Homeএখন খবরসুবর্নরেখার কথা-২০।। উপেন পাত্র

সুবর্নরেখার কথা-২০।। উপেন পাত্র

গোলোক পণ্ডিত ,  সুবর্ণরৈখিক লোকভাষার প্রথম সাহিত্যিক                                                                                                         উপেন পাত্র                                  ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্ভুক্ত মহাপাল শ্রী বিদ্যাপীঠে শিক্ষকতায় যোগ দেবার পর দুটি স্থানীয় জনশ্রুতি বিষয়ে অবগত হই। প্রথমটি বিদ্যাসাগর মশাই এই স্থানে এসেছিলেন। (প্রথমটি ভিন্ন প্রবন্ধে ব্যক্ত করেছি) দ্বিতীয়টি অতীতের মহাপাল মধ্য বাংলা বিদ্যালয় ও তার প্রধান শিক্ষক গোলোক পণ্ডিতের বিষয়।  গোলোক পণ্ডিত খুব জ্ঞানীগুণী ও রাশভারি ব্যক্তি ছিলেন।স্থানীয় লোকেরা দুষ্টু ছেলেদের– গোলোক পণ্ডিতের স্কুলে দিয়ে আসবো– বলে ভয় দেখাতো।তিনি উল্টো করে লিখতে পারতেন,যা আয়না দিয়ে পড়তে হতো।

আমি বিদ্যালয়ে যোগ দেবার পরে বিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তী পালিত হয়।রজত জয়ন্তী স্মারক পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক বিভুদান মিশ্র মহাশয় তাঁর স্মৃতিচারণায় গোলোক পণ্ডিতের কথা উল্লেখ করেন।জানতে পারি যে গোলোক পণ্ডিত নারায়ণগড়ের অধিবাসী ছিলেন।আমি নারায়ণগড়ে একটি সেমিনারে যোগ দিতে গিয়ে এই বিষয়ে খোঁজ খবর করি,কিন্তু তাঁর কোন সন্ধান পাই না।এরপর ঝাড়গ্রাম জেলার লোকভাষা বিষয়ে  গবেষিকা ডঃ ছন্দা ঘোষাল,বর্তমানে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গোলোক পণ্ডিত বিষয়ে কিছু তথ্য জানান।আমার লেখা সুবর্ণরৈখিক লোকভাষার কবিতা সংগ্রহে এসে তিনি জানান যে এই গোলোক পণ্ডিতই প্রথম এই লোকভাষায় সাহিত্য রচনা করেন,দুটি প্রহসন লেখেন।আমার ধারণা ছিল যে কবি ভবতোষ শতপথী প্রথম এই লোকভাষায় কবিতা লিখেছেন।

গোলোক পণ্ডিত লিখিত দুটি প্রহসনের পাণ্ডুলিপি বেলদা থেকে এক গবেষক আবিষ্কার করে সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে দেন।প্রহসন দুটি ডঃ সুধীর কুমার করন মহাশয় মান্য বাংলাতে অনুবাদ করেন।প্রহসন দুটি সুবর্ণরৈখিক লোকভাষার পূবালী বিভাষাতে লিখিত হয়েছে।(প্রসঙ্গত উল্লেখ করি যে, সুবর্ণরৈখিক লোকভাষার দুটি বিভাষা আছে– খাণ্ডারী/গোপীবল্লভপুরী ও পূবালী/নাবালি,বিষয়টি ভিন্ন প্রবন্ধে ব্যক্ত করেছি।)
২০০৪ সালে প্রকাশিত আজহারউদ্দীন খান মহাশয় সম্পাদিত রণজিতপুর রামনারায়ণ স্মৃতি পাঠাগার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক “শেকড়ের খোঁজে” গ্রন্থে জনৈক মৃত্যুঞ্জয় শতপথী তাঁর স্মৃতিচারণায় মহাপাল মধ্য বাংলা বিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করেছেন,তিনি ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

গত বছর মেদিনীপুর নিবাসী এক গবেষক অরিন্দম ভৌমিক মহাশয় গোলোক পণ্ডিত বিষয়ে আমার কাছে তথ্যাদি জানতে চান।আমার সংগৃহীত সব তথ্য তাঁকে জানাই।অধ্যবসায়ী এই গবেষক শেষ অবধি বনপাটনা গ্রামে গোলোক পণ্ডিতের বংশধরদের খোঁজ পেয়ে আমাকে অবহিত করেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular