Homeএখন খবরভয়াবহ শুক্রবার! একই দিনে খড়গপুর শহরে করোনায় মৃত অন্ততঃ ৬জন, এক সপ্তাহে...

ভয়াবহ শুক্রবার! একই দিনে খড়গপুর শহরে করোনায় মৃত অন্ততঃ ৬জন, এক সপ্তাহে মৃত ১২জন, সংক্রমন কমলেও পশ্চিম মেদিনীপুরে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনা মৃত্যু

The youngest death of Kharagpur City occurred on Friday in the Malancha Senchak area. Ashis Bera, the only son of Ashok Bera, owner of Bera Battery Center, has died. Ashis, under 30, has been undergoing treatment at AMRI Hospital in Kolkata for the last fortnight. On the same day, two more unfortunate deaths took place in Malancha area. Ipsita Mukherjee, wife of Tarapad Mukherjee, a retired employee of Kharagpur Municipality, died at Fortis Hospital, Kolkata. Another man named Baiju also died in same location. Mohammad Akbar, a TMC leader from Panchberia, died after eight days of fighting. He died at a private hospital in Kolkata. The former councilor of Ward No. 5 of Kharagpur Municipality fought from the front line in the Corona War. Another person named Sheikh Raisu died in Panchberia area on Friday. Another died at Inda on the same day. According to the district health department, 56 people died in Kharagpur between March and May. Of these, about 48 people died in May alone. Although this calculation is only for those who have died in the district hospital. There are no accounts of deaths in Kolkata or outside the district or at home as a district.

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভয়াবহ হয়ে রইল শুক্রবার, ৪ঠা জুন। একই দিনে শহরে অন্ততঃ ৬জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ৩০ শে মে থেকে ধরলে খড়গপুর শহর অন্ততঃ ১ ডজন মৃত্যু গুনেছে এই শহর। করোনা সংক্রমন যখন সারা জেলার সাথে খড়গপুর শহরেও কমছে তখন মৃত্যুর এই ভয়ঙ্কর ছোবল রীতিমত ত্রাস হয়ে উঠেছে শহরে। সবচেয়ে বড় কথা ২৮ থেকে ৫৮ কেউই বাদ পারছেনা এই মৃত্যুর ছোবল থেকে। বরং দেখা যাচ্ছে ৫০বছরের নিচে মৃত্যুর হার যথেষ্ট বেশি যা কিনা করোনার প্রথম ঢেউয়ে দেখা যায়নি।
শুক্রবার সবচেয়ে কমবয়সী মৃত্যুটি হয়েছে মালঞ্চ সেনচক এলাকায়। মারা গেছেন বেরা ব্যাটারি সেন্টারের মালিক অশোক বেরার একমাত্র পুত্র আশিস বেরা। গত প্রায় পক্ষকাল ধরে কলকাতার আমরি হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছিল অনুর্দ্ধ তিরিশ বছর বয়সী আশিসের। একটি সূত্র মারফৎ জানা গেছে প্রায় ২২লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল তাঁর চিকিৎসায় কিন্তু শেষরক্ষা হলনা। শুক্রবার বেরা পরিবার তাঁদের কনিষ্ঠতম সদস্যকে হারিয়ে কার্যত ভেঙে পড়েছে।

এই দিনই মালঞ্চ এলাকায় আরও দুটি দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মালঞ্চ ঢেকিয়া উটপুকুর এলাকায় মৃত্যু হয়েছে বৈজু নামে এক ব্যক্তির অন্যদিকে মালঞ্চতেই চিকিৎসক অনুপ মল্লিকের বাসভবনের কাছাকাছি মৃত্যু হয়েছে খড়গপুর পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তারাপদ মুখার্জীর স্ত্রী ঈপ্সিতা মুখার্জীর। কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে এই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে মুখার্জী পরিবার এবং লাগোয়া আরও একটি পরিবার পুরোপুরি গোষ্ঠী সংক্রমনের শিকার হয়েছিল। দুটি পরিবারের প্রায় ২০জন সদস্য আক্রান্ত হয়েছিল। এরমধ্যে প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে উঠলেও শেষ অবধি কোভিড যুদ্ধে পরাজিত হলেন ঈপ্সিতা।

