Homeএখন খবরসঙ্গে রুকস্যাক ।। পার্থ দে

সঙ্গে রুকস্যাক ।। পার্থ দে

নীল সাগরের খোঁজে গোপালপুর                                                                                      পার্থ দে      যতদুর দেখা যায় সোনালি রঙের তটভূমি ও সমুদ্রের নীল জলরাশি। রিসর্টের ব্যালকনি বা বারান্দা থেকে রিমঝিম বৃষ্টি আর সমুদ্রের উচ্ছাস দারুন উপভোগ্য। সারাদিন শুধুই সমুদ্রের বিরামহীন গর্জন আর মৎসজীবিদের মাছ ধরার ব্যস্ততা। সমুদ্রে রঙবেরঙের নৌকোয় মাছধরা দেখতে বেশ লাগে। আকাশে এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায় গাংচিল। মাঝে মাঝে মেঘ সরে গিয়ে সূয্যিমামা উঁকি দেয়। তখন শরৎকালের মতো ঘন নীল আকাশ আর সেই আকাশে ভেসে বেড়ায় পেঁজা তুলোর মত স্তূপাকৃতি মেঘের দল, সামনে গগনচুম্বী উদাত্ত সমুদ্র। একপ্রান্তে লাইট হাউস আর অন্যপ্রান্তে একটু দূরে ব্যাকওয়াটার। রঙবেরঙের জেলে নৌকা সারবেঁধে দাঁড়িয়ে। সব মিলিয়ে যেন ক্যানভাসে আঁকা এক ছবি। পুরীর কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে বাঙালীর বর্ষাযাপনের অন্যতম পছন্দের ঠিকানা হতে পারে গোপালপুর। ওড়িশার এই অপূর্ব সুন্দর সৈকত একবার দেখলে বারবার মন চাইবে সেখানে ফিরে যেতে। ওড়িশা গঞ্জাম জেলায় নারকেল ঝাউয়ের সারি, ব্যাকওয়াটার আর বালিয়াড়ি ঘেরা ছোট্ট সৈকত শহর গোলাপপুর। অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত গোপালজীউর মন্দিরের নাম থেকে গোপালপুর এর নামকরন। দুর্গাপূজো বা বড়দিনের সময় ছাড়া অন্যান্য সময় ভীড়ভাট্টা কমই থাকে। গোপালপুরের ঢেউগুলো একটু উদ্দাম হলেও সোনালি বালুকাতটে সমুদ্রস্নান করা যায়। এককালে বিদেশী পর্যটকদের খুব প্রিয় ছিল গোপালপুর। সানবাথের জন্য জনপ্রিয় ছিল। তাছাড়া সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের জন্য প্রশস্তি আছে গোপালপুরের। সুন্দর এই বীচের ওপর দিয়ে সকাল- বিকেল হাঁটতেও বেশ লাগবে। সন্ধায় জনসমাগম বেড়ে যায়, মেলার মতো জমজমাট হয়ে ওঠে। মাছ ভাজা-কাঁকড়া ভাজা, চা-কফি, আইসক্রীম, ফুচকা, ইডলি-ধোসা, মোমো ইত্যাদি নানান স্বাদের খাবারের স্টল বসে যায়। ভোরবেলায় একটু দুরে জেলে পাড়ায় চলে যান, সমূদ্রের নানান প্রকার মাছ কিনতে পাবেন। কিভাবে যাবেন :- হাওড়া বা খড়গপুর থেকে দক্ষিন ভারতগামী যেকোন রাতের ট্রেনে সকালবেলায় ব্রম্ভপুর স্টেশনে পৌঁছে যাবেন (সময় লাগে প্রায় 10 ঘন্টা)। স্টেশন থেকেও গাড়ি ভাড়া করে গোপালপুর যেতে পারেন। আবার স্টেশন থেকে 3 কিমি দূরে নিউ বাসস্ট্যান্ড থেকে রুটের বাসে কম খরচে এক ঘন্টায় (16 কিমি) গোপালপুর যেতে পারেন। কাছাকাছি আর কি কি দেখবেন :- ◆ লাইট হাউসে বিকেল চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত পাখির চোখে দেখে নিন গোপালপুর। 154 টি সিঁড়ি বেয়ে উঠে লাইট হাউসের ওপর থেকে গোপালপুরের সৌন্দর্য অসাধারন লাগে। (সম্প্রতি সাধারনের প্রবেশ নিষেধ বলে জানলাম) ◆ পায়ে হেঁটেই ঘুরে আসা যায় গোপালজীউর মন্দির। ◆ বোটিং করার সুবিধা মেলে গোপালপুরের ব্যাকওয়াটারে। গোপালপুরের মূল আকর্ষণ সমুদ্র হলেও আবহাওয়া অনূকুল থাকলে একটা অটো বা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন – ◆ হিলটপ – এখান থেকে শহরের সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। ◆ রাম মন্দির (2 কিমি),

◆ জগন্নাথ মন্দির (3 কিমি), ◆ কাজু ফ্যাক্টরী (4 কিমি) – এখানে কাজু কিভাবে প্রসেস করে প্যাকেটজাত করা হয় তা স্বচক্ষে দেখতে পাবেন এবং উৎকৃষ্ট মানের কাজু বাজারের থেকে কম দামে কিনতেও পারেন। ◆ গোপালপুর পোর্ট ও জেটি (6 কিমি) – দেখার মতো কিছু নেই। তবুও জানিয়ে রাখি, অতীতে মুক্তো ব্যবসায়ে ধনবান কলিঙ্গ রাজাদের বন্দর নগরীর জেটির ভাঙাচোরা টুকরো এখনও রয়েছে। এখান থেকেই অতীতে বানিজ্যপোত যেত জাভা, বালি ও সুমাত্রায়। গোপালপুর পোর্ট আরো খানিকটা দূরে, প্রবেশ অনুমতি সাপেক্ষে। ◆ হরিপুর বীচ (5 কিমি), ◆ ধবলেশ্বর বীচ ও শিব মন্দির (12 কিমি), ◆ আর্যপল্লি বীচ (15 কিমি), ◆ ফেরার পথে ব্রম্ভপুর থেকে তারাতারিনী মন্দির (30 কিমি) অবশ্যই ঘুরে নেবেন। পাহাড়ের ওপর এটি একটি শক্তিপীঠ। রোপওয়ে ও সিঁড়ি দিয়েও ওঠা যায়। আবার গাড়িও সরাসরি ওপরে উঠতে পারে। নিচ দিয়ে বয়ে চলা রুশিকুল্যা নদীর ও তার পার্শবর্তী সবুজ ধানক্ষেতের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। ব্রম্ভপুর নিউ বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস সার্ভিস রয়েছে। অতিরিক্ত দু-এক দিন সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন :– ◆ পাতিসোনাপুর বীচ (30 কিমি), ◆ তামপাড়া লেক (25 কিমি), ◆ রুশিকুল্যা নদীর মোহনা ও বীচ (30 কিমি)- প্রচুর কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যায় (Olive Ridley Turtle), ◆ আরো কিছুটা এগিয়ে ব্রিটিশদের তৈরি পোটাগড় ফোর্টের ধ্বংসাবশেষ ও পোটাগড় সিমেট্রি, ◆ রম্ভা লেক (40 কিমি), ◆ তপ্তপাণি (70 কিমি), এপথেই মহুরী কালুয়া মন্দির দেখে নেবেন। ◆ চন্দ্রগিরি পাহাড়ে জিরাঙ মনাস্ট্রি (115 কিমি), ◆ ভেটনাই (60 কিমি), ◆ জৌগড় ফোর্ট (40 কিমি)। কোথায় থাকবেন :- বিচের ধারেই রাস্তার ওপর সব হোটেল। অফসিজনে রুম প্রায় খালি থাকে এবং সরাসরি বুকিং-এ ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। ◆ Hotel Mermaid (9874250976 ) বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দ। এই হোটেলের সমুদ্রের দিকের সব ঘরে বারান্দা রয়েছে, যেখানে চেয়ার নিয়ে বসে সমুদ্র উপভোগ করা যায় সব সময়। (নিজস্ব রেস্টুরেন্ট নেই, কিন্তু একটা ভালো ক্যাফেটেরিয়া আছে)। ◆ Hotel Sea Side Breeze (9437325595), ◆ Hotel Sea pearl (0680 2343557), ◆ song of the sea (9861535627), ◆ Hotel kalinga (8697230551), ◆ হোটেল গ্রীন পার্ক (9437325595), ◆ সি ভিউ রিসর্ট (9836020603)- সমুদ্র থেকে সামান্য দূরে, ◆ OTDC এর হোটেল ‘পান্থনিবাস সী বিচ থেকে একটু দূরে হলেও অসম্ভব মনোরম পরিবেশ। ঝাউ গাছে ঘেরা পান্থনিবাসটি সত্যিই অনবদ্য। বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে ঝাউ, বাঁশ ও নারকেল গাছে সবুজায়িত। পান্থনিবাসের পেছনে পায়ে চলা পথ ধরে এক কিমি বালিয়াড়ি পেরিয়ে দেখা মেলে বঙ্গোপসাগরের। Online বুকিং হয় । ◆ তাছাড়া Youth Hostel, নটরাজ হোটেল, হোটেল হলিডে হোম, হোটেল সাগর ইত্যাদি। ◆ তারাতারিনী মন্দিরের কাছে থাকার একমাত্র হোটেল ‘নিরুপমা’(9899554896)। খাওয়া-দাওয়া :- বেশিরভাগ হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। তবুও বাইরে বাঙালী খাবার খেতে চাইলে ‘রোহিণী রেস্টুরেন্ট’ (8598826613) খুব ভালো। তাছাড়া কলিঙ্গ হোটেলের গলিতে কৃষ্ণা রেস্টুরেন্টও ভালো।

RELATED ARTICLES

Most Popular