Homeরাজ্যশান্তিনিকেতনে হচ্ছেনা পৌষমেলা,বাতিল হয়ে গেল দোল উৎসবও

শান্তিনিকেতনে হচ্ছেনা পৌষমেলা,বাতিল হয়ে গেল দোল উৎসবও

বিশেষ সংবাদদাতা: এই বছর আর পৌষ মেলার আয়োজন করবে না বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়। মেলার আয়োজন করাই নয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আওতায় থাকা কোনও এলাকায় অন্য কাউকেও মেলা করার অনুমোদন দেওয়া হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এই সিদ্ধান্তর ফলে একদিকে যেমন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পৌষ মেলা। তেমনই এই ঐতিহ্যবাহী মেলার যবনিকা টেনে দিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । যে বিশ্ববিদ্যালয় সূচনা করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । এই মেলাও তাঁর হাতেই শুরু হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের সেই ঐতিহ্যের পাশাপাশি এবার দুঃসংবাদ দোলের জন্যও, আগামী বছর দোলের সময়েও হবে না বসন্ত উৎসব । পৌষ মেলার মতোই বসন্ত উৎসব বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । কিন্তু দুই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান করা হবে না বলে শুক্রবার কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । ওই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি ডাক্তার সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দুলালচন্দ্র ঘোষ ছাড়াও কর্মসমিতি ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সদস্যরা হাজির ছিলেন।

গত কয়েক বছর ধরে পৌষ মেলা ঘিরে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে । অভিযোগ উঠেছে পরিবেশ দূষণের। শুক্রবার, রবীন্দ্র অতিথি গৃহে আয়োজিত ওই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মেলা হবে কী না, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় মেলা পরিচালনা করবে কী না তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয় । তার পরেই পৌষ মেলার মতোই বসন্ত উৎসব হবে না সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।

প্রতি বছর ৭পৌষ মেলা হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুবনডাঙার মেলা মাঠে। এই মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন সবাই। ঐতিহ্যবাহী মেলায় যোগ দিতে দেশ বিদেশ থেকে লাখো মানুষের সমাগম হয় ।

মেলার আয়োজন করা হবে না, কিন্তু ৭ পৌষ থেকে ৯ পৌষ উৎসব হবে নিয়ম মেনেই। শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত জানান, বিশ্বভারতী মুখপাত্র অনির্বাণ সরকার। তিনি জানিয়েছেন যে উপাসনা, পরলোকগত আশ্রমিকদের স্মরণ, মহর্ষি স্মারক বক্তৃতা, খ্রীষ্টোৎসব হবে নিয়ম অনুযায়ী ।

করোনা সংক্রমণের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ দাবি করলেও গত কয়েক বছর ধরে পৌষ মেলা ঘিরে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে । যা নিয়ে জেরবার এই বিশ্ববিদ্যালয় ।
পৌষ মেলাতে পরিবেশ বিধি মানা হয় না, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে দূষণ ছড়ায় বলে অভিযোগ করে মামলা করেন সুভাষ দত্ত । যার জেরে গতবছর মেলা করা হবে না বলে ঠিক করলেও শেষ পর্যন্ত মেলা হয়েছে । কিন্তু তাতেও দূষণ ছড়ায় বলে অভিযোগ । এই নিয়ে গ্রীন ট্রাইব্যুনাল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করে।
এছাড়াও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গন্ডগোল হয়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের।

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯-র পৌষ মেলার চারদিন পরও ব্যবসায়ীরা উঠতে অস্বীকার করলে বিশ্বভারতী তাঁদের জোর করে তুলে দেয়। পরে ওই মেলার এক ব্যবসায়ী, উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে চুরি এবং মেলাতে আসা এক মহিলা, উপাচার্য সহ পাঁচ আধিকারিকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন শান্তিনিকেতন থানায়। পৌষ মেলার পর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উপর বিভিন্ন রকম অভিযোগ ওঠায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই সমস্ত কারণেই এই সিদ্ধান্ত ।

করোনা মহামারীর কারণে মেলাতে প্রচুর মানুষের সমাগম হবে তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটাও কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। বলেও জানান তারা ।

এ বছর বসন্ত উৎসব বন্ধ হয়ে যায় করোনা আতঙ্কের জন্য। তার আগে থেকেই বহিরাগতদের রুখতে বসন্ত উৎসবে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে করোনার কারণে বন্ধই হয়ে যায় ঐতিহ্যশালী বসন্তোৎসব। আগামী বছরেও হবে না বসন্ত উৎসব বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । ফলে আর দোলের দিন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশ রঙে রঙে রঙিন হবে না। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার বদলে এবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে বেরঙিন হয়ে যাবে শান্তিনিকেতন ।

এই দুই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান আর হবে না জানার পরে এখন থেকেই হতাশ বোলপুর শান্তিনিকেতন এলাকার লোকজন ।

RELATED ARTICLES

Most Popular