Homeসাহিত্যসুবর্ণরেখার কথাসুবর্নরেখার কথা - ৬ ।। উপেন পাত্র

সুবর্নরেখার কথা – ৬ ।। উপেন পাত্র

 অবলুপ্ত অলখ নিরঞ্জন ধর্ম

ছেলেবেলায় দেখেছি- কিছু বৃদ্ধা গেরুয়া বসন পরেন, সকাল বিকাল সুর্য প্রণাম করেন।সকালে পূর্বমুখে সাতবার ও বিকালে পশ্চিমমুখে পাঁচবার।তারপর তিন বার “মহিমা অলখ ব্রহ্ম”(নমো অলখ ব্রহ্ম নিরঞ্জনায়)মন্ত্র বলেন।এরা সুর্যাস্ত থেকে সুর্যোদয় পর্যন্ত আহার করেন না।অতীতে এই ধর্মের লোকেরা বেশ ভালো পরিমানে ছিলেন,যা আমার ছোটবেলায় দেখেছি।কিন্তু বর্তমানে খুব কম পরিমানে দেখা যায়।সুবর্ণরেখা নদীর নিম্নগতিতে কেশিয়াড়ী ও দাঁতন থানা এলাকায় এখনও বেশ কিছু গৃহী ভক্ত আছেন।
প্রাচ্য বিদ্যার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসু এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে লিখিত প্রবন্ধে(নিও বুদ্ধইজম ইন ওরিশা এণ্ড ইটস ফলোয়ারস) জানান, অরক্ষিত দাস এই নিরাকার শুন্যবাদী ব্রাহ্মধর্ম উত্তর ওড়িশায় প্রচার করেন,যা রামমোহনের ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের নব্বই বছর আগে প্রচারিত হয়েছিল।বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সাদৃশ্য থাকায় তিনি এই ধর্মকে ” ওড়িশার নব বৌদ্ধধর্ম ” নামে চিহ্ণিত করেন।নব বৌদ্ধধর্ম বলার কারণ হলো এই ধর্মীয়রা জগন্নাথকে আদি সিদ্ধাই বুদ্ধাবতার মনে করেন এবং তাঁর সিদ্ধাইলাভ স্থান কপিলাস পর্বতকে কপিলাবাস্তু মনে করেন।এছাড়া বৌদ্ধদের মতো দ্বিপ্রহরের মধ্যে পুর্ণ আহার ও সূর্যাস্তের মধ্যে অর্দ্ধ আহার করেন। তৎপূর্বে অক্ষয়কুমার দত্ত “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়” গ্রন্থে এই ধর্মকে
“কুম্ভুপাতিয়া” বলেন।এই ধর্মের সন্ন্যাসীরা কুম্ভু নামক গাছের ছাল থেকে প্রস্তুত বল্কল পরায় এই নামকরণ।তাই চলতি কথায় এই ধর্মকে “বকলি ধর্ম”ও বলে।
গৃহী ভক্তরা বাড়িতে থাকেন,সন্ন্যাসীরা কাঁধে গেরুয়া চাদর ও হাতে এক বিশাল তালপাতার পাখা নিয়ে ঘুরে বেড়ান,যা পাখা ও ছাতা উভয় কাজ করে।
উক্ত ধর্মের পঞ্চ সিদ্ধাইর পর ষষ্ঠ সিদ্ধাই অরক্ষিত দাস এই ধর্মকে লোকসমক্ষে আনেন। সপ্তম সিদ্ধাই মহিমাস্বামী এই ধর্মের প্রসার ঘটান।তাঁর চৌষট্টি জন শিষ্য এই ধর্মকে বাংলা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ,মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশে প্রসারিত করেন।তাঁর দুই বিখ্যাত শিষ্য ছিলেন,কবি ভীম ভোই ও গোবিন্দজী।এই ধর্ম প্রাকৃতিক চিকিৎসায় বিশ্বাসী, তাই ওষুধ সেবন করেন না।এরা দুগ্ধজাত জিনিষ খান না।সন্ধ্যায় সন্ন্যাসীরা খঞ্জনী বাজিয়ে ভজন গান করেন।
সন্ন্যাসীরা পরিভ্রমণে থাকেন।আশ্রম ছাড়া অন্যত্র একরাত্রির অধিক বাস করেন না।গৃহী ভক্তদের বাড়িতে রাত্রিবাস করলেও বাইরের ঘরে থাকেন, ভেতরে প্রবেশ করেন না,গৃহীর বাসনপত্রও ব্যবহার করেন না।কলাপাতা ধুনির আগুনে সেঁকে নিয়ে সুগোল থালা বাটি তৈরী করে খাদ্য খান।সন্ন্যাসীরা পনছি বৃত্তি ও অজগর বৃত্তি পালন করেন অর্থাৎ পাশে কোন খাদ্য রাখেন না এবং খাদ্যের অন্বেষণ করেন না।

RELATED ARTICLES

Most Popular