শুক্রবার শহরের পশ্চিম অংশে যখন তিনজনের মৃত্যু হয়েছে তখন উত্তরেও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ৬ দিনের লড়াই শেষে মৃত্যু হয়েছে পাঁচবেড়িয়া এলাকার তৃনমূল নেতা মহম্মদ আকবরের। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। করোনা যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করেছেন খড়গপুর পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ডের এই প্রাক্তন কাউন্সিলর। বিশেষ করে করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন পাঁচবেড়িয়ার বস্তির পর বস্তি সংক্রমিত তখন ওই এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে করোনা সচেতনতায় প্রচার চালান তিনি এবং পাঁচবেড়িয়া এলাকাকে জিরো কোভিড এলাকায় নিয়ে আসেন। অত্যন্ত সদালাপি, জনপ্রিয় মানুষটির মৃত্যুর খবর আসতেই গোটা এলাকায় শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে।

তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন খড়গপুর পৌরসভার দুই প্রাক্তন পৌরপ্রধান জহর পাল ও প্রদীপ সরকার। জহর পাল জানিয়েছেন, ‘ মহম্মদ আকবরের মৃত্যুতে আমি আমার ভাইকে হারালাম আর খড়গপুর হারালো একজন প্রকৃত জনসেবককে। শেষের দিকে কাউন্সিলর ছিলনা ও কিন্তু মানুষের কাজ করে গেছে নিবিড় ভাবেই।” শুক্রবারই পাঁচবেড়িয়া এলাকায় শেখ রইসু বলে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। একই দিনে ইন্দাতে মৃত্যু হয়েছে আরও একজনের।

উল্লেখ্য গত ৩০শে মে শহরে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় খড়গপুর শহরের ১৬নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শম্ভু শর্মার। ওই একই দিনে বল্লু বোরা নামক আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অনুর্দ্ধ ৫০ বল্লু কাঠের ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁরও বাড়ি ছিল ১৬নম্বর ওয়ার্ডে। কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁর। ওইদিনই রবীন্দ্রপল্লী এলাকার ৩৩নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ার। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত মার্চ মাস থেকে মে মাসের মধ্যে খড়গপুরের ৫৬জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে শুধু মে মাসেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৪৮ জনের। যদিও এই হিসাব শুধুমাত্র যাঁরা জেলার হাসপাতালে মারা গেছেন। কলকাতা বা জেলার বাইরে অথবা ঘরে মারা গেছেন এমন হিসাব নেই জেলার হিসাবে। যদি সেই হিসাব ধরা হয় তাহলে দ্বিতীয় ঢেউয়ে খড়গপুর শহরে এখনও অবধি মৃত্যু ৭৫ ছুঁয়ে যাবে।

মে মাসের শেষ থেকে জেলায় করোনার গ্রাফ নামছে। ১লা জুন জেলায় ৩৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২রা জুন সংখ্যাটা নেমে ২৭৭ জনে দাঁড়ায়। ৩রা জুন সংখ্যাটা আরও নেমে ২২৪ হয়েছে। কিন্তু যাওয়ার আগে যেন মরন ছোবল দিয়ে যাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর সেই ছোবলের বেশির ভাগটাই পড়েছে মে মাসে। মার্চ মাস থেকে শুরু করলে মে মাস অবধি জেলায় ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে যার মধ্যে শুধু মে মাসেই মারা গিয়েছেন ১৭৯জন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে মেদিনীপুরে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে খড়গপুরে সংখ্যাটি ৫৬জন। একই হিসাবে ঘাটালে ৪৩, দাসপুরে ৪০, ডেবরায় ২৬, বেলদায় ১৮, গড়বেতা ও শালবনীতে ১১জন করে, সবংয়ে ১০জন এবং কেশপুরে ৮জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও জেলায় মোট মৃত্যুর পরিমান আরও বেশি কারন পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এই হিসাবটি শুধু জেলার হাসপাতালগুলিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে। জেলার বাইরে অথবা বাড়িতে মৃত্যুর হিসাব এখানে নেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular