Homeএখন খবরTragic Suicide: সবংয়ে শ্বশুরবাড়ির উঠোনেই বিষ খেল জামাই! বছর না ঘুরতেই ফেসবুকে...

Tragic Suicide: সবংয়ে শ্বশুরবাড়ির উঠোনেই বিষ খেল জামাই! বছর না ঘুরতেই ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা যুবকের

শশাঙ্ক প্রধান: বিয়ের ১১মাসের মাথায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ের এক যুবকের। ২দিন আগেই নিজের শ্বশুরবাড়ির সামনে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সামনেই বিষ খেয়েছিল ওই যুবক। অভিযোগ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ফিরেও তাকায়নি। এদিকে যুবককের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা বেজে যাচ্ছিল ক্রমাগত। বাড়ির লোক, বন্ধুরা ক্রমাগত ফোন করছিল তার খোঁজে। তখন রাত প্রায় ৯টা। একটু পরেই এক বন্ধু হঠাৎই ফেসবুকে দেখতে পান যুবক লিখেছেন, শ্বশুরবাড়ির চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম আমি। তখন পরিবার বুঝতে পারে শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি রয়েছেন যুবক। তারপরই ছুটে আসেন বাড়ির লোক, বন্ধুরা।৩১বছরের যুবককে নিয়ে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামীন হাসপাতালে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ১১ই জুলাই মৃত্যু হয় যুবকের। মৃত্যুর আগে নিজের আত্মহত্যার জবানবন্দি বা সুইসাইড নোট যুবক লিখে গেছে নিজেরই ফেসবুকের ওয়ালে। জানিয়ে গেছে মৃত্যুর জন্য দায়ী তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই।জানা গেছে মৃত যুবকের নাম নীলোৎপল মাজী। তাঁর বাড়ি সবং থানার কেরুড় সংলগ্ন উচিৎপুর গ্রামে।

নীলোৎপলের বিয়ে হয় ওই থানারই মোহাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর নিমকি মোহাড় গ্রামের অমল মাইতির মেয়ে অনুশ্রীর সাথে।নীলোৎপল ফেসবুকে লিখেছেন, ” আমাদের বিয়ে সোসাল ও মেরেজ রেজিষ্ট্রি-আর দেখাশুনা করে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরে আমারা এক সঙ্গে ৩ মাস ছিলাম ও তারপর আমি ২ মাস বাইরে গিয়েছিলাম। প্ৰথম ৩ মাস আমাদের শারীরিক মিলনও হয় কিন্তু আমার স্ত্রী তেমাথনি কলেজে পড়ছিল বলে বাচ্চা নেবেনা তাই সেফটি ব্যবহার করতাম। আমার স্ত্রীকে আমি অনেক ভালোবাসতাম কিন্তু আমার স্ত্রী আমাকে না বলে কলেজ যাওয়ার নাম করে অন্যের বাড়িতে গিয়ে রাত্রি কটিয়েছে তাই নিয়ে আমি ওকে একটু বকেছিলাম আর কোনো দিন গায়ে হাত তুলিনি তবুও আমার স্ত্রী আমাকে ধোকা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যের সাথে ১৬/০১/২০২১ তারিখে চলেগিয়েছিল তারপর ১৫ দিন পর পাওয়া যায় ও এখন তেমাথানি স্টুডেন্ট কর্নার মেসে থাকে। ওকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কারন আমি যে ওকে বিয়ের পর স্ত্রী রুপে অনেক ভালোবেসেছি কিন্তু কিছুতেই মানেনি।”

নীলোৎপল লিখেছেন,” এখন আমাকে ডিভোর্স করানোর জন্য উকিল অন্য একটা বিয়ের তারিখ দিয়ে মিউচুয়াল ডিভোর্স পেপারে জোর করে সই করাতে চেয়েছিল কারণ আমাদের বিয়ে ১ বৎসর হয়নি তারিখ ভূল থাকায় আমি সই করিনি। তাই আমার ওপর মিথ্যা বধু নির্যাতন কেস করেছে। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ৫ মাস পর কি করে আমার উপর বধু নির্যাতন কেস করে? আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ী -তার মেয়ের সঙ্গে মিলে আমাকে এই পরিস্থিতিতে পৌঁছতে বাধ্য করল তাই আমি আত্মাহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছি।”

