Homeএখন খবরমহাপ্রয়ানে মহানায়ক, বাঙালিকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

মহাপ্রয়ানে মহানায়ক, বাঙালিকে কাঁদিয়ে চিরনিদ্রায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

নিউজ ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ফের উজ্বল নক্ষত্রের পতন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে যুদ্ধে হেরে গেলেন জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শোকস্তব্ধ টলিপাড়া। সৌমিত্রের মৃত্যুর খবর সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। বেলা ১২.১৫ নাগাদ বর্ষীয়ান অভিনেতার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ হাসপাতাল।

অক্টোবরের প্রথম দিকেই করোনা আক্রান্ত হন প্রবীণ এই অভিনেতা। তারপর অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও হঠাৎ করেই স্বাস্থ্যের অবনতি হতে হতে থাকে তাঁর। শুক্রবার সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয় । এর আগে শ্বাসনালিতে অস্ত্রোপচারের পর সৌমিত্রর প্লাজমা থেরাপিও করা হয়। চিকিৎসক অরিন্দম কর বলেন, “আমরা সাধ্যমতো গত ৪০ দিন ধরে সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়েও তাঁর অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ৮৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা।

প্রসঙ্গত, একজন জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে তার পরিচিতি থাকলেও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও তিনি যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সেইসাথে তিনি একজন কবি এবং অনুবাদকও। ১৯৩৫ সালে ১৯ জানুয়ারি বর্তমান নদীয়া জেলায় তাঁর জন্ম। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় অপুর সংসার ছবিতে অভিনয় করেন। তার আগে তিনি রেডিওর ঘোষক ছিলেন এবং মঞ্চে ছোট চরিত্রে অভিনয় করতেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের ৩৪ টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা এবং টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তিনি। শুধু অভিনয়ই নয়, কবিতা লিখেছেন, নাট্ক লিখেছেন এবং সেগুলো পরিচালনাও করেছেন।

তাঁর অভিনীত চরিত্র গুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ফেলুদা। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। সত্যজিৎ রায় স্বীকার করে নেন যে, তাঁর থেকে ভালো এই ছবিতে আর কেউ অভিনয় করতে পারতেন না। এছাড়াও সৌমিত্রর আরও কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল ক্ষুধিত পাষাণ, স্বরলিপি, সমাপ্তি, আগুন, তিন কন্যা, ঝিন্দের বন্দী, সাত পাকে বাঁধা, শেষ প্রহর, চারুলতা, বাঘিনী, পরিণীতা, অরণ্যের দিনরাত্রি, স্ত্রী, অশনি সংকেত, নৌকাডুবি, দেবদাস, হীরক রাজার দেশে, পারমিতার একদিন, আবার অরণ্যে, চাঁদের বাড়ী, বেলা শেষে ইত্যাদি। ২০০৪ সালে তিনি পদ্ম ভূষণ, ২০১২ সালে দাদা সাহেব ফালকে, ২০১৭ সালে বঙ্গ বিভূষন পুরষ্কার পান। কিন্তু তার চেয়েও বড় পুরষ্কার তিনি জিতে নিয়েছিলেন বাঙালির হৃদয় থেকে। যতদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন বাঙালি প্রতিটি রাত তাঁর খবর নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েই বিছানায় যেতে পেরেছিল।

RELATED ARTICLES

Most Popular