Homeএখন খবরসঙ্গে রুকস্যাক, পুরী-৩ , মীর হাকিমুল আলি

সঙ্গে রুকস্যাক, পুরী-৩ , মীর হাকিমুল আলি

ওড়িশা-৩ (চন্দ্রভাগা )                                      মীর হাকিমুল আলি
শীতের ভোরে উঠতেই ইচ্ছে করছিল না বিছানা ছেড়ে, কিন্তু কিছু করার ও নেই l সকাল সকাল বাস আছে l ওড়িশা টুরিস্ট বাস, আগে থেকে সিট্ বুকিং করতে হয়, এরা একদিনেই অনেকগুলো স্পট দেখিয়ে আবার পূর্বের স্থানে এনে সন্ধ্যা বেলা ছেড়ে দেয় l আমাদের বুকিং করাই ছিল, বাস এর টাইম 6:30 am.অগত্যা আমরা বিছানা ছেড়ে উঠে স্নান সেরে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম l হোটেলের খুব সামনেই বাস এলো, শুরু হলো যাত্রা l আজ গন্তব্য স্থল অনেক গুলো কিন্তু প্রথমেই যেখানে যাচ্ছি সেটা চন্দ্রভাগা সমুদ্র সৈকত l রাস্তায় একটা নদী পড়লো, নামটা ঠিক মনে নেই, আমাদের গাইড যদিও বলেছিলেন l এবার চসন্দ্রভাগা সম্পর্কে একটু বলি….
ওড়িশার পুরী জেলার কোনার্ক মন্দিরের তিন কিমি পূর্বে এই চন্দ্রভাগা অবস্থিত l এখানে চন্দ্রভাগা নামে একটা নদী সমুদ্রে মিলিত হয়েছে l এটি পুরী শহর থেকে 30কিমি দূরে l খুব ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকত l এটি এশিয়ার প্রথম ব্লু ফ্ল্যাগ বীচ l ভারতের অন্যতম পরিবেশ বান্ধব ও পরিষ্কার সমুদ্র সৈকত হিসেবে এর পরিচিতি l আন্তর্জাতিক মানের পর্যটক কেন্দ্র lকথিত আছে কৃষ্ণার পুত্র সাম্বা এর কুষ্ঠ রোগ হয়েছিল আর সে এই নদীর জলে স্নান করে সেরে উঠেছিল l সেই থেকে কুষ্ঠ রোগী রা এই নদীর জলে স্নান করেন সেরে যাওয়ার আশায় l
এই চন্দ্রভাগা নিয়ে আরো একটি গল্প প্রচলিত আছেl চন্দ্রভাগা ছিল একটি মুনির কন্যা, দেখতে অপরূপা সুন্দরী l একবার তার রূপে মোহিত হয়ে যান সূর্যদেব l তিনি তাকে পেতে চান l কিন্তু চন্দ্রভাগার এতে সম্মতি ছিল না l কিন্তু সূর্য দেব তাকে ধরতে চেয়েছিলেন, ঘটলো দুর্ঘটনা l নিজের সম্ভ্রম রক্ষা করতে চন্দ্রভাগা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে l আর সূর্যদেব তার পিছু ধাওয়া করলে সূর্যের তাপে নদীর জল শুকিয়ে যায় l এখনও এই নদীতে প্রায় সময় জল থাকে না l শুকনো নদী পড়ে থাকে কখনো বা খুব অল্প জল থাকে l চন্দ্রভাগার সেই আত্মত্যাগের স্মৃতি কে স্মরণ করে ওড়িশা সহ বেশ কিছু জায়গার মানুষ এখানে মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথিতে সমবেত হন l আর এখানে পুন্য স্নান করেন আর সূর্য প্রণাম করেন l এটি একটি ধর্মীয় জায়গা হিসেবে প্রসিদ্ধ l বহু মানুষের বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে এই স্থানটিকে কেন্দ্র করে l
আমরা চন্দ্রভাগা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছে গেলাম l গাইড আমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিলেন l আমরা তাই তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করলাম l শীতের কুয়াশা ভাঙা রোদ খুলেছে l চারদিক ঝিকমিক করছে l বীচে ভীড় খুব কম, কিছু দোকান পাট আছে l কিছু লোক স্নান করছে l রোদ পড়ে জল ঝলমল করছে l আমরা এগিয়ে গেলাম চন্দ্রভাগা নদীর দিকে, সামনেই একটি কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো জলাধার l সেখানে জল থাকে সারাবছর l রাস্তার ডান দিকে সৈকত, সারি সারি নৌকা l জেলেরা মাছ ধরে এসে জাল গোছাচ্ছে l দূরে দূরে ভেসে চলেছে সারি সারি নৌকা l সামনে বিস্তীর্ণ বালুকা তটভূমি l তার মাঝেই আছে একটি মন্দির l এতো রোদ যে এক জায়গায় বেশিক্ষন দাঁড়াতে পারছিলাম না, এই ভাবে বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরতে ঘুরতে সময় হয়ে গেল ফেরার l গাইডের বাঁশি দূরে বাজছে শুনতে পেলাম l পা চালিয়ে চললাম বাসের দিকে l পেছন ফিরে একবার দেখি সমুদ্রের নীল জলরাশির ফেনিল তরঙ্গ হাত বাড়িয়ে আমাদের বিদায় জানাচ্ছে l টা টা…
……… (পরের পর্ব.. ক্রমশ )

RELATED ARTICLES

Most Popular