Homeএখন খবরসঙ্গে রুকস্যাক।। ক্ষিরাই।। মীর হাকিমুল আলি

সঙ্গে রুকস্যাক।। ক্ষিরাই।। মীর হাকিমুল আলি

ক্ষিরাই: বাংলার গুল বাগিচা
মীর হাকিমুল আলিআপনি অমিতাভ বচন আর রেখার সিলসিলা সিনেমাটা দেখেছেন নিশ্চই। না দেখলেও ক্ষতি নেই গুগল সার্চ করে কাশ্মীরের টিউলিপ ফুলের গুল বাগিচার ছবি গুলো দেখে নিতে পারেন আর তাও যদি না দেখতে চান, যদি মনে করেন আপনি নিজের চোখে নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথে কোনও গুলবাগিচার গিয়ে দাঁড়াবেন তবে চলে আসুন ক্ষিরাই। দক্ষিণপূর্ব রেলের খড়গপুর হাওড়া শাখার এই ছোট্ট স্টেশনটায় নেমে পড়লেই দেখতে পাবেন পথ হারানো কাঁসাই নদীর একটা স্রোত ক্ষিরাই নাম নিয়ে কী অপরূপ এক পুষ্প উপত্যকায় এঁকে বেঁকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে।
আমি অবশ্য নিজেই জানতামনা। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের কিছু অংশ জুড়ে ফুলের চাষ হয় জানতাম l বই এ পড়েওছি l কলকাতা যাওয়ার পথে ট্রেন থেকে দেখতেও পেতাম টুকটাক l কিন্তু গত বছর মানে 2018 তে এই ক্ষিরাই অঞ্চলটি রাতারাতি খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠে l সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বহু মুখে চর্চিত হতে থাকে ক্ষিরাই এর নাম l বহু মানুষের আনাগোনা শুরু হয় l স্থানীয় ফুল চাষীরাও তো অবাক l কি এমন আছে এখানে? কলকাতা থেকে বাবুরা এতো রোদ সহ্য করে ভীড় জমাচ্ছে কেবল এই ফুলের চাষ দেখতে !!! কোন এক ফুল চাষীর কাছে জানতে পারি কোন এক প্রেমিক -প্রেমিকা নাকি গত বছর শীতের শুরুতে এখানে আসে ও ছবি তোলে l আর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে l সেই ছবি দেখে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ l এটা কোথায়??? কি করে যাবো??? ইত্যাদি l ব্যাস হুজুগে মানুষ রীতিমতো এটিকে এক পর্যটন কেন্দ্র বানিয়ে তোলে l বিভিন্ন ফোটোগ্রাফি গ্রূপে, ভ্রমণ সংক্রান্ত গ্রূপে ঘুরতে থাকে ক্ষিরাই এর ফুল বাগানের অপরূপ ছবি আর রসে ভরা লেখা l ভ্রমণ পিপাসুদের আর তর সই না l প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ট্রেন, বাস, বা ব্যক্তিগত গাড়ি করে পাড়ি দিল ক্ষিরাই l অনেকটা উঠলো বাই তো ক্ষিরাই যাই – এর মতো l ফেবুতে আমিও প্রায় প্রতিদিন এই ক্ষিরাই এর ছবি লেখা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম আর যাওয়ার এক সুপ্ত বাসনা মনে মনে পোষণ যে করতাম না তা নয় l কিন্তু সুযোগ আর হয়ে উঠছিলো না l এদিকে শীত শেষ যাওয়ার ভয় ও পাচ্ছিলাম l ফুল ও না শেষ হয়ে যায় l সবাই দেখলো আমি একাই বঞ্চিত গোবিন্দ দাস হয়ে যাবো??? না না তা হতে দেওয়া যায় না l মেদিনীপুর গ্ৰুপ এর শ্রদ্ধেয় অ্যাডমিন অমিত মন্ডল দাদার কাছে কিছু তথ্য অর্থাৎ ওখানে গিয়ে কোথায় কোথায় কি কি দেখবো ইত্যাদি জেনে নিয়ে আমি নেতাজীর জন্মদিনে বেরিয়ে পড়লাম l 9:10 এর হাওড়া লোকাল ধরে মেদিনীপুর স্টেশন থেকে