Homeএখন খবরবেড়েই চলেছে সদানন্দের সংসার, আরও তিনমাসের জন্য তৈরি হা-অন্ন মানুষের বাজার সরকার

বেড়েই চলেছে সদানন্দের সংসার, আরও তিনমাসের জন্য তৈরি হা-অন্ন মানুষের বাজার সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা: তিনজনের নিপাট সংসার আর সমাজসেবা নিয়ে দিব্যি চলে যাচ্ছিল সদানন্দ সরকারের। কিন্তু মাথায় ভুত চেপেছিল বছর পাঁচেক আগে যখন মেদিনীপুর শহরের হোটেল রেস্তোরাঁ আর নানা অনুষ্টান বাড়ির উদ্বৃত্ত খাবার সংগ্রহ করে দরিদ্র, ভিখিরি, ভবঘুরে আর সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়ে বসলেন। পাশাপাশি আবার মাথায় চাপল সেই সব বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার যাদের ছেলে মেয়েরা মোটা চাকরি নিয়ে বিদেশে কিংবা ভিন রাজ্যে পাকাপাকি গেড়ে বসেছেন বাবা -মাকে ভুলে। 

না, এখানেই থেমে নেই সদানন্দ সরকার। গ্রাম থেকে যে মানুষটি মেদিনীপুর শহরে ডাক্তার দেখাতে আসেন তার ফোন আসে ভোর রাতে, যদি একবার দয়া করে নামটা লিখিয়ে রাখেন তো সকাল সকাল লাইনটা পেয়ে যাই..তো সদানন্দ ছুটলেন ভোর ভোর নাম লেখাতে।

সদানন্দের এই বাড়ন্ত সংসারে বজ্রাঘাত পড়েছে লকডাউনে। যে হোটেল রেস্তোরাঁ নিমন্ত্রন বাড়ি কিংবা স্কুলের বেঁচে যাওয়া মিড ডে মিলের খাবার যোগাড় করে এতদিন আহার জোগাতেন হা-অন্ন মানুষদের এখন সে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় হতাশ হয়েই পড়েছিলেন সদানন্দ। কিন্তু মনে যাঁর অদম্য ইচ্ছা তাঁকে দমায় কে ? প্রথমে নিজেই রান্না করে শুরু করলেন সেই মানুষ গুলোর কাছে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিতে। প্রথম কয়েকটা দিন এভাবেই কাটছিল কিন্তু সমস্যা হল সংসার তাঁর এতই বিস্তৃত হয়ে যাচ্ছিল যে নিজে রান্না করে এতদুর সেই রান্না করা খাবার বিলি করা অসম্ভব হয়ে পড়ল।

সদানন্দ সরকার জানিয়েছেন তাঁর সংসার মেদিনীপুর পুরসভার ২২ নম্বর , ২০নম্বর ওয়ার্ডয়ের পাশাপাশি মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির কঙ্কাবতী গ্রামপঞ্চায়েতের কালগাঙ হয়ে রাঙামাটি উড়ালপুল, ভাদুতলা, কেরানিচটি, কেরানিতলা অবধি বিস্তৃত। এতদ অঞ্চলের তাবৎ ভিক্ষাজীবী, প্রতিবন্ধী, হতদরিদ্র মানুষের অন্ন যোগাতে গিয়ে আর রান্না করা সম্ভব হচ্ছেনা তাই চাল আলু সবজি তেল মশলা ইত্যাদি প্যাকেট করে করে পোঁছে দিচ্ছেন তাঁদের আস্তানায়। সরকার জানিয়েছেন, ”রান্না করার আগেই তাঁদের কাছে এই সব সরঞ্জাম পোঁছে দেওয়ার জন্য সকাল ৯টায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আর ফিরতে ফিরতে বিকাল ৩টা হয়ে যায়। এরা প্রত্যেকেই অপেক্ষায় থাকে কখন আমি যাই খাবার সরঞ্জাম নিয়ে। তাই একটু সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হয় আর কি!”

লকডাউনে কোথায় কোথায় খাবার ইত্যাদি
পোঁছে দেওয়া যায় তার জন্য জেলা প্রশাসন তথা পুলিশ সদানন্দ সরকারের কাছে একটি তালিকা চেয়েছিল। তিনি তাঁদের ১৬৯ জনের একটা তালিকা দিয়েছেন। সদানন্দ সরকারের সংসার অবশ্য তার বাইরে যেখানে প্রতিদিন ২৫ কেজি চাল , সম পরিমান আলু, তার অর্ধেক ডাল, কুমড়ো , গাজর, শাক সবজি সরবরাহ করতে হয়। তাঁর সহজ সরল স্বীকারোক্তি, ”পটল, ঝিঙে ইত্যাদি সবজি দিতে পারিনা। বড্ড দাম ! সামাল দিয়ে উঠতে পারিনা। তবে হ্যাঁ, আমি আমার এই সীমিত চেষ্টা যাতে প্রয়োজনে আগামী তিন মাস চালিয়ে যেতে পারি সে জন্য তৈরি হয়ে আছি।”

RELATED ARTICLES

Most Popular