Homeএখন খবরসুভাষ বাড়ি ফেরেনি , ৫ দিন পরে কনস্টেবলের দেহ মিলল জলপাইগুড়ির রেল...

সুভাষ বাড়ি ফেরেনি , ৫ দিন পরে কনস্টেবলের দেহ মিলল জলপাইগুড়ির রেল লাইনে,প্রাণবন্ত ছেলেকে হারিয়ে হাহাকার শালবনীর গ্রামে

নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৩শে মার্চ থেকে ছেলে নিখোঁজ! ফোন করলে ফোন ধরেছে সহকর্মীরা। বলেছে, এই মাত্র এখানে ছিল, কোথাও গেছে, পরে ফোন করুন। পরে ফোন ছুটেছে উদ্বিগ্ন পরিবারের। না, এবারও খোঁজ মেলেনি। এভাবেই জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইনের ব্যারাক থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী থানার ৩২বছরের যুবক তথা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে জুনিয়র কনস্টেবল সুভাষ বিশই। আর টানা পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর সুভাষের ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলেছে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া অসম গামী রেল লাইনের ওপর। দেহ যখন মিলেছে তখন তাঁকে চেনার উপায় নেই, পচন ছড়িয়েছে সর্বাঙ্গে।

সুভাষের ভগ্নিপতি প্রভাত বিশই জানিয়েছেন, সুভাষ গত প্রায় ৮ বছর ধরে চাকরি করছে। জুনিয়র কনস্টেবল হিসাবেই তার প্রথম থেকেই পোষ্টিং হয়েছিল পুরুলিয়াতেই। শালবনী থানার ভাউদি গ্রামের বাসিন্দা সুভাষের মাস পাঁচেক আগে ট্রান্সফার হয় জলপাইগুড়িতে। কয়েক মাস জলপাইগুড়ি পুলিশ লাইনে ডিউটি করার পর সম্প্রতি বাড়িতে এসে ফের কাজে যোগ দেয় সে। এরপরই ২৩তারিখের ঘটনা। বাড়ি থেকে ফোন করার পর আর খোঁজ মেলেনি সুভাষের।

সুভাষে বাবা রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, ‘২৩তারিখ সুভাষকে ফোন করে গেলে প্রথমদিন ফোন বেজে যায়। দ্বিতীয় দিন তার কোনও সহকর্মী ফোন ধরে জানায় সে ঘুমিয়ে আছে। পরে আবার ফোন করলে একজন বলে, সুভাষ ফোন আর মানিব্যাগ ফেলে কোথাও গেছে পরে ফোন করুন। পরে ফোন করলে কেউ একজন ফোন ধরে জানায়, সুভাষ কোথাও চলে যেতে চেয়েছিল আমরা ওকে আটকাতে ওর ফোন আর মানিব্যাগ রেখে দিয়েছি। ওকে আটকেও রেখেছিলাম কিন্তু আমরা ঘুমিয়ে পড়লে ও ভোরে বেরিয়ে যায়। এরপর আমরা ব্যারাকের দায়িত্বে থাকা রিজার্ভ অফিসারকেও ফোন করি। উনিও দেখছি, খুঁজছি বলেন কিন্তু কোনও খোঁজ মেলেনি। এরপর ২৯ তারিখ আমাদের ফোন করে জানানো হয় যে একটি দেহ মিলেছে, সনাক্ত করনের জন্য আমাদের যেতে হবে।”

২৯ তারিখ, যথারীতি লকডাউনের বাজার। গাড়ি নেই। শোক আর বিভ্রান্তির মধ্যেই কোনওমতে একটি গাড়ি যোগাড় করে জলপাইগুড়ি ছোটে পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ৩০তারিখ যখন মৃতদেহটি দেখেন তাঁরা তখন চেনার উপায় নেই। রেললাইনের ওপর পড়ে থাকা ক্ষতবিক্ষত দেহের ছবি তুলে রেখেছিল জিআরপি। সেই ছবি দেখেই সনাক্ত করা হয় সুভাষকে।
প্রভাত গেছিলেন জলপাইগুড়ি। তিনি জানান, ”আমরা অবাক হয়ে গেলাম যে ২৩ তারিখ থেকে একজন নিখোঁজ, সে আবার যে কেউ নয় একজন পুলিশ কর্মী আবার নিখোঁজ হয়েছে ব্যারাক থেকে। অনুমান করতেই পারি সেইদিন অথবা তার পরের দিন রেললাইন থেকে পুলিশ দেহটি উদ্ধার করেছে অথচ জেলা পুলিশ জানলনা। আমাদের বারংবার বলা হয়েছিল যে সুভাষের খোঁজ চালাচ্ছেন তাঁরা। যদি তাই হয় তবে পুলিশ তো সংলগ্ন থানা, জিআরপির সঙ্গে যোগাযোগ করবে! তাহলে দেহের খোঁজ পেতে এত দেরি হল কেন? আমাদের কাছে বিষয়টা রহস্যজনক বলেই মনে হচ্ছে।”

বাবা রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, আমার বিশ্বাস কেউ বা কারা সুভাষকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে । না হলে ব্যারাকের কেউ আর মুখ খুলতে রাজি হচ্ছিল না কেন? বুধবার সকালে শালবনীর গ্রামে সুভাষের দেহ পৌঁছাতেই লকডাউন ভেঙে গোটা গ্রাম আছড়ে পড়ে শোকাহত পরিবারের উঠোনে। ভাউদি গ্রামের বাড়িতে মৃতদেহ সামনে রেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা গ্রাম। তাঁদের দাবি, দোষীদের খুঁজে শাস্তির দিতে হবে। স্থানীয় পুলিশ কর্তারা জানান ঘটনার তদন্ত হবে। এরপরই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় মৃতের। একটি সুত্রে জানা গেছে বছর তিনেক আগে বিয়ে হয় সুভাষ বিশইয়ের। বছর দুয়েক আগে ডিভোর্স হয়ে যায়। তবে কী সে মানসিক অবসাদে ভুগছিল? যদি তাই হয় তবে সে বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে আত্মহত্যা করবে কেন ? আর রহস্য আরও যে, তাঁর মৃতদেহ পেতে পুলিশের এত দেরি হল কেন?

RELATED ARTICLES

Most Popular