রওনা দিলাম l প্রায় দেড় ঘন্টায় পৌঁছলাম ক্ষিরাই l স্টেশনে নেমে এক ফুচকাওয়ালা কে জিজ্ঞেস করতে তিনি পথ বাতলে দিলেন l খুব রোদ, তাতেই রেল লাইন বরাবর হেঁটে ব্রীজের তোলা দিয়ে পৌঁছলাম এই বিখ্যাত ক্ষিরাই এর ফুলের স্বর্গে l সেদিনও বেশ ভীড় লোকের l কেউ সেলফি তুলছে তো কেউ ডি এস এল আর এ ছবি l কেউ ফুলের ছবি তুলছে l কেউ দুচোখ ভরে দেখছে তো কেউ ভিডিও কল করে প্রিয় জনকে এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য ভাগ করে তৃপ্তি পাচ্ছে l আমিও এই সব রকম ক্ৰিয়াকলাপে খুব শীঘ্র নিজেকে নিয়োজিত করলাম l এতো ফুল একসাথে দেখে মাথায় নষ্ট l শিশুকে যেমন এক সাথে অনেক খেলনা দিলে সে কোনটা নিয়ে খেলবে তা ভেবে পায়না, ঠিক মতো কোন খেলনাটাই ব্যবহার করতে না পেরে ভেঙে চুরে চারদিকে ছড়িয়ে রাখে l ঠিক তেমনি আমি যে কোন খান থেকে ছবি তোলা শুরু করবো তা ভেবে পেলাম না l সেলফি তুলবো না লাইভ এ আসবো? নাকি কাউকে নিজের একটা ছবি তুলে দিতে বলবো সেসব ভাবতে ভাবতেই কপালে ঘাম জমে গড়িয়ে পড়তে লাগলো l উফফ কি রোদ গরম !!!!
রেল ব্রীজের পূর্ব দিকে মূলত বিভিন্ন রঙের (লাল, হলুদ, হালকা হলুদ, কমলা, খয়েরি ) গাঁদা ফুল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি, হালকা গোলাপি রঙের এস্টার ফুলের সমারোহ l সাথে মোরগঝুঁটি বা মোরগসিতি ফুল সাদা চন্দ্রমল্লিকা l যত এগিয়ে যাই ততো ফুল l চাষীরা ফুল তুলছে জমিতে নেমে l সেই ফুল কেউ কেউ কিনছে এক টাকা প্রতি ফুল l ফুল জমির ধারে ধারে ফুল কপি, বাঁধা কপি, মুলা গাছ l আসে পাশে জমিতে সর্ষে ও অন্যান্য শাকসবজি l সব মিলিয়ে রঙের বাহার l কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো স্বর্গে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছি l শুধু রোদ টা একটু বেশি l কি জানি স্বর্গে এতো রোদ থাকে কিনা l
আমি যখন গিয়েছিলাম ক্ষিরাই তখন অনেক ফুল কমে গেছে কারণ জমি থেকে অনেক ফুল তুলে নিয়েছে চাষী l তাই জমি একটু ফাঁকা ফাঁকা, অগোছালো l তাছাড়া মাস দুই ধরে পর্যটক দেড় অত্যাচারে বহু ফুলের গাছ ভেঙে গেছে l কেউ ফুল পাতা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে l কেউ আবার চুরি করে ব্যাগ এ ঢুকিয়ে নিয়েছে লোভে পড়ে l অবশ্যই কিছু মহিলা l আমি তো নিজে তাই দেখলাম l পরিবারের সাথে কেউ এসেছেন l কেউ যুগলে যুগলে l আমিই একা l অবশ্য বেশিক্ষন একা থাকতে হলোনা l হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো এক নতুন নাম্বার l ধরতে জানতে পারলাম অমিত দা l তিনি জানতে চাইলেন আমি ক্ষিরাই এসেছি কিনা, কোথায় আছি এখন l তিনি নাকি বাড়ি ফেরার পথে (কোলাঘাট ) পথে আমার সাথে দেখা করবেন আর কিছু নতুন জায়গা ও ফুল বাগান দেখবেন l আমি তো খুব খুশি হলাম তাঁর এই প্রস্তাব শুনে l তিনি কিছুক্ষন পর এলেন l বাইকে করে গেলাম ব্রীজের পশ্চিম দিকে মানে নদীর ওই পারের মোরাম রাস্তা ধরে l বাকি গল্প পরের পর্বে….

RELATED ARTICLES

Most Popular