। এদিকে বৌদি সেই ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে। তারই সাথে হয়ত পালিয়ে গেছিল বেশ কয়েকদিন। শুনেছি দিঘা টিঘা গেছিল। যাইহোক সেটা বললেই হত। দাদা ছেড়েই দিত তাহলে। তা না করে গৃহবধূ নির্যাতনের মামলার হুমকি, জোর করে ডিভোর্স এবং কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করার কী দরকার ছিল? এতেই দাদা ভয় পেয়ে যায়। গৃহবধূ নির্যাতনের মামলা মানে দাদার সঙ্গে মা বাবা আমাকেও জেলে যেতে হত। বিশেষ করে মা বাবাকে পুলিশ টানাটানি করবে এটা দাদা মানতে পারেনি। আর টাকা দেওয়ার ক্ষমতাও আমাদের ছিলনা। লক-ডাউনে সবাই ঘরেই বসেছিলাম, বাড়ির ভেতরে এখনও বিদ্যুতের ওয়ারিং করাতে পারিনি। তাই দাদার সাথে আমিও এবার কাজে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মাত্র ১০দিন আগে মণিপুরে গিয়েছিলাম আমি।”

সব শেষ! চিতায় ওঠানোর আগে

ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সবং পুলিশ। নীলোৎপলের মোবাইল ফোন সংগ্ৰহ করে তার মধ্যে থেকে কী কী তথ্য পাওয়া যায় দেখা হচ্ছে। ওইদিন ঘটনার পর কারা কারা
নীলোৎপলকে উত্তর নিমকি মোহাড় গ্রামে তার শ্বশুরবাড়ির উঠোন থেকে উদ্ধার করে যারা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। নীলোৎপলের বাবা জয়দেব মাজীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত স্ত্রী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, জেঠাশ্বশুর ইত্যাদি সবাইকেই একে একে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নীলোৎপলের ফেসবুক সুইসাইডনোটে উল্লেখিত উকিলের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। শ্বশুরবাড়িতে আলোচনার নামে ডেকে নীলোৎপলকে হুমকি দেওয়ার পর অতরাতে সে বিষ কোথা থেকে পেল? সেটাও বড় প্রশ্ন। কারন রাতে সাধারণভাবে দোকান থেকে বিষ বিক্রি করা হয়না। নীলোৎপলের ভাইয়ের প্রশ্ন ওরাই দাদাকে বিষ খাইয়ে দেয়নি তো?  ছবি: নিজস্ব ও ফেসবুক থেকে

RELATED ARTICLES

Most Popular