Homeএখন খবরফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে গলার নলি কেটে খুন শালবনীর কোটিপতি ব্যবসায়ীকে!...

ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে গলার নলি কেটে খুন শালবনীর কোটিপতি ব্যবসায়ীকে! জাতীয় সড়কের ডেবরা-খড়গপুর সীমান্তে গাড়ি থেকে উদ্ধার রক্তাক্ত দেহ

এই সেই গাড়ি

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভয়াবহ এবং পৈশাচিক খুনের স্বাক্ষী থাকল শালবনী। খড়গপুর এবং ডেবরা থানা সীমান্তের ৬নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে উদ্ধার হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর কোটিপতি এক ব্যবসায়ীর হাত-পা বাঁধা গলার নলি কাটা অবস্থায় রক্তাক্ত মৃতদেহ। খুনের এই নৃশংসতায় রীতিমত শিউরে উঠেছেন সীমান্তবর্তী দুই থানার স্থানীয় বাসিন্দারা যাঁরা দেখেছেন ডেবরা টোল প্লাজার অদুরে খড়গপুর গ্রামীন থানার বুড়ামালার কাছে একটি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে পড়ে থাকা ওই মৃতদেহটি।

পুলিশ জানিয়েছে খুন হওয়া ৪৭বছর বয়সী ব্যক্তির নাম অরবিন্দ সিংহ রায়। শালবনী হাইস্কুল সংলগ্ন চকতারিনী নামক জায়গায় তাঁর বাড়ি। শালবনী ট্যাঁকশালে বড় বড় ঠিকাদারি রয়েছে তাঁর যেখানে প্রায় ২০০শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি সরবরাহের ব্যবসা। সব মিলিয়ে তাঁর ব্যবসার অংক কয়েক কোটি টাকা। রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ জাতীয় সড়কের পাশে ভারনা গাড়িটিকে দীর্ঘক্ষন পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসীরা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়েই ছুটে আসে খড়গপুর গ্রামীন থানার পুলিশ। এরপরই গাড়ির দরজা খুলে চমকে ওঠার মতই দৃশ্য। গাড়ির মধ্যেই পড়ে রয়েছেন অরবিন্দ। তাঁর হাত-পা বাঁধা, মুখ বাঁধা এবং গলার নলি কাটা। গাড়ি ও শরীরময় রক্ত। মাথায় আঘাতের চিন্হ রয়েছে বলেও জানা গেছে।পুলিশ দেহ সমেত গাড়িটি উদ্ধার করে নিয়ে গ্রামীণ থানায় নিয়ে যায়। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহটির ময়নাতদন্ত হচ্ছে সোমবার।

উদ্ধার হওয়া দেহ

নিহত অরবিন্দর বাবা রাম নারায়ন সিংহ রায় জানিয়েছেন, ‘রবিবার দুপুরে একটি ফোন আসে ছেলের মোবাইলে। একজনের কাছে তিনি বেশ কিছু টাকা পেতেন। যে টাকাটা বহুদিন ধরে উদ্ধার হচ্ছিলনা। গতকাল (রবিবার) আমার ছেলে তার মাকে জানায় ওই পাওনা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি মীমাংসা রয়েছে যে কারনে সে মেদিনীপুরে যাচ্ছে। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ নিজেই গাড়ি চালিয়ে ছেলে বেরিয়ে যায়। এরপর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। রাত ১টা নাগাদ শালবনী পুলিশ এবং ছেলের কিছু বন্ধুরা আমার বাড়িতে গিয়ে ছেলের মৃত অবস্থার ছবি দেখায়। তাতেই বুঝতে পারি খুন হয়েছে সে। আমার ধারনা যেখানে ও টাকা পেত তারাই এই খুনের কাজটি করেছে।’

একটি সূত্রে জানা গেছে অরবিন্দর নিজের গাড়িটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় সে গত কয়েকদিন তাঁর এক বন্ধুর যে সাদা রঙের ভারনা গাড়িটি ব্যবহার করছিল। গাড়ির নম্বর ধরেই গাড়ির মালিক এবং সেই সূত্র ধরেই নিহত অরবিন্দকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় পুলিশ, পরে যা অরবিন্দর বন্ধু এবং পরিবারকে দিয়ে নিশ্চিত করে পুলিশ। এদিকে বাড়ি থেকে বেরুনোর সময় নিজের মোবাইলটি বাড়িতেই ফেলে দিয়ে এসেছিলেন অরবিন্দ। ফলে প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলনা। বিকাল সাড়ে ৪টা বেজে গেলেও অরবিন্দ বাড়ি ফিরছেনা দেখে তাঁর বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। বন্ধু-বান্ধব যোগাযোগ শুরু করে পুলিশের সঙ্গে। বড় ব্যবসায়ী হওয়ায় কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে আন্দাজ করে তৎপর হয়ে ওঠে শালবনী পুলিশও। এরপরই খড়গপুর পুলিশ শালবনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে দু’য়ে দু’য়ে চার হয়ে যায়।

প্রাথমিক ভাবে খড়গপুর পুলিশ মনে করছে যে জায়গায় অরবিন্দকে ডাকা হয়েছিল সেখান থেকেই তুলে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তাঁকে কোনও ভাবে অচেতন করে হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলা হয় এবং শ্বাসরোধ করে খুন করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে কেটে দেওয়া হয় গলার নলি। এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘কোনও এক জায়গায় খুনের গোটা প্রক্রিয়া সারার পরই তাঁকে ফের গাড়িতে তুলে নিয়ে আসা হয় জাতীয় সড়কের এই জায়গায়। তারপর টোলপ্লাজা পের হয়নি খুনির দল। নিহত অরবিন্দকে গাড়িতে এনেছিল যে ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে, গাড়ি ফেলে পালানোর জন্য সম্ভবতঃ আরও একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল যা কিনা এই গাড়িটির কাছাকাছি ছিল। টোলপ্লাজা পেরুলে দুটি গাড়িই সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়তে পারে অনুমান করেই টোলপ্লাজার আগেই গাড়ি সমেত মৃতদেহ ফেলে রেখে পালায়।” পুলিশের আরও অনুমান আগে খুন করার পরই তাঁর মৃতদেহ গাড়িতে তোলা হয়েছে। কারন ওই পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘গলার নলি কাটলে যে পরিমান রক্ত বের হয় তাতে গাড়ির আসন, নিচের অংশ ভেসে যেত। এক্ষেত্রে গাড়ির মধ্যে সে রক্ত পাওয়া যায়নি।”

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, অরবিন্দ মেদিনীপুর শহরে এক মদ ব্যবসায়ীর কাছে প্রায় ২৫লক্ষ টাকা পেতেন। মাস ছয়েক আগে সেই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। এরপর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা চলছিল টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয় নিয়ে। বেশ কয়েকবার কয়েকটি ক্লাব, কিছু রাজনৈতিক নেতাও এই ধরনের মীমাংসায় অংশ নিয়েছিল। যদিও এই কারনেই যে এই হত্যা এমনটা এখুনি বলার মত জায়গা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় ঝাঁপড়সিনী ক্লাবের সভাপতি অরবিন্দ সবার কাছেই খোকাদা নামে জনপ্রিয় ছিল। ক্লাব, সংগঠন থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় দরাজ হস্ত ছিলেন তিনি। তাঁর এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা শালবনীতে শোকের আবহ।

RELATED ARTICLES

Most Popular