ছেলের এক আত্মীয় বলেন, ” শুক্রবার আমাদের ছেলেকে মেয়ের বাবা অমল মাইতি ফোন করে ডাকে। বলে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে। ছেলে যেন একাই যায়। সেই মত নীলোৎপল একাই যায়। কিন্তু গিয়ে দেখে সেখানে ডিভোর্স করানোর জন্য আগে থেকেই উকিল নিয়ে তৈরি আছে মেয়ের বাড়ির লোকেরা। নীলোৎপল ডিভোর্স পেপারে সই করতে রাজি হয়নি। ওদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ইতিমধ্যে আমার ভাগ্নার বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করেছিল ওরা। সেই মামলায় গোটা পরিবারকে জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। আমার ভাগ্না তারপরও তার স্ত্রীকে বলে বাড়ি ফিরে যেতে কিন্তু তার স্ত্রী বলে, ‘তুই বিষ খেয়ে মরে যা, আমি তোর সঙ্গে ঘর করবনা।’ এরপরই সে বেরিয়ে যায় এবং কাছের একটি বাজার থেকে কীটনাশক কিনে এনে মেয়ের বাড়ির উঠোনেই খায়।”

নীলোৎপল কোথায় গেছিল বাড়িতে বলে যায়নি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বেরিয়ে গেছিল সে। অনেক রাত অবধি তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলনা। বারবার ফোন করেও তাঁর খোঁজ পাচ্ছিলনা পরিবার বা বন্ধুরা। এই সময় হঠাৎই ফেসবুকে ভেসে ওঠে তাঁর সুইসাইড নোট। এরপরই বন্ধু এবং পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির উঠোন থেকেই। নিয়ে যাওয়া হয় সবং এবং পরে মেদিনীপুরে। সেখানেই বন্ধুদের বিষ খাওয়ার আগের ঘটনা খুলে বলে নীলোৎপল।

নীলোৎপলের পরিবারের অভিযোগ, শুধুই ডিভোর্স করানো নয় তার সাথে ডিভোর্স বাবদ ৫লক্ষ টাকাও দিতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। নীলোৎপলের এক আত্মীয় বলেন, বাড়ি বানাতে গিয়ে প্রচুর ধার দেনা হয়েছিল পরিবারের। লকডাউনে টাকার ঘাটতি দেখা দেয়। বাধ্য হয়েই বিয়ের ক’মাস পরেই ব্যাঙ্গালুরু তে হোটেলে কাজ নিয়ে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে নিজের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই সে স্ত্রীকে ছেড়ে কাজে গিয়েছিল। আর সেই সুযোগ নিয়েই অন্যে ছেলের সাথে প্রেম করতে শুরু করে তাদের বউমা।নীলোৎপলের বাড়িতে থেকেই কলেজ যেত অনুশ্রী। কলেজ যাওয়ার নাম করেই পালিয়ে যায় অন্য ছেলের সাথে। সেই সময় নিখোঁজ ডায়রিও করা হয়। এরপর ফিরে এসে মেসে থাকতে শুরু করে।

সোমবার সন্ধ্যায় মেয়ে এবং মেয়ের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করেছেন জয়দেব মাজী। মেয়ে, মেয়ের বাবা, মা সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মেয়ের পরিবারের মোবাইলের সুইচ বন্ধ থাকায় কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ফেসবুকে লেখা সেই সুইসাইড নোট ছড়িয়ে পড়েছে গোটা সবং জুড়েই। মর্মান্তিক সেই ঘটনা পড়ার পর মানুষ ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।প্রত্যেকেই কঠোর শাস্তি দাবি করেছে মেয়ে এবং তার পরিবারের।                                                                   ছবি: ফেসবুক থেকে

RELATED ARTICLES

Most